ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
জুলাই ১৭, ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার ধারিয়াল গ্রামে ৩০ বছর ধরে শিকলে বন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন সাইফুলকে (৩৭) নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার মা রহিমা বেগম। স্বামী হারানো এই মা রাস্তা-ঘাটে ভিক্ষা করে ছেলের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিচ্ছেন।
সাইফুল ধারিয়াল গ্রামের মৃত বহর আলীর ছেলে। অভাব-অনটনের সংসারে ১৯৮৮ সালে তার জন্ম। সাত বছর বয়স থেকে তার আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয়। শারীরিক ও মানসিক সমস্যা প্রকট হতে থাকলে তাকে শিকলে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরের বারান্দার একটি খুঁটির সঙ্গে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সাইফুলকে। কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো মাটিতে বিছানো একটি চটের ওপর বসে বা শুয়ে সময় কাটে তার।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, শিকল খুলে দিলে সে মানুষকে কামড় দেয়ার চেষ্টা করে, যার সামনে পড়ে তাকে ঝাপটে ধরে, এমনকি অপ্রতুল বস্ত্রেই ঘুরে বেড়ায়।
সাইফুলের মা রহিমা বেগম বলেন, “জন্মের পর থেকেই ওর আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। ছোটবেলায় কথাও ঠিকমতো বলতে পারত না। সাত বছর বয়সের পর থেকে খামচি, কামড় দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়। বিভিন্ন কবিরাজ ও ডাক্তারের কাছে গিয়েও কোনো ফল হয়নি। একসময় পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেয়ার চিন্তা করেছিলাম, কিন্তু কে নিয়ে যাবে—সে সিদ্ধান্তে না পৌঁছাতে পারায় আর নেয়া হয়নি।”
তিনি জানান, “ভিক্ষা করে কোনো রকমে খাওয়াচ্ছি। সরকার থেকে একটা ঘর পেয়েছি। ছেলের নামে ২৫০০ টাকা আর আমার নামে ১৮০০ টাকা ভাতা পাই। এতে সংসার চলে না। চিকিৎসার কথা এখন ভাবারও সুযোগ নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম বলেন, “সাইফুল ছোটবেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তিন-চার বছর ধরে তার আচরণ আরও খারাপ হয়ে গেছে। শিকলে না বেঁধে রাখলে সে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।”
ধারিয়াল জামে মসজিদের সেক্রেটারি সুমন আল মামুন বলেন, “সাইফুলকে আমরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু শিকল ছাড়া রাখলে সে শিশুদের ভয় দেখায়, ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। মা বাধ্য হয়ে তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।”
ঘাটাইল পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জালাল হোসেন বলেন, “সাইফুল আমাদের সমবয়সী। ছোটবেলা থেকেই তার মানসিক সমস্যা ছিল। দারিদ্র্যতার কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এখন সে খুবই বিপজ্জনক আচরণ করে, তাই এলাকাবাসী শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছে।”
ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সরকার বলেন, “সাইফুল ও তার মায়ের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আমরা তাদেরকে ভাতা দিয়েছি। যতটুকু সম্ভব সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।”
ইএইচ