ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
মে ২৭, ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
মে ২৭, ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম
ইজারা পদ্ধতি বাতিল করে বাঁওড়সহ দেশব্যাপী সকল জলমহালে মৎস্যজীবী জেলেদের সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানা প্রতিষ্ঠার ৪ দফা দাবিতে বাংলাদেশ বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (২৭ মে) সকালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর বলুহর বাসস্ট্যান্ডে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মৎস্যজীবী জেলে জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা শত শত নারী পুরুষ এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা দাবি-দাওয়াসহকারে ফেস্টুন হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। উপজেলার বলুহর বাসস্ট্যান্ডে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক নির্মল হালদারের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব সুজন বিপ্লবের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আন্দোলনের উপদেষ্টা বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান, খেতমজুর সমিতির ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি কাজী ফারুক, বাঁওড় আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক বাসুদেব বিশ্বাস, বাঁওড় আন্দোলন সংগঠক এসএম চন্দন প্রমুখ।
এদিকে উপজেলা পরিষদ লিনায়তনে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিক্ষোভ শেষে বাঁওড় আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উপদেষ্টা বলেন, আমি যেটা খুব অবাক হই, আমার নিজের মন্ত্রণালয় হিসেবে আমাদের খুব অসহায় লাগে আপনাদের মতই। আমরা জেলেদের মন্ত্রণালয়। আমাদের জেলেদের জীবন-জীবিকা যেখানে চলে সেই হাওড়-বাওড় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তারা হাওড় বাওড় ইজারা দেয় আর আমরা তখন কাতর হয়ে বলি এটা আমাদের দেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরও বলেন, জাল যার জলা তার, এই নীতি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব। তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। এই প্রজন্মই সমাজের সকল বৈষম্য দূর করবে। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মাঝে বাওড়ের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমি ভ‚মি মন্ত্রণালয় সহ সরকারের সকল দপ্তরের কথা বলব। বাওড়পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে বাওড়ের প্রকৃত মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক ও সামাজিক সকল পক্ষকে এ বিষয়ে সংযত হতে হবে।
এসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল। এছাড়াও বাঁওড় আন্দোলনের উপদেষ্টা বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ মৎস্য কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনসহ কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বাঁওড় আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক নির্মল হালদার, বাঁওড় আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব সহ বিভিন্ন জেলে নরনারী ও শ্রেণি-পেশাজীবীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় জেলে প্রতিনিধিরা ৪ দফা দাবিতে সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানারা বয়ানে পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছে, অবিলম্বে বাঁওড় জলমহালসমূহের ইজারা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করে জেলেদের ন্যায়সংগত মালিকানার স্বীকৃতি দিয়ে সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। মৎস্যজীবীদের অনুকূলে ও জাতীয় স্বার্থে জলমহাল ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধন করতে হবে। জাতীয় বাঁওড় উন্নয়ন বোর্ড, স্বতন্ত্র বাঁওড় জলমহাল নীতিমালা ও বাঁওড় জেলেদের প্রান্তিক শ্রমিক হিসাবে নিজস্ব সংগঠন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দিতে হবে।
বাঁওড় জলমহালে মাছ চাষে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের অর্থায়নে ও জেলেদের সাথে ন্যায্য উৎপাদনের অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে হবে। মাছ উৎপাদনে ৬০ শতাংশ মালিকানা জেলেদের অধিকার ও ৪০ শতাংশের মালিকানায় রাষ্ট্রপক্ষ অন্তভর্‚ক্ত যৌথ উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
বাঁওড় উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের শুমারি, তালিকাবদ্ধ ও মৎস্যজীবী জেলে কার্ড প্রদান করতে হবে। বাঁওড় জেলেদের রেশনের এর ব্যবস্থা করতে হবে।
বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি না করে বাঁওড় জলাশয়ে মাছ কৃতিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, বাঁওড় জেলেদের জন্য উন্মুক্ত ও উন্নত জীবন-জীবিকা-কর্মসংস্থানের নিরাপদ পরিবেশ ও ষাটোর্দ্ধদের পেনশন দিতে হবে।
আরএস