ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

পানি আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য

মেহেরুন নিছা মেহেরীন

মেহেরুন নিছা মেহেরীন

আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম

পানি আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য

বন্যায় ভাসছে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। এসব জেলায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। অর্ধকোটি মানুষ পানিবন্দি। পানিতে ডুবে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। হাজার হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশু ডুবে মারা গেছে, একই দশায় পড়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। ডুবে যাওয়া বাড়ি-ঘর থেকে সব কিছু রেখে জীবন নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন অনেকে।

গত কয়েকদিনের বন্যায় ইতোমধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা হয়, ক্ষয়ক্ষতিও হয়, কিন্তু দেশে চলতি বন্যা কিন্তু এমন প্রাকৃতিক বন্যা নয়, এই বন্যা অনেকটাই মানবসৃষ্ট। আগে থেকে বাংলাদেশকে কোনো সতর্ক না করে ভারত আমাদের দেশের সঙ্গে থাকা সব জলকপাটগুলো খুলে দিয়েছে। আর এ কারণে নাগরিকরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেনি। একটা হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের মানুষ এই বন্যাকে প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসন ভাবছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে এ বন্যা নিয়ে যেসব মন্তব্য ভেসে বেরাচ্ছে তার মধ্যে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই ভারতকে দায়ী করছেন।    

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের পানি আগ্রাসন মোটেই কোনো নতুন খবর নয়। এই আগ্রাসনের একটি প্রধান দিক হলো নদ-নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি কিছু এলাকায় এমনভাবে পানি ছেড়ে দেয়া, যাতে পানির প্রবল তোড়ে এলাকার পর এলাকাজুড়ে ফসলের ক্ষেত ও মানুষের বাড়িঘর ডুবে যায়। যাতে বিরাট বিরাট টিনের ঘর ভেসে যায়। প্রতি বছরই দেশের প্রায় অর্ধেক জেলা ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ভীষণভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা জানি, নদীপ্রবাহের সাথে মানুষের জীবনপ্রবাহ জড়িত। সেই অর্থে নদী বাঁচলে, আমরাও বাঁচব। ভারত থেকে ৫৪টি এবং মিয়ানমার থেকে তিনটিসহ মোট ৫৭টি নদী শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত।

বাংলাদেশে একসময় ১২০০ নদীর নাম শোনা যেত, এখন ২০০ নদীও সচল নেই। সব শুকিয়ে চিকন মরা খালে পরিণত হয়েছে। চিহ্নই থাকছে না। আমাদের তিন দিক দিয়ে ঘেরা বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত আন্তর্জাতিক নদীর সকল নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করছে।

সারাদেশে প্রায় আট কোটি মানুষ আর্সেনিক আতঙ্কে রয়েছে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, বগুড়ার বিস্তর এলাকায় ৬০-৭৫ শতাংশ টিউবওয়েলে আর্সেনিক সমস্যা বিরাজমান। দেশের মোট ৬০টি জেলা ও ২৭১টি উপজেলায় আর্সেনিক বিষ কম বেশি রয়েছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় কৃষি, শিল্প, সেচ, নৌ-পরিবহন, গাছ-পালা, পরিবেশ, মৎস্য সম্পদ, পানীয় জলসহ বহুবিধ শঙ্কা প্রবল হয়ে জমির উর্বরতা নষ্ট ও শিল্প কারখানা ধ্বংস করে দিচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের পদ্মা, যমুনা, তিস্তা নদীতে এখন সম্পূর্ণ চর পড়ে গেছে। চরে এখন মানুষেরা ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলাধুলা করছে।

বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে অন্যততম প্রধান নদী পদ্মার ১৯ মাইল উজানে মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা নামক স্থানে ভারত ১৯৬১ সালে বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করে এবং ১৯৭৪ সালে ফিডার কেনেলসহ নির্মাণকাজ শেষ করে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। ভারত সরকার প্রায় আলোচনা ও সেমিনারে বলে থাকে, বাংলাদেশের ক্ষতিকারক কিছুই করবে না। ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে বাংলাদেশে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে শীত মৌসুমে, ৪৭ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকত।

’৭৫ সাল থেকে নানা প্রকার সমঝোতা-চুক্তি ইত্যাদি স্বাক্ষরের পরও জমি এবং কয়েক কোটি মানুষের জীবন ও পরিবেশকে বিপন্ন করা হয়েছে। শীতকালে বহু নদীতে নৌকার বদলে গরু-মহিষের গাড়ি চলে। আমাদের দেশের ১৯৭১ সালের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার এবং বর্তমানে ছয় হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ নদীবাহিত পানির প্রায় ৬১ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে। ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে ব্র‏হ্মপুত্রের পানি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মরুভূমি অঞ্চলে (মরুভূমিকে মরুদ্যানে পরিণত করার উদ্দেশ্য) সরিয়ে নেয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে আমরা পানির জন্য হাহাকারের দেশে পরিণত হবো। ভারতের এরকম বৈরী আচরণ অব্যাহত থাকলে এ দেশে একদিন কারবালার মাতম উঠবে। সুবজ, শ্যামল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর সুবৃহৎ বদ্বীপ বাংলাদেশ হারিয়ে যাবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত পৃথিবীর মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনও হারিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ভারসাম্যহীন লবণাক্ততার কারণে সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা পৃথিবীর পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করেছেন খ্যাতনামা ভূতত্ত্ববিদ ও পানি বিশেষজ্ঞরা।

শুধুমাত্র ফারক্কা বাঁধের প্রভাবে এত বছরে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৮০ ভাগ নৌপথ। নৌপথে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহণ কম খরচে করা যায়। নৌ-চলাচলের জন্য নদীর গভীরতা কমপক্ষে দরকার তিন মিটার, বাংলাদেশের কোনো কোনো নদীতে এখন তা দুই মিটারের নিচে। পানি চুক্তি অনুসারে ৩৬ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশ পায় মাত্র আট হাজার কিউসেক পানি। ফারাক্কার পানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য ভারত সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও আসলে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভারত মুখে আর অন্তরে ১০০ ভাগ উল্টো কাজ করছে। উপরন্তু বিগত বছরগুলোতে ভারত গঙ্গার উজানে আরো ব্যারেজ এবং কয়েকশ’ ছোট-বড় জলাধার নির্মাণ করেছে। ফলে ফারাক্কায় গঙ্গার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। শীত ও গ্রীষ্মকালে যখন আমাদের প্রচুর পানি দরকার, তখন ভারত সবগুলো গেট বন্ধ রাখে। আর যখন বর্ষাকাল, আমাদের পানির দরকার নেই, তখন সবগুলো গেট খুলে দেয়। ফলে প্লাবনে আমাদের দেশ ডুবে যায়।

দেশের মানুষ মনে করেন ভারত ৫৪টি নদীর উজানে বিভিন্ন বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে একবার শুকিয়ে ও আবার ডুবিয়ে মারার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাই সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামল বাংলার ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব রক্ষার্থে ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ভারতের পানি আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখিকা: কলামিস্ট ও সমাজকর্মী ।

ইএইচ

Link copied!