ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

আসুন বন্ধ করি নারীর প্রতি সহিংসতা

মো. তানজিমুল ইসলাম

মো. তানজিমুল ইসলাম

নভেম্বর ২৫, ২০২২, ০৩:২৬ পিএম

আসুন বন্ধ করি নারীর প্রতি সহিংসতা

অতিসাধারণ মানুষের কাছে ‘জেন্ডার’ মানে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ‘নির্যাতন’ টাইপের এক বিষয়। আশির দশকে বিষয়টি প্রায় এমনই ছিল; কিন্তু কালক্রমে এ ধারণার অনেক পরিবর্তন সাধিত হলেও জনমনে ভ্রান্ত ধারণাটি যেন অস্থি-মজ্জার সাথে মিশে আছে। উন্নয়ন জগতে ‘জেন্ডার’ হলো নারী-পুরুষের সমতায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বা বিশেষ উদ্যোগ। জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের সমাজে নারী-পুরুষরা যখন সমান তালে কাজ করছে; সর্বোপরি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার মাধ্যমে দায়িত্ব বণ্টন করে নিচ্ছে, জেন্ডারের উদ্দেশ্যও ঠিক তখনই সফল হচ্ছে।

সময়ের প্রয়োজনে, পরিস্থিতি বিবেচনায় কৌশলগত কারণে ও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর প্রতি পুরুষের, পুরুষের প্রতি নারীর যে সহযোগিতা-সহমর্মিতা ও কাজ করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ার যে উদ্যোগ— তা-ই মূলত উন্নয়ন জগতে ‘জেন্ডার’ হিসেবে অভিহিত। বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছে; সরকারি-বেসরকারি নানাবিধ পদক্ষেপের ফলে নারীরা আজ প্রায় সর্বদিক থেকেই এগিয়ে চলেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অর্থনীতি-অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা-স্বনির্ভরতায় নারীরা দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখলেও আজও নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটে হরহামেশাই।

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পেইন, প্রতিবাদ, সমাবেশ, গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন কর্মসূচি ইত্যাদি প্রচলিত। বছরের পর বছর চলে যায়, সময়ের আপন নিয়মে কর্মসূচি পালিত হতে থাকে; তবুও একটি বিশেষ শক্তিধর গোষ্ঠী বহাল তবিয়তে তাদের পৌরুষ আচরণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকে অত্যাধুনিক কায়দায়। শুধু কাগজে-কলমেই নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের অস্থি-মজ্জায় মিশে আছে একটি নেতিবাচক বিশ্বাস : ‘নারীরা অবহেলিত-নির্যাতিত-বঞ্চিত’  ইত্যাদি! বাস্তবতা যা-ই হোক না কেন, শুধু নারীদের ‘মানুষ’ হিসেবে পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন না করার কারণেই এমন চিত্রটি স্থায়ীভাবে আটকে আছে। নারীর উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে এই জ্যামটি তাদের গতিশীলতাকে কেবল ব্যাহতই করছে না বরং পিছিয়ে দিচ্ছে একটি জাতিকে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বাংলাদেশেও একজন মেয়েকে ‘নারী’ হয়ে ওঠা পর্যন্ত তার চলাফেরা, মতামত প্রকাশ, এমনকি যাবতীয় ইচ্ছা-অনিচ্ছার গাইডলাইন নির্ধারণ করে দেয়া হয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী নির্যাতনের শিকার হয়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী জনবলের মধ্যে, বিশেষ করে সেবক-সেবিকাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী। এই নারীরাই আবার আজকের কোভিড-১৯-এর মহাসংকটেও নিজেকে নিয়োজিত করেই চলেছে।

অথচ তাদের স্বীকৃতি মিলছে না, কিছুতেই না! নারীর উন্নয়নের কথা বলার পরই জনৈক আলোচক যখন নিজের স্ত্রীর প্রতি শারীরিক তথা পারিবারিক সহিংসতার অনুঘটক হন, তখন বিষয়টি বড্ড সাংঘর্ষিকই বটে! বিভিন্ন পত্রিকার তথ্যমতে জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতার মধ্যেও সারা দেশে প্রায় ৭০০টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং পারিবারিক নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেছে আট শতাধিক। এছাড়াও অপ্রকাশিত ঘটনার সংখ্যাটি কেবল অনুমান করে নিলেই বোঝা যায়।

আশ্চর্য ব্যাপার হলো, অধিকাংশ ধর্ষণ তথা অন্যান্য নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে প্রায় নিকটাত্মীয়-পরিজন দ্বারাই। অর্থাৎ নারীরা কোথাও তেমন একটা নিরাপদ নয় বললেই চলে। কঠোর এই পুরুষতান্ত্রিকতার কুপ্রভাবে আর ধর্মীয় অনুশাসনের যাঁতাকলে নারীকে পিষ্ট করা হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে। অথচ প্রত্যেক ধর্মেই নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার কথা বলা হয়েছে সুস্পষ্টভাবে।

বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সত্যিকার অর্থে যতদিন নারীরা নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, যতদিন নারীদের নিরাপত্তা ও সহিংসতা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হবে, ততদিন বিশ্ব নারীদের সমানাধিকারের ব্যাপারে অহঙ্কার করতে পারবে না। বিশ্বের সব দেশের নারী, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন বা বেঁচে ফিরে এসেছেন— তাদের জন্য অথবা তাদের হয়ে কথা বলার জন্য জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত হওয়া এখন সময়ের দাবি।

আজ ২৫ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’। জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া এই আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে দেয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘নারী, মেয়েশিশু, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের প্রতি সহিংসতা দিনকে দিন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অপরাধ হয়ে উঠছে। এসব অপরাধ তথা হত্যার জন্য দায়ী ওই নারী বা মেয়ের পুরুষসঙ্গী অথবা পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই।

আমাদের সমাজে সাধারণত মেয়ে আর ছেলের মধ্যে পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, মর্যাদাবোধ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সম্পদ বণ্টন, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, এমনকি প্রজনন অধিকারের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য চোখে পড়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা কিংবা বৈষম্য মোকাবিলা করা কোনো সহজ কাজ নয়। যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা প্রায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তাই সর্বাগ্রে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।

পরিবারে, বিদ্যালয়ে, কর্মস্থলে, শহরে, বন্দরে, যানবাহনে, এমনকি বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে তাদের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর একজন নারীর প্রয়োজনীয় আইনি ও চিকিৎ?সা সহায়তার সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে নারী-পুরুষের যে ন্যায্য অধিকার ও গুরুত্ব রয়েছে; উভয়ে মিলে যে অভিন্ন সত্তা— এই মানবিক বোধটুকু গভীরভাবে উপলব্ধি করতে না পারলে নারীর প্রতি বৈষম্য চলতেই থাকবে। আর এ কাজগুলো শুরু করতে হবে একদম গোড়া থেকেই।

‘বিশ্বের মোট মানবসংখ্যার অর্ধেক যেখানে নারী, তাই নারীর প্রতি যে বৈষম্য, সহিংসতা ও নিগ্রহ চলছে— সেসব যে কোনো মূল্যে থামানো এখন জরুরি। কারণ এসব বৈষম্য ও সহিংসতার কারণে নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা তাদের জীবনকে গড়ে তুলতে পারছে না। নারীদের পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করার কারণে আমরা কাঙ্ক্ষিত ও টেকসই বৈশ্বিক অগ্রগতি এখনও অর্জন করতে পারিনি। তাই আসুন সবাই সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। নিজ নিজ জায়গা থেকে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ করি নারী নির্যাতন। উপরোক্ত করণীয়গুলো নিতান্তই মানব জাতির। নারী জাতিকে ‘মানুষ’ হিসেবে যোগ্য সম্মান প্রদান করার জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য আমাদের সবার, বিশেষ করে পুরুষদের।

জেন্ডার সহিংসতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, জনমনে সচেতনতাও বেড়েছে; তথাপি একটি বিষয়ে নতুন করে চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে আর তা হলো নারী ও শিশু ধর্ষণ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে তাদের ধর্ষিত হবার গল্প শোনালেও বেশিরভাগ মানুষই তা আমলে নিতে চায় না। বিভিন্ন আলোচনায় ফিসফিসিয়ে বা কুর্নিশ করে অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘সময় এসেছে ধর্ষণবিরোধী আলোচনার’ বিষয়টি আলোকপাত করার। আদালতে নারী নির্যাতনমূলক মামলার অধিকাংশই যখন মিথ্যা, বানোয়াট আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে ধামাচাপা দেয়া হয়, তখন বিষয়টি নতুনভাবে ভাবিয়ে তোলে। এক্ষেত্রে নারীরা বড্ড অসহায় আর লজ্জার চাদর গায়ে জড়িয়ে দিনাতিপাত করে। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হলেও বলার পরিবেশ নেই। নারীরা কিল খেয়ে কিল হজম করে চুপচাপ থাকে এ সমাজে!

সংগত কারণেই লোকলজ্জার ভয়ে ‘নারী জাতি’ আজ বড্ড একা, যা তারা কোনো নিকট বন্ধুকেও জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের বিভিন্ন ঐক্যজোট রয়েছে, টকশোতে আলোচনার ঝড় ওঠে; অথচ ঠিক সেই মুহূর্তেই নির্যাতিত নারীরা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে আড়ালে-আবডালে। এহেন অনিয়ম-অন্যায়, অনাচার-বৈষম্য দূরীকরণে সবার ঐকমত্য সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই আসুন, জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-বর্ণ-নির্বিশেষে জেন্ডার সহিংসতা নির্মূল করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেকে জেন্ডার সংবেদনশীল হই এবং বন্ধ করি নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা।

লেখক : কোঅর্ডিনেটর, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ

Link copied!