Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

জাবির মুক্তমঞ্চে কনসার্ট যেন মাদকের অবাধ ব্যবহার

জাবি প্রতিনিধি

জাবি প্রতিনিধি

মার্চ ৪, ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম


জাবির মুক্তমঞ্চে কনসার্ট যেন মাদকের অবাধ ব্যবহার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে (জাবি) বলা হয়ে থাকে সাংস্কৃতিক রাজধানী। সে সাংস্কৃতিক রাজধানী জাবিতে সারাবছরই নাটক, কবিতা পাঠের আসর, সংগীতানুষ্ঠান, বির্তকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এর পাশাপাশি থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ব্যাচ এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে পুনর্মিলনী, পূর্তি উৎসব ও শিক্ষা সমাপনী উৎসব সহ বিভিন্ন আয়োজন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু  সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ।

তবে মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি আয়োজনেই চলে অবাধে মাদকসেবন। এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশ, তেমনি অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা  শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পড়ছেন অস্বস্তিকর অবস্থায়। আবার অনেক সাবেক শিক্ষার্থীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন নিজের ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। কিন্তু মাদকসেবনের এসব ঘটনার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাদেরকে। ফলে এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে।  

মুক্তমঞ্চে অবাধে মাদকসেবনের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিফ হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, সিগারেট আর গাঁজার ধোঁয়া ছাড়া কোন কন্সার্ট দেখেছি বলে মনে পড়ে না বিগত ৫ বছরে। একটা বদ্ধ জায়গায় চারদিক থেকে ধোঁয়া আসলে, শ্বাস নেওয়াই দায় হয়ে যায়। তবে ইদানিং মঞ্চ এবং মঞ্চের আশেপাশে মাতলামি করার প্রচলনটা ভালই বেড়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী  সুমাইয়া হিয়া বলেন, বহিরাগত বা ক্যাম্পাসের মানুষজন সবাই প্রচন্ড ধূমপান করে। সিগারেট, গাঁজা এসবের গন্ধে আর ধোঁয়ায় মেয়েদের প্রচন্ড সমস্যা হয়। অনেকের ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টও হয়। সম্প্রতি আমার এক বান্ধবীর  সিভিয়ার প্রব্লেম হয়েছিল। এখন যাদের ব্রঙ্কাইটিস বা ব্রিদিং ইস্যু আছে, এমন অনেকেই এখন অসুস্থ হয়ে পরার ভয়ে কন্সার্ট বা মুক্তমঞ্চের কোনো আয়োজনে যায়না। যাদের আগের  কোনো মেডিকেল ইস্যু নাই তারাও ক্রমাগত ধোঁয়ায় অসুস্থ অনুভব করে। বার বার রিকুয়েষ্ট করা সত্ত্বেও কেউ ফেলে না। এগুলা কন্ট্রোল করার কোনো উপায় নেই?

গতরাতে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গান গেয়েছিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী অঞ্জন দত্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত কনসার্টে প্রিয় শিল্পীর গান শোনার জন্য বিকেল থেকে ভিড় করেছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বহিরাগতরা।

অনুষ্ঠানে সরেজমিনে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চের বিভিন্ন কোণায় গাঁজা সেবন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। মনের সুখে সে ধোঁয়া আকাশে মিলিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি কেউ কেউ৷ গাঁজা ও সিগারেটের ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে গাঁজা সেবন বন্ধ করার অনুরোধ জানালে উল্টো বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। মুক্তমঞ্চে এমন বিরূপ পরিবেশ নিয়ে গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ অনুযোগ করেছে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে মুক্তমঞ্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উন্মুক্তভাবে মাদক গ্রহন ও উচ্ছৃঙ্খল আচরনের যে ঘটনা ঘটছে তা উদ্বেগজনক। আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা মুক্তমঞ্চকে পবিত্র স্থান হিসেবেই গন্য করি, আমাদের কাছে এইসকল ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক। এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে, একই সাথে কনসার্ট বা এই ধরনের জন্য বিকল্প কোনো স্থান নির্বাচন করাও এখন সময়ের দাবি। সেই সাথে ক্যাম্পাসের প্রোগ্রামগুলোতে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে সচেতন হওয়া জরুরী।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে আমার এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তবে এরকম ঘটনাগুলো প্রোগ্রামকেন্দ্রীক হওয়ায় শক্ত অবস্থান নেওয়া কষ্টকর। এ বিষয়গুলো ব্যাপক আকার ধারণ করার আগে আমরা যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারতাম তাহলে কিছুটা হলেও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। আগামী শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। আমরা এখন একটা অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছি। এ অভিভাবকত্বহীনতা আমাদের অবক্ষয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ছাত্র থাকা অবস্থায় এমন হলে ছাত্রত্ব চলে যেত। ধূমপান আর গাজাঁসেবন কোনভাবেই এক হতে পারে না। মাত্রাতিরিক্ত অনুষ্ঠান পড়াশোনার পরিবেশকে নষ্ট করছে। প্রশাসনের উচিত  মাদকসেবন রোধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, পদক্ষেপ তো নেওয়াই যায়। তবে ভিড়ের মধ্যে কে মাদকসেবন করছে তা খুঁজে বের করে সমাধান করা তো আসলে সম্ভব না। আর যারা প্রোগ্রাম গুলোতে অংশগ্রহন করে তারা তো বিশ্বাবিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের নিজেদের ও তো কিছু দায়িত্ব আছে। বিশ্বাবিদ্যালয়ের একটা জননন্দিত মঞ্চে গিয়ে এ ধরণের ঘটনা গুলো ঘটাচ্ছে তাদের কতুটুকু শ্রদ্ধা এ মঞ্চের প্রতি আছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিভাগ বা শিক্ষকদের মাধ্যমে এডভোকেসি করা দরকার যে শিক্ষার্থীরা এসব প্রোগ্রাম গুলোকে যেন মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে। আমি সব শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাতে চাই নিজেদের উপভোগ্যের জন্য যেন পুরো কমিউনিটিকে  বিপদের মধ্যে না ফেলে। শিক্ষার্থীরা যেন মুক্তমঞ্চের যে মর্যাদাটা রয়েছে তা রক্ষা করে।  

Link copied!