আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ
জুন ১৮, ২০২৫, ০৮:০০ পিএম
আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ
জুন ১৮, ২০২৫, ০৮:০০ পিএম
ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলমান বৈরী আবহাওয়া ও পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বল্পতায় মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভালুকা উপজেলায় বিগত দুদিনে হাজারের বেশি খামারে লাখ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিরা।
ভালুকা সদরসহ উপজেলার রাজৈ, ভরাযোবা, ধীতপুর, মল্লিকবাড়ি, ভরাডোবা, বিরুনীয়া, সহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই মাছের খামারে দেখা গেছে এই বিপর্যয়। বাংলা মাছ, রুই, কাতলা, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হঠাৎ করে পানির উপর ভেসে উঠে মরে যেতে থাকে। আশঙ্কাজনক হারে মাছ মরতে শুরু করলে খামারিরা খামারে ছুটে যান, অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তবে শুধুমাত্র ভালুকাতেই নয়, জেলার অন্যান্য অঞ্চলেও মাছ মরার খবর আসছে। সদর,গফরগাঁও,ঈশ্বরগঞ্জ,ধোবাউড়া,ফুলবাড়িয়া,মুক্তাগাছা,গৌরীপুর, ত্রিশালসহ অনেক উপজেলাতেই খামারিরা একই রকম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের বাঘেরপাড়ার মৎস্য চাষি মো. রফিকুজ্জামান জানান, তাঁর ৩৫ একরের খামারে প্রায় ৩০ টন মাছ মারা গেছে। তিনি বলেন, “আমি ৯ বছর ধরে মাছ চাষ করছি, কখনো এমন বিপর্যয় দেখিনি। শনিবার সকাল ৮টা থেকেই মাছ ভেসে উঠতে থাকে। রবিবার পর্যন্ত ২০ জন শ্রমিক খামার থেকে মরা ও আধমরা মাছ অপসারণ করেছে।”
আশ্কা গ্রামের ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান মুন্সী আসাদ বলেন, তাঁর ১৭ একরের দুটি খামারে প্রায় তিন টন মাছ মরে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, “একদিকে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে অক্সিজেনের ঘাটতি—দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এত বড় ক্ষতি কিভাবে সামাল দেবো?”
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক তীব্র দাবদাহের পর হঠাৎ করে বৈরী আবহাওয়া দেখা দিলে পানির তাপমাত্রা ও দ্রবীভূত অক্সিজেনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ফলে মাছের জীবনচক্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভালুকা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, “শনিবার দুপুর থেকে রবিবার পর্যন্ত শতাধিক চাষির ফোন পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৪০-৪৫টি খামার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাছ মরা অক্সিজেন স্বল্পতার কারণেই ঘটেছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ অর্ধকোটি টাকার বেশি হতে পারে।”
খামারিরা জানান, মরা মাছ বাজারে নিয়ে গেলেও আধমরা বা অস্বাভাবিক মাছের দাম পড়ে গেছে অর্ধেকে। অনেকেই মাছ বিক্রি করতে না পেরে ঘরে ফিরিয়ে এনেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার কারণে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় আরও ঘন ঘন দেখা দিতে পারে। এ জন্য সময়োপযোগী পূর্বসতর্কতা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
ময়মনসিংহের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে মাছচাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য সরকারি সহায়তা, আর্থিক প্রণোদনা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির দাবি উঠেছে। চাষিদের মতে, ত্রাণ নয়, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার একমাত্র পথ।
আরএস