আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “চব্বিশ হলো একাত্তরের ধারাবাহিকতা।”
শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘একাত্তর ও চব্বিশ’ শিরোনামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম লেখেন, “একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা—সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার—পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। যেখানে মুজিববাদ একাত্তরের ভারতের বর্ণনায় জাতির সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেছিল, সেখানে ২০২৪ পুনরুদ্ধার করেছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। এটি ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম—যার প্রেরণা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও সমঅধিকারভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।”
তিনি আরও বলেন, “চব্বিশের পর দেশে জন্ম নিয়েছে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং একটি নতুন প্রজন্ম, যারা এই লড়াইয়ে অংশ নিয়ে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা একাত্তর থেকে অতিক্রম করে পৌঁছেছি চব্বিশে। যারা এখনো একাত্তরের পক্ষে বা বিপক্ষে রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা মূলত দেশকে পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোয় ফেরত নিতে চায়।”
নাহিদ ইসলামের মতে, চব্বিশ থেকে শুরু হওয়া নতুন সূচনার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষাকে ভিত্তি করে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। মুজিববাদসহ সকল ধরনের কর্তৃত্ববাদ ও ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করাই হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব।
তিনি লিখেছেন, “বর্তমান প্রজন্ম একাত্তরকে অতিক্রম করে এসেছে। তারা ‘প্রো-একাত্তর’ বা ‘অ্যান্টি-একাত্তর’ এই দ্বৈততার ভিত্তিতে রাজনীতি মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। একাত্তর থাকবে ইতিহাসের ভিত্তি হিসেবে, সম্মান ও শ্রদ্ধার বিষয় হিসেবে—কিন্তু আর রাজনৈতিক বৈধতার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে নয়। একইভাবে সাতচল্লিশও স্মরণীয় থাকবে, তবে সেটিকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অস্ত্র বানানো যাবে না।”
তার মতে, ইতিহাস নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক অবশ্যই চলবে, তবে তা হবে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে। “এখন রাজনীতি হতে হবে চব্বিশের মূল্যবোধের ভিত্তিতে। যারা আবার একাত্তরে ফিরতে চায়, তারা মূলত চব্বিশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “চব্বিশের অভ্যুত্থান বহু রাজনৈতিক শক্তির জন্য ছিল এক ধরনের প্রায়শ্চিত্ত। কিন্তু সেই প্রায়শ্চিত্ত অর্থহীন হয়ে পড়বে, যদি আবার পুরোনো মতাদর্শিক রাজনীতিতে ফিরে যাওয়া হয়। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই পুরোনো দ্বৈততার রাজনীতি রুখে দেওয়া।”
শেষে তিনি লেখেন, “চব্বিশ কোনো প্রতিশোধের প্ল্যাটফর্ম ছিল না। যারা একে প্রতিশোধের হাতিয়ার বানাতে চায়, তারা চব্বিশের মূল মর্মার্থ বুঝতে পারেনি। এটি জাতীয় ঐক্য ও পুনর্মিলনের ক্ষেত্র। এর চেতনা ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য—যা গড়ে উঠবে ঐকমত্য, সহমর্মিতা ও সম্মিলিত দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে; প্রতিশোধের চক্রে নয়।”
ইএইচ