Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫,

নওগাঁয় জমজমাট কোরবানির পশুর হাট, দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁ প্রতিনিধি

মে ৩১, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম


নওগাঁয় জমজমাট কোরবানির পশুর হাট, দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নওগাঁয় জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে জমে উঠেছে পশু বিক্রিবাটার উৎসব। দেশি জাতের গরুর আধিক্য, উৎসুক ক্রেতার ভিড়, দরদাম নিয়ে টানাটানি—সব মিলিয়ে সরগরম ঈদ বাজার। তবে গরুর দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

বিক্রেতাদের দাবি, এবার হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বড় গরুর প্রতি আগ্রহ কম, ফলে বিক্রেতারা দাম না পেয়ে হতাশ। অনেক খামারি জানিয়েছেন, গোখাদ্য ও খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর প্রতিটি গরু লালন-পালনে অতিরিক্ত ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সে তুলনায় বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম মিলছে না।

অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি, এখন গরু কিনলে বাড়িতে রাখা কষ্টসাধ্য। তাই শেষ মুহূর্তে কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই। এছাড়াও, গত বছরের তুলনায় গরুর দাম বেশি বলে অভিযোগ তাদের।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ছোট-বড় মিলে ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে দেশি, ফ্রিজিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের প্রায় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। 

জেলার চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি পশু। ফলে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত পশু অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে। জেলায় পশু বেচাকেনার জন্য ৩৬টি স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে।

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি, রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকেই খামারি, চাষি ও ব্যাপারীরা বিভিন্ন জাত ও আকারের গরু নিয়ে হাটে আসতে থাকেন। দুপুর ২টার পর হাটগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শুরু হয় দরদাম, বেচাকেনা। 

এ বছর ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর প্রতি চাহিদা বেশি। ছোট ও মাঝারি গরুর দাম ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।

চৌবাড়িয়া হাটে মৈনম থেকে আসা খামারি আলমগীর বলেন, “গরু পালনে এবার প্রচুর খরচ হয়েছে। দাম না পেয়ে লস হলেও বিক্রি করে দিচ্ছি। ফেরত নিলে খরচ আরও বাড়বে।”

একই হাটে বিক্রেতা মোসলেম আলী বলেন, “বিক্রির জন্য ৪টি গরু এনেছি। কিন্তু দামে মিলছে না। বড় গরুর চাহিদা নেই, খরচ বেড়েছে কিন্তু দাম আগের মতোই।”

আরেক বিক্রেতা আনারুল ইসলাম জানান, “একটা গরুর দাম চেয়েছিলাম ১ লাখ ৪০ হাজার, কিন্তু ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি কেউ বলছে না। বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিলাম।”

তবে বিক্রেতাদের এই অভিযোগের সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। গরু কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, “গরু দেখতে সুন্দর, কিন্তু দাম বেশি মনে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।”

আকতার হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “আমাদের মতো অনেকেরই গরু রাখার জায়গা নেই। তাই ঈদের দু-তিন দিন আগেই গরু কিনি। আজ শুধু দেখে যাচ্ছি।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, “সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশু লালনে খামারিদের উৎসাহিত করা হয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু থাকায় সংকটের আশঙ্কা নেই। হাটগুলোতে মেডিকেল টিম রয়েছে এবং সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতীয় গরু যেন না আসে সেজন্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। আশা করছি, খামারিরা এবার লাভের মুখ দেখবেন।”

ইএইচ

Link copied!