Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদায়ী বছরে বিমা খাতের উল্লেখযোগ্য ঘটনা

বছর শেষেও রয়ে যাবে রেশ

জাহিদুল ইসলাম

ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৭:৫১ পিএম


বছর শেষেও রয়ে যাবে রেশ

নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে দেশের বিমা খাত আরও একটি বছর পার করলো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর মাঝেও এসব ঘটনা বিমা খাতের উপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। বছরজুড়ে বিমাখাতে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচটি ঘটনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বাধ্যতামূলক পদত্যাগ: বিদায়ী বছরে দেশের বীমা খাতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের পদত্যাগ। ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার দায়িত্বের মেয়াদ থাকলেও ফারইস্ট লাইফ ও ডেল্টা লাইফে আর্থিক অনিয়মে সম্পৃক্ততার দায়ে গত ১৫ জুন একপ্রকার বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। দেশের বিমা খাতে এ ধরণের ঘটনা পূর্বে কখনো ঘটেনি।

ডেল্টা লাইফ ও বায়রা লাইফ থেকে প্রশাসক বাতিল: ২০২০ সালের ২৮ জুন বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সে সময় কোম্পানি পরিচালনায় প্রশাসক হিসেবে সাবেক যুগ্ম সচিব হুমায়ুন কবিরকে নিয়োগ করে আইডিআরএ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক মনোনীত হয়ে বীমা আইন ২০১০ এর ৯৫ ধারা মোতাবেক তাকে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রশাসককে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময়ধরে দায়িত্ব পালনকালে তিনি কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারেননি। উপরন্তু বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান কার্যালয়ে হানা দেয় ও বিব্রত পরিস্থিতি তৈরী হয়। পাশাপাশি বীমা গ্রাহক ও কোম্পানির সাবেক পরিচালকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অবশেষে ১লা ফেব্রæয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

অপরদিকে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান পদ থেকে ড. এম মোশাররফ হোসেনের পদত্যাগের পর ২৪ জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ে এক সমঝোতার মাধ্যমে ডেল্টা লাইফে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে কোম্পানি থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার করে ৮ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের কাছে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কোম্পানি পরিচালনায় অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ১১ ফেব্রæয়ারি ডেল্টা লাইফে প্রশাসক বসায় ড. এম মোশাররফ হোসেন নিয়ন্ত্রিত আইডিআরএ। এরপর তিন দফায় প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়।

অর্থ আত্মসাতের দায়ে ফারইস্টের সাবেক দুই চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার:  বীমা গ্রাহকদের আমানত ও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তহবিল অর্থ আত্মসাতে জড়িত থাকায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক দুই চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া এম এ খালেকের ছেলে ও কোম্পানির আরেক পরিচালক রুবাইয়াত খালেদকে একইসাথে গ্রেফতার করা হয়। মূলত ফারইস্টের সাবেক এক পরিচালকের করা মামলার প্রেক্ষিতে গত ৮ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ৯ পরিচালক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সবাই জেল হাজতে আছেন।

প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং পিএফআই প্রোপার্টিজ নামক দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফারইস্টের ১৫৮তম পর্ষদ সভার ভুয়া সার-সংক্ষেপ তৈরি করে সেটির বরাত দিয়ে কোম্পানিটির ৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করে দুদক।

গ্রাহক দাবী পরিশোধ না করায় হোমল্যান্ড লাইফের ৭ পরিচালককে গ্রেপ্তার: দীর্ঘদিনেও দাবী পরিশোধ না করায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের করা মামলায় প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হয় হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭ উদ্যোক্তা পরিচালক, যারা সবাই লন্ডন প্রবাসী। দাবী পরিশোধে ব্যর্থতার দায়ে এমন ঘটনা বীমা খাতের নজিরবিহীন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) চলাকালীন তাদের গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। অবশ্য ২৯ সেপ্টেম্বর সবাই জামিনে বেরিয়ে আসেন।তবে দাবী পরিশোধে ব্যর্থতার কথা বলা হলেও মূলত পরিচালনা পর্ষদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধই প্রধান কারণ বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হোমল্যান্ড লাইফের পর্ষদ নিয়ে বিরোধ। ১৯ সদস্যের পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় পর্যটন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়াকে। বিমাখাতের এ ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

বিমা দিবসকে ‘ক’ শ্রেণীর জাতীয় দিবসে উন্নীতকরণ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে নির্বিঘেœ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। সেই দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে ১লা মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি এই ঘোষণা দেয় সরকার। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সভায় জাতীয় বীমা দিবসকে ‘খ’ শ্রেণী থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে দিবসটি ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন হলে গত ১৩ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে।

এসব ঘটনার পাশাপাশি বিমা খাতের আরো অনেক ঘটনা রয়েছে যা খাতটি পরিচালনায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তবে এসব ঘটনা বিমাখাতের নিয়মিত কার্যাবলিরই অংশ। এসবের মধ্যে ১৩ জীবন বিমা কোম্পানির ফিন্যান্সিয়াল সলভেন্সি ও লায়বেলিটি নিরূপণে অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, সাধারণ বিমায় ৯টি সার্কুলার জারি, প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য নতুন বিমা পরিকল্প চালু এবং বিমা মেলার আয়োজন অন্যতম। 

এআই

Link copied!