ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

হাওর অঞ্চলের ভূমি ও জলাভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি উন্নয়ন জরুরি

মোশতাক আহমেদ রুহী

মোশতাক আহমেদ রুহী

জুন ২৮, ২০২২, ০৬:১১ পিএম

হাওর অঞ্চলের ভূমি ও জলাভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি উন্নয়ন জরুরি

দেশের উত্তরে অবস্থিত মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে আসা এবারের প্রলয়ংকারী ঢলে কলমাকান্দার হাওরগুলোতে মেঘালয়ের তিন/চার কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাহাড় ধসে যদিও ব্যাপক পলিমাটি এসেছে কিন্তু আতঙ্কের বিষয় হল পাহাড় ভেঙে তীব্র ঢলের পানিতে ব্যাপক পলি আসা প্রতিবছর অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভরাট হয়ে হাওরের ভূমির বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

মেঘালয়ের পাহাড় ধসের অন্যতম কারন বন ও উদ্ভিদ বিনাশের ফলে এধরনের বিপর্যয়। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পরিবেশগত সমীক্ষা করা জরুরি। দুঃখজনক ব্যাপার হল পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ তান্ডবে সৃষ্ট বন্যা ও পানি নেমে যাওয়ার পর কলমাকান্দা-দূর্গাপুরের ঘরবাড়ি, অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসাত্নক ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ যথাযথভাবে কোন সংবাদ মাধ্যমে অতীতেও প্রতিফলিত হয়নি-এখনও হয়নি।

প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাই, হাওরের পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে । হাওরের সড়কে প্রতি এক কিলোমিটার অন্তর অন্তর  উঁচু সেতু বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করে পানিপ্রবাহের সুযোগ রাখতে হবে। ফসল রক্ষাকারী অস্থায়ীবাঁধগুলো কিভাবে নির্মাণ করে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ নির্বিঘ্ন করা যায় তার জন্য সমীক্ষা করা প্রয়োজন। পানিপ্রবাহের পাশাপাশি হাওরের জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক চলাচল এবং হাওরের কৃষক, জেলে, স্থানীয় জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখতে হবে হাওরের ভূমি দেশের ভূগর্ভস্থ মিঠা পানির বড় উৎস । এছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শুষে নেয় হাওর অঞ্চল।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় হাওর আছে। 

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) করা এক গবেষণায় জানা গেছে, দেশের হাওর অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৮৬ শতাংশই গত ৩২ বছরে ভরাট হয়ে গেছে। এতে হাওরে বৃষ্টির পানি ধারণের ক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ফলে বন্যার ভয়াবহতা দেখা গেছে। হাওরের বাকি অংশটুকু রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

সমীক্ষায় জানা গেছে  ৭ জেলায়  ২৯৩টি হাওর অবস্থিত । এই হাওরগুলো দেশের ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪০ প্রজাতির মাছের প্রজননক্ষেত্র। হাওরে ২০৬ প্রজাতির পাখি, ২০০ প্রজাতির গাছ, ৩৪ প্রজাতির রেপটাইল, ৩১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় । প্রতি বছর ৬০ হাজারের বেশি পরিযায়ী পাখি হাওরে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বড় অংশীদার হাওর অঞ্চল। মোট ধান উৎপাদনের ১৬ শতাংশ হাওর অঞ্চল থেকে আসে। হাওর অঞ্চল দুগ্ধজাত পণ্য এবং মৎস্য ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

হাওরের জলাভূমির মাটির ধরন এবং জলজ উদ্ভিদের প্রবলতা বন্যার প্রবণতা হ্রাসে সহায়তা করে। বর্ষাকালে উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন নদীর পানি বেড়ে যায় এবং তা প্রচন্ড গতিতে সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। 

এসময় নদীসংলগ্ন স্থলভাগে পানির তীব্র তোড়ের সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের। দেশে এটা স্বাভাবিক চিত্র হলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় তা আর স্বাভাবিক বলা হচ্ছে না। বলাবাহুল্য কৃষি জমির এক বিরাট অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। হাওরের নদ-নদী খালগুলো খনন করে গভীর করা হলে পানি নেমে আসার সময় ভাটিতে চাপ কম পড়লে ভাঙন প্রবনতা হ্রাস পাবে।

এছাড়াও পাহাড়ি ঢলে আসা বালুর স্তর জমা হয়ে কলমাকান্দা-দুর্গাপুরের সীমান্তবর্তী আবাদী ভূমি অনাবাদী ভূমিতে রূপান্তর হচ্ছে ও হাওর সংযুক্ত নদী-খালগুলো বালু ভরাট হয়ে মহাবিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ছে । এই এলাকায় মানুষের বসতভিটা , হাটবাজার ,রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার জন্য যথাস্থানে ব্লক বসানো ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন । 

উল্লেখ্য ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে আমি পার্লামেন্টে বারবার আগাম সতর্ক করে হাওর অঞ্চলের ভূমি ও জলাভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছিলাম ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প অনিয়মে বাস্তবায়িত হচ্ছে যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

ফলে এই অধিদপ্তরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবেলায় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রয়োজন। হাওর অঞ্চলের বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রয়োজন। দুর্যোগে ঠাঁই হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো । অতি বৃষ্টিপ্রবন এই এলাকায় ঝড় হলেই বিদ্যুতের অনেক খুটি পড়ে যায়-কোন কোন সময় দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকে না ।

লেখক : মোশতাক আহমেদ রুহী 
পরিচিতি : সাবেক এমপি (২০০৯- ২০১৩ মেয়াদ) 
কলমাকান্দা-দুর্গাপুর আসন

Link copied!