মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
মে ৩০, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
মে ৩০, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে মাগুরা শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে শহরের প্রধান সড়কগুলোতেও জমেছে হাঁটুসমান পানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় মানুষ ও দোকানদাররা।
জলাবদ্ধতার কারণে শহরের প্রধান প্রধান এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার শহরতলী, ভায়না মোড়, হাজীরোড, ইসলামবাগ, শান্তিবাগ, হাসপাতাল পাড়া, খান পাড়া, কলেজপাড়া, জামে মসজিদ সড়ক, ডিসি অফিস ও কেশবমোড় এলাকাগুলো জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বেশি শিকার।
বিশেষ করে পারনান্দয়ালী বাসস্ট্যান্ড এবং সরকারি বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় সকাল-বিকেল যানজট এবং পথচারীদের দুর্দশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদা খাতুন বলেন, “মেয়েকে স্কুলে নিতে গিয়ে দেখি পুরো রাস্তা পানির নিচে। জুতো খুলে হাঁটতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এমন হচ্ছে বর্ষাকালে।”
অফিসগামী যুবক আনোয়ার হোসেন জানান, “একটু বৃষ্টি হলেই অফিসে ভিজে যেতে হয়। রিকশা পাওয়া যায় না, আবার সড়কে পানি থাকায় যান চলাচলেও সমস্যা হয়।”
নাগরিকদের অভিযোগ, মাগুরা পৌরসভার আওতাধীন এলাকাগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অকার্যকর। অনেক এলাকায় ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে কিংবা ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জমে থাকা পানি দীর্ঘ সময় ধরে সরতে পারে না।
নতুন বাজারের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, “ড্রেন আছে, কিন্তু পানি যায় না। বৃষ্টি হলে দোকানের সামনে পানি জমে যায়। ক্রেতা আসে না, বিক্রি কমে যায়। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
জলাবদ্ধতার কারণে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হারও কমে গেছে। বিশেষ করে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, বালক বিদ্যালয়, মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন জলাবদ্ধতা পেরিয়ে ক্লাসে পৌঁছাতে বাধ্য হচ্ছে।
সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার বলেন, “অনেক ছাত্রীকে ভিজে ক্লাসে আসতে দেখা যায়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনুপস্থিত থাকে। এটা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
মাগুরা পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী মো. আহসান বারী জানান, “মাগুরা শহরের জলাবদ্ধতা একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। ড্রেনেজ ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও খাল পুনঃখননের জন্য একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে জরুরি ভিত্তিতে ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। অনেকে ড্রেনে প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলেন, এতে ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন মাগুরার সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম বলেন, “জলাবদ্ধতা মাগুরা শহরের ভবিষ্যৎ পরিবেশগত ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ ও খাল দখল করে ভবন নির্মাণ জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মাগুরা বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হতে পারে।”
নাগরিকরা মনে করছেন, শহরের জলাবদ্ধতা রোধে কেবল পৌরসভার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা এবং সুশীল সমাজের অংশীদারত্বে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। একইসঙ্গে জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।
বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা মাগুরা শহরের নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল খনন ও জনগণের সহযোগিতাই হতে পারে এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ কত দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়।
ইএইচ