ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
ভারতীয় অধ্যাপক প্রভাষ রঞ্জনের নিবন্ধ

বাংলাদেশে চাইলে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে দিল্লি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম

বাংলাদেশে চাইলে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে দিল্লি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে অবস্থান নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি এখন তুঙ্গে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানানোর পর এই দাবিটি সুনির্দিষ্ট আইনি রূপ নিয়েছে।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়াও হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে শুরু করে গুমসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য দিল্লির কাছে অনুরোধ জানায়, তখন ভারতের আইনি উপায় কী হবে?

এ নিয়ে ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে দীর্ঘ এক নিবন্ধ লিখেছেন ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির জিন্দাল গ্লোবাল ল স্কুলের অধ্যাপক প্রভাষ রঞ্জন।

নিবন্ধে প্রভাষ রঞ্জন বলেছেন, ভারতের প্রত্যর্পণ আইন-১৯৬২ ছাড়াও শেখ হাসিনার সরকারের সাথে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিও বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ১২(২) ধারা ও ভারত-বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তির শর্তগুলোও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৩ সালের চুক্তির ওপর নির্ভর করতে পারে। চুক্তির ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারত তাদের ভূখণ্ডে কেবল সেই ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য; যারা প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ (ভারত ও বাংলাদেশি আইনের আওতায় কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ডের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ) করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে এই অনুচ্ছেদ সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আদালতে এখনো দোষী প্রমাণিত না হলেও হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। ভারত থেকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তাকে এসব অপরাধে অভিযুক্ত করাই যথেষ্ট।

এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির অনুচ্ছেদ ১০(৩)-এর আওতায় প্রত্যর্পণ চাওয়ার জন্য অনুরোধকারী রাষ্ট্রের পক্ষে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানাও যথেষ্ট।

এক্ষেত্রে অনুরোধ জানানো রাষ্ট্রের কাছে সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ শেয়ার করার দরকার নেই। ২০১৬ সালে চুক্তিতে আনা একটি সংশোধনীর কারণে এটির দরকার নেই। তবে মূল চুক্তিতে অনুরোধকারী রাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো দেশের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ অন্যান্য প্রমাণ শেয়ার করার শর্ত ছিল। অভিযুক্তদের প্রত্যর্পণ ত্বরান্বিত করার জন্য ২০১৬ সালে অপরাধের প্রমাণ শেয়ার করার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করা হয়।

যে কারণে বাংলাদেশ এ ধরনের অনুরোধ করলে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে ভারতের। তবে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে কোনো ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম বিধানও রয়েছে।

প্রথমত, ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে অপরাধী ব্যক্তি যদি রাজনৈতিক নেতা হন, তাহলে তার প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। আবার ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ৩১(১) ধারায় রাজনৈতিক ছাড়ের বিধান রয়েছে। তাহলে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য ভারত কি এসব বিধানের ওপর নির্ভর করতে পারে? এর জবাব হলো, না। কারণ চুক্তির ৬(২) ধারায় বিশেষভাবে হত্যা ও অন্যান্য অপরাধের মতো অপরাধকে বাদ দেওয়া হলেও আন্তর্জাতিক আইন গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, যদি সেই ব্যক্তির প্রত্যর্পণ অপরাধের দায়ে আদালতে বিচার করা হয়, তাহলে অনুরোধকৃত রাষ্ট্রকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার অনুমতি দিয়েছে অনুচ্ছেদ ৭। এই বিধানটি হাসিনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কারণ তিনি ভারতীয় আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবেন, এমন কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

তৃতীয়ত, চুক্তির অনুচ্ছেদ ৮(১) (এ)(আইআইআই) ধারায় বলা হয়েছে, যদি একজন ব্যক্তি প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধকৃত রাষ্ট্রকে বোঝাতে পারেন যে, তাকে হস্তান্তর করা হলে দেশে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না এবং তাকে প্রত্যর্পণ করাটা নিপীড়নমূলক হবে, তাহলে অনুরোধকৃত রাষ্ট্র সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে প্রত্যর্পণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে। কারণ ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ‘‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে সরল বিশ্বাসে’’ করা হয়নি বলে জানাতে পারবে অনুরোধকৃত রাষ্ট্র।

একই নীতি ১৯৬২ সালের প্রত্যর্পণ আইনের ২৯ ধারায় প্রতিফলিত হয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হতে পারে। যে পরিস্থিতিতে তিনি ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করছেন, তাতে যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক শত্রুতার দ্বারা প্রভাবিত। যদি তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং তার প্রত্যর্পণ হবে নিপীড়নমূলক এবং অন্যায্য।

এই ব্যাখ্যা বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। যারা দাবি করবে, শেখ হাসিনাকে তার স্বৈরাচারী শাসনের জন্য জবাবদিহি করা হবে ন্যায়বিচারের স্বার্থেই। কোনো বিরোধ নিষ্পত্তিকারী সংস্থা কার ব্যাখ্যা সঠিক তা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত ৮(১) (এ)(আইআইআই) ধারা অনুযায়ী, উভয়পক্ষই নিজেদের আইনি ব্যাখ্যায় অটল থাকতে পারে।

ভারতের সামনে অবশ্য আরেকটি আইনি বিকল্প আছে। তবে সেটি হবে কঠিন। চুক্তির ২১(৩) ধারায় ভারতকে যেকোনো সময় নোটিশ দিয়ে এই চুক্তি বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে নোটিশ প্রকাশের তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় মাস পর চুক্তিটি আর কার্যকর থাকবে না। এছাড়া চুক্তি বাতিলের আগে করা প্রত্যর্পণের অনুরোধের প্রক্রিয়া করার বিষয়ে চুক্তিতে কিছু বলা হয়নি।

ভারত এই বিকল্প ব্যবহার করবে কি না তা নির্ভর করবে দেশটি শেখ হাসিনাকে কতটা মূল্য দেয় তার ওপর; যিনি নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। নয়াদিল্লি শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে চায়। একতরফাভাবে চুক্তিটি বাতিল করলে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খারাপ হতে পারে; যা ভারতের বিভিন্ন কৌশলগত ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।

দিন শেষে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আহ্বান এখন আইনি বিষয়ের চেয়ে অনেকটা রাজনৈতিক হয়ে গেছে। তবে ভারত যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুক না কেন, তাদের রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ এবং যেকোনো সিদ্ধান্তের ন্যায্যতার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের ভাষাকে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।

ইএইচ

Link copied!