Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫,

তিন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি অস্ট্রেলিয়ার ৪১ সিনেটর-এমপির

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ২১, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম


তিন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি অস্ট্রেলিয়ার ৪১ সিনেটর-এমপির

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চিঠি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ৪১ জন সিনেটর ও এমপি। মোটা দাগে তিনটি ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে চিঠিতে। সেগুলো হচ্ছে- জরুরি ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা, জুলাই অভ্যুত্থানের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করা এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ভেঙে ফেলা। এসব কাজ করতে বিলম্ব বা অস্পষ্টতা কেবল জনসাধারণের অবিশ্বাসকে আরও গভীর করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করবে বলে মনে করছেন তারা। 

বুধবার (২১ মে) ই-মেইলে এ চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও সময়ভিত্তিক নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়।

চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ান সংসদ সদস্যরা বলেন, গত বছর জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের জনগণের দেখানো সাহসিকতা এবং সাহসকে স্বীকৃতি জানাই। এটি আপনার প্রশাসনকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার সমুন্নত রাখার এবং শাসনব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থা পুনর্নির্মাণের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছে।

তারা বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বৈধতা এবং স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিকভাবে তত্ত্বাবধানে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা প্রয়োজন। অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী, এই রোডম্যাপ এ বছরের মধ্যে ঘোষণা করা উচিত এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচনে একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈধতা ছিল না। নির্বাচনি অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য আমরা আপনার সরকারকে অনুরোধ করছি।

সিনেটর ও এমপিরা বলেন, জুলাই বিপ্লবের সময় নিহত এবং আহত মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে। এই সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) অবিলম্বে ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, মানবাধিকার পর্যালোচনায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ২০০৯ সাল থেকে র‍্যাব কর্তৃক ২,৬৯৯ জনেরও বেশি মানুষকে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং বাহিনীটি সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সাথে কাজ করেছে, মতবিরোধকে চুপ করিয়েছে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্য করে কাজ করেছে। আমরা র‍্যাবের নেতৃত্বের উপর মার্কিন সরকার কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে সমর্থন করে উল্লেখ করেছি এবং আমরা অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আবারও আমরা লক্ষ্য করছি অস্ট্রেলীয় বাংলাদেশ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আপনার প্রশাসনের কাছে র‍্যাব ভেঙে ফেলার এবং এর শিকারদের ন্যায়বিচার প্রদানের অনুরোধ।

চিঠিতে অস্ট্রেলীয় সাংসদরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব বা অস্পষ্টতা জনগণের অবিশ্বাস আরও গভীর করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে। তারা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চিঠিতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানান এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য গঠনমূলকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দেন।

অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের যেসব সিনেটর ও এমপি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন: সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, সিনেটর ডেভিড শোব্রিজ, সিনেটর জর্ডন স্টিল-জন, সিনেটর ফাতিমা পেম্যান, সিনেটর লিডিয়া থর্প, সিনেটর পেনি অলম্যান-পেইন, সিনেটর মেহরিন ফারুকি, সিনেটর স্টেফ হজগিন্স-মে, সিনেটর বারবারা পোকক, সিনেটর পিটার হুইশ-উইলসন, সিনেটর, ডোরিন্ডা কক্স, সিনেটর নিক ম্যাককিম, সিনেটর সারা হ্যানসন-ইয়ং, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, অ্যাবিগেল বয়েড (এনএসডব্লিউ এমএলসি), আমান্ডা কোহন, ক্যাথরিন কোপসি, (এমএলসি), সু হিগিনসন (এনএসডব্লিউ এমএলসি), কেট ফেহরম্যান (এনএসডব্লিউ এমএলসি), আনাসিনা গ্রে-বারবেরিও (এমএলসি), আইভ পুগলিয়েলি (এমএলসি), ড. সারাহ ম্যানসফিল্ড (এমএলসি), ব্র্যাড পেটিট (এমএলসি), জেনি লিওং (এনএসডব্লিউ এমপি), তামারা স্মিথ (এনএসডব্লিউ এমপি), কোবি শেট্টি, (এনএসডব্লিউ এমপি), টিম রিড এমপি, এলেন স্যান্ডেল এমপি, মাইকেল বার্কম্যান এমপি, গ্যাব্রিয়েল ডি ভিয়েট্রি এমপি, ড. রোজালি উডরাফ এমপি, তাবাথা ব্যাজার এমপি, সিসিলি রোজল এমপি, ক্যাসি ও’কনর এমএলসি, ভিকা বেইলি এমপি, হেলেন বার্নেট এমপি, শেন র‍্যাটেনবারি এমএলএ, অ্যান্ড্রু ব্র্যাডক এমএলএ, জো ক্লে এমএলএ, লরা নাটাল এমএলএ, রবার্ট সিমস এমএলসি এবং ড. মাইক ফ্রিল্যান্ডার এমপি।

আরএস

Link copied!