Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫,

মহেশপুরে প্রথমবারের মতো ফলেছে ‘কালো সোনা’ ভ্যানিলা মসলা

সাইফুল ইসলাম, মহেশপুর (ঝিনাইদহ) থেকে

সাইফুল ইসলাম, মহেশপুর (ঝিনাইদহ) থেকে

মে ২৯, ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম


মহেশপুরে প্রথমবারের মতো ফলেছে ‘কালো সোনা’ ভ্যানিলা মসলা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসলা ভ্যানিলা এবার প্রথমবারের মতো ঝিনাইদহের মহেশপুর গৌরিনাথপুর গ্রামে সফলভাবে চাষ হয়েছে। 

প্রায় চার বছরের গবেষণা ও পরিশ্রমের পর এ মসলাটি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। ভ্যানিলাকে ‘কালো সোনা’ বা ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ হিসেবেও ডাকা হয়। বিশ্বের ছায়ায় ঘেরা বনাঞ্চলে এ মসলা জন্মায় এবং জাফরানের পর এটি বিশ্বের অন্যতম দামী মসলা বলে জানালেন মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন সুলতানা।

ভ্যানিলা চাষ পদ্ধতি জটিল এবং এতে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। বাংলাদেশে যদি এই চাষ সম্প্রসারিত করা যায়, তবে দেশের ভ্যানিলা চাহিদা মিটিয়ে পণ্য রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

ভ্যানিলা নামটি অনেকের কাছে পরিচিত। দেশে এক ধরনের ভ্যানিলা আইসক্রিমও রয়েছে, তবে সেই ভ্যানিলা আমদানি করা হয়। ভারতের পাশাপাশি ইরান, ইরাক, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ভ্যানিলা উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে এটাই প্রথমবারের মতো ভ্যানিলা উৎপাদনের খবর।

মহেশপুরের ভ্যানিলা চাষি নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে বগুড়া মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কয়েকটি ভ্যানিলা চারা আনা হয়। ভ্যানিলা লতা বা অর্কিড জাতীয় গাছটি নারিকেলের ছোবরা ও কোকো ডাস্টসহ পচনশীল খাবারের মধ্যে রোপণ করা হয়। বাতাস থেকে খাবার সংগ্রহ করে গাছটি বেড়ে ওঠে। প্রায় তিন বছর পর গাছে ফুল আসে, যা পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ধরে। ফুল ধরে প্রায় ১৩ দিন পরাগায়ন করতে হয়। এরপর সাত থেকে নয় মাসে ফল পরিপক্ক হয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়মে অন্তত দেড় মাস প্রক্রিয়াজাত করতে হয়।

এই প্রক্রিয়ার পর কালো রঙের ভ্যানিলা মসলা থেকে একটি বিশেষ ফ্লেভার বের হয়, যার জন্য ভ্যানিলাকে ‘কালো সোনা’ বলা হয়। মহেশপুরের উৎপাদিত ভ্যানিলা ইতোমধ্যে একবার প্রক্রিয়াজাত হয়েছে, আর আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আরও প্রক্রিয়াজাত করা হবে।

অর্কিড জাতীয় এই লতা গাছটি মাটির সংস্পর্শ এড়াতে নারিকেলের ছোবরা ও কোকো ডাস্টের মধ্যে রাখা হয় এবং বেশি নজরদারি প্রয়োজন হয়। এই মসলাটি সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে ফললেও, যেখানে ৫০ শতাংশ ছায়া ও ৫০ শতাংশ রোদ থাকে, সেখানে ফলানো সম্ভব।

ভ্যানিলা চাষে ধৈর্য্য ও ইচ্ছাশক্তি খুবই জরুরি। গাছটির উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট বা তার বেশি হতে পারে। বাংলাদেশে ভ্যানিলা মসলার গুঁড়া আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, যার কারণে ভ্যানিলা আইসক্রিমের স্বাদ আলাদা ও দামের দিক থেকে বেশি।

এভাবে মহেশপুরে সফলভাবে চাষ হওয়া ভ্যানিলা দেশের মসলা বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইএইচ

Link copied!