আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর
মে ২৯, ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর
মে ২৯, ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা কার্যত অনিয়ম, অবহেলা ও সংকটে চলছে। চিকিৎসক সংকট, ওষুধের অভাব এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাধারণ রোগীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, অফিস সময়ে চিকিৎসকরা ঠিকমতো হাসপাতালে থাকেন না। যে কজন চিকিৎসক আছেন, তাদের অনেকেই দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন স্থানীয় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখায়। ফলে সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকট রয়েছে। ওষুধ সরবরাহের তালিকা থাকলেও বাস্তবে রোগীদের সেগুলো দেওয়া হয় না।
একাধিক রোগী অভিযোগ করেন, কিছু চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন এবং কমিশনের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন। এছাড়া হাসপাতালের খাবার সরবরাহের মান খারাপ এবং রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন অনেক স্টাফ।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা বেডে থাকলেও অধিকাংশ সময় চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা হাসপাতালে অনুপস্থিত। সকাল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আসতে শুরু করেন। শিশু সন্তান নিয়ে মায়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। এরচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—হাসপাতালে রোগীর চেয়ে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সংখ্যাই বেশি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহ্ আলম সিদ্দিকী নিয়মিত অফিস করেন না। তিনি অধিকাংশ সময় ‘মিটিং’-এর অজুহাতে বাইরে থাকেন। ফলে ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য স্টাফদের দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
পূর্ব ডামুড্যা থেকে আসা রোগী রাসেল শিকদার বলেন, “আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে দুদিন ধরে হাসপাতালে আসছি। প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলছে না। খাবার-দাবারের মান খারাপ, ডাক্তাররা রোগীর কাছে ঠিকমতো আসেন না। সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।”
ধানোকাঠী এলাকার সুরাইয়া বেগম বলেন, “ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ভেতরের এক আপা বললেন, এখানে ভালো চিকিৎসা হবে না, ক্লিনিকে নিয়ে যান। ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই—চরম ভোগান্তি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহ্ আলম সিদ্দিকী বলেন, “হাসপাতালে কিছু দালালের দৌরাত্ম্য রয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসক সংকট প্রকট, তাই চিকিৎসাসেবায় কিছু সমস্যা হচ্ছে।” তবে তার অনুপস্থিতি ও অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. রেহান উদ্দিন বলেন, “অফিস সময়ের মধ্যে চিকিৎসকরা বাইরে রোগী দেখছেন—এমন তথ্য আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ইএইচ