ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প: বৈশ্বিক অর্থনীতির পাওয়ার হাউজ ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

সাকিফ শামীম

সাকিফ শামীম

জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

দেশের তৈরি পোশাক শিল্প: বৈশ্বিক অর্থনীতির পাওয়ার হাউজ ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

আমরা যারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাক্ষী, তারা এক বাক্যে স্বীকার করব যে, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প (RMG) একটি সত্যিকারের পাওয়ার হাউজ। এটি শুধু দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও বাংলাদেশের এক গর্বিত অবস্থান তৈরি করেছে। একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিশাল শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার হিসেবে আমি প্রতিনিয়ত এই শিল্পের উত্থান এবং এর বিপুল সম্ভাবনাকে খুব কাছ থেকে দেখছি।

এই শিল্প আমাদের লাখো মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, দিয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু এর পথচলা কি সবসময় মসৃণ ছিল বা ভবিষ্যতেই কি থাকবে? এই লেখার মাধ্যমে আমি সেই বিষয়গুলোই সহজভাবে তুলে ধরতে চাই।

স্বাধীনতার পর, যখন বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশ, তখন হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেননি যে পোশাক শিল্প একদিন আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। কিন্তু অদম্য পরিশ্রম, দূরদৃষ্টি এবং তুলনামূলক সস্তা শ্রমের সুবিধা নিয়ে আমরা এই খাতকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছি।

শুরুতে যেখানে ছোট ছোট কারখানা ছিল, আজ সেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশাল সব স্থাপনা। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বড় বড় বাজারে মেইড ইন বাংলাদেশ; ট্যাগ যুক্ত পোশাকের চাহিদা এখন আকাশচুম্বী। আমাদের RMG খাত দেশের জিডিপিতে প্রায় ১১% অবদান রাখে এবং মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩% আসে এই শিল্প থেকে।

ভাবুন একবার! এটি কেবল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নয়, এটি দেশের লাখো মানুষের স্বপ্ন আর জীবিকার প্রতিচ্ছবি। বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের কল্যাণে দেশের নারী সমাজের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে অভাবনীয়ভাবে। লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক কারখানায় কাজ করে নিজেদের এবং পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এটি শুধু পোশাক উৎপাদন নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তন এবং উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের এই সাফল্য কেবল পরিমাণের দিক থেকেই নয়, গুণগত মান এবং কমপ্লায়েন্সের দিক থেকেও এসেছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের শিল্পে যে সংস্কার এসেছে, তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। শ্রমিক নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশের উন্নতি এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আমরা এখন অনেক এগিয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি LEED সার্টিফাইড গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে, যা আমাদের পরিবেশ সচেতনতার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্থিতিস্থাপকতা এবং দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রশংসা করা হয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যখন বিশ্বজুড়ে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছিল, তখনও আমাদের পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে দ্রুততার সাথে, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা আরও বাড়িয়েছে।

তবে, এই সাফল্যের গল্পের আড়ালে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও লুকিয়ে আছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা দিচ্ছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে, তখন আমরা অনেক বাণিজ্যিক সুবিধা (যেমন জিএসপি) হারাবো। এর ফলে আমাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের মুখোমুখি হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত হতে হবে এখন
থেকেই।

আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো পণ্যের বৈচিত্র্যহীনতা। আমরা মূলত মৌলিক পোশাক যেমন: টি-শার্ট, প্যান্ট উৎপাদনে এগিয়ে। কিন্তু উচ্চ-মূল্যের ফ্যাশন আইটেম, কারিগরি বস্ত্র বা স্পোর্টসওয়্যারের মতো পণ্যে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়াও, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে শিল্পে স্বয়ংক্রিয়তা (Automation) ও প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। যদিও এতে কিছু কর্মসংস্থান হারানোর ভয় থাকে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এটি জরুরি। আমাদের কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আপস্কিলিং এবং রিস্কিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা আরেকটি বড় সমস্যা। সুতা ও কাপড়ের একটি বড় অংশ এখনও আমদানি করতে হয়, যা উৎপাদন খরচ বাড়ায় এবং সাপ্লাই চেইনে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।

সবশেষে, বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক সংকট পোশাক শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার, উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক – সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারকে এমন নীতি সহায়তা দিতে হবে যা বিনিয়োগে আকর্ষণ করে, বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে।

কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পোশাক শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী ঢেলে সাজাতে হবে। নিজস্ব ব্র্যান্ডিং এবং ডিজাইন সক্ষমতা বাড়িয়ে; ফাস্ট ফ্যাশন; এর বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে।

পরিশেষে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প শুধু একটি শিল্প খাত নয়, এটি আমাদের অর্থনীতির এক আলোকবর্তিকা। এর সাফল্য আমাদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, বিশ্ব দরবারে আমাদের পরিচয় দিয়েছে। সামনের চ্যালেঞ্জগুলো কঠিন হলেও, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের উদ্যোক্তাদের দূরদৃষ্টি, শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম এবং সরকারের সঠিক নীতিমালার সমন্বয়ে আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব। আমরা আমাদের এই পাওয়ার হাউসকে আরও শক্তিশালী করে তুলব, যা আগামী
প্রজন্মের জন্য এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে।

সাকিফ শামীম

ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ল্যাবএইড গ্রুপ

Link copied!