আদালত প্রতিবেদক
জুন ২৭, ২০২৫, ১১:২৪ পিএম
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাকে 'আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ' এবং ‘ইতিহাসে বিরল ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মতো সংবেদনশীল মামলার জন্য সরকারের অনুমতি থাকা আবশ্যক। একজন ব্যক্তির দায়ের করা এ ধরনের মামলা আইনত বৈধ নয়।
শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আওলাদ হোসেন মুহাম্মদ জোনাইদের এজলাসে রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন তিনি।
সেদিনই চার দিনের রিমান্ড শেষে নূরুল হুদার আরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শুনানি শুরু হলে উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারক পুনরায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি বলেন, “নূরুল হুদা দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। তার সময়েই দেশে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের জন্ম হয়। নির্বাচনের সময় ডিসি, এসপিদের দায়িত্ব দেওয়া, বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দমন এবং ভোট কারচুপির মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৮ সালে রাত ৩টার মধ্যে ২০০ এমপির নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এই পাতানো নির্বাচনে কারা জড়িত ছিল, ফ্যাসিস্ট সরকার কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল—তা জানা জরুরি।”
এরপর আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, “২৩ জুন রিমান্ডের সময় যে আবেদনের ভাষা ছিল, আজকের আবেদনের ভাষাও প্রায় একই। কেবল ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার একই রিমান্ডে নতুন নতুন ধারা যোগ করার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতি আবশ্যক।”
তিনি আরও বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার রিমান্ড চাওয়ার যৌক্তিক কারণ বা কার্যক্রমের ব্যাখ্যাও আবেদনে নেই।”
অ্যাডভোকেট সজিব বলেন, “রাষ্ট্রদ্রোহের মতো মামলায় একজন সাধারণ নাগরিক বাদী হওয়া আইনত যথার্থ নয়। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।”
পিপি ওমর ফারুক পাল্টা যুক্তিতে বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা রয়েছে। তদন্তের সময় কোনো অপরাধ উদঘাটন হলে নতুন ধারা সংযোজন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে একাধিক অভিযোগপত্র দাখিলও করা যায়।”
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফের বলেন, “এভাবে ব্যক্তিক্রমমূলক পদক্ষেপ আইনশৃঙ্খলার পরিপন্থী হতে পারে। আসামি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।”
শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড আদেশ দেন।
শুনানিকালে কে এম নূরুল হুদাকে আদালতের লোহার রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে তিনি বিচারক, পিপি ও নিজ আইনজীবীর দিকে তাকাচ্ছিলেন। পুরো শুনানি জুড়ে তাকে হতাশ ও বিমর্ষ দেখায়।
ইএইচ