Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’    

মো. মাসুম বিল্লাহ

এপ্রিল ২৮, ২০২২, ০১:৫৭ পিএম


হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’    

মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ২৬ তারিখ। আজকের দিবাগত রাত বা রমজানের ২৭তম রাত সাধারণভাবে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হিসেবে পরিচিত। এ রাতের এতবেশি মর্যাদার কথা কোনো মানুষ বলেনি। এটি কোরআনুল কারিমের ঘোষণা। মহান আল্লাহ এই রাতকে হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন। রমজানের শেষ দশকে আল্লাহ তাআলা রোজাদার বান্দাকে এ রাতটি দান করেন। এ রাতে দয়াময় প্রভু অসংখ্য ফেরেশতা ও জিবরিল আলাইহিস সালামকে জমিনে পাঠান। এই রাতের ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত বিরাজ করে শান্তি আর শান্তি।

কদর শব্দটি আরবি। ইহার অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এই রাতের অধিক মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে এটাকে মহিমান্বিত রজনী বলা হয়। আবার ভাগ্য অর্থেও শব্দটি প্রয়োগ হয়। তখন অর্থ হবে, এই রাতে মানুষের পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যার মধ্যে মানুষের বয়স, মৃত্যু ও রিজিকসহ সব কিছু রয়েছে।

এই রাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসেও বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এই মাসের শেষ দশকে যেকোন দিন ‘লাইলাতুল কদর’ হতে পারে, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশককে এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি ইবাদতের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং পুরো রাত জাগ্রত থেকে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে অতিবাহিত করতেন। এমনকি তিনি তার পরিবারের সদস্যদেরও ইবাদত করার জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন।

শবে কদরের মর্যাদা

মর্যাদার এ রাত সম্পর্কে কোরআনে একাধিক আয়াতসহ ও একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের বিষয়টি এভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-

 اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ

‘নিশ্চয়ই আমরা কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে; (সুরা কদর : আয়াত ১)

আল্লাহ তাআলা এ রাতে কোরআন নাজিল করেছেন। আর তা রমজান মাসে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেন-

 شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ

'রমজান মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেশতা অহি নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রামজান মাসের একটি রাত। এ রাতটিই ছিল লাইলাতুল কদর। সুরা দুখানে আল্লাহ এ রাতকে বরকতময় বলে ঘোষণা দিয়েছেন-

 وَ الۡکِتٰبِ الۡمُبِیۡنِ - اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ اِنَّا کُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ

'শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের!  নিশ্চয়ই আমরা এটা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী।' (সুরা দুখান : আয়াত ২-৩)

এক হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন, তা সবই রমজান মাসেরই বিভিন্ন তারিখে নাযিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর সহিফাসমূহ রমজানের প্রথম তারিখে নাজিল করেছেন। তাওরাত রমজানের ৬ তারিখে নাজিল করেছেন। যাবুর রমজানের ১২ তারিখে নাজিল করেছেন। ইঞ্জিল রমজানের ১৮ তারিখে এবং কোরআন রমজানের চব্বিশ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর (পঁচিশের রাতে) নাজিল করেছেন।' (মুসনাদে আহমাদ)

কোরআন নাজিলের কারণেই লাইলাতুল কদর অনেক মর্যাদার রাত। আল্লাহ তাআলা সুরা কদরে এ রাত সম্পর্কে প্রশ্ন করেন-

 وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ

'তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ কী?'

এখানে প্রশ্ন করে এই রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব  ব্যক্ত করা হয়েছে। যেন সৃষ্টি এর সুগভীর রহস্য পূর্ণরূপে জানতে সক্ষম নয়। একমাত্র আল্লাহই এ ব্যাপারে পূর্ণরূপ অবগত। এ কারণেই লাইলাতুল কদর তালাশে নবিজী নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

১. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।' (বুখারি)

২. নবিজী আরও বলেছেন, 'তোমরা তা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ কর।' (বুখারি,মুসলিম, তিরমিজি)

৩. যদি লাইলাতুল কদরকে রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রমজানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়, তবে লাইলাতুল কদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদিসসমূহের মধ্যে কোনো বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্য পাওয়া মত।' (ফাতহুল বারি)

لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ۬ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍ

'লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।' (সুরা কদর : আয়াত ৩)

এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। আর হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। উম্মতে মুহাম্মাদির উপর কত বড় আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাকে তার সংক্ষিপ্ত জীবনকালে বেশি সওয়াব অর্জন করার সহজ পন্থা দান করেছেন। মুফাস্‌সিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো।' (মুয়াসসার) এ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বিস্তারিত বলা হয়েছে-

১. রমজান আগমনকালে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'তোমাদের কাছে রমজান আসন্ন। বরকতময় মাস। আল্লাহ এর রোজা ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সে তো যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।' (নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)

২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়াবে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।' (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

লাইলাতুল কদরে বরকত নাজিল

 تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ۚ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍ

সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ নাজিল হয়; তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব (কাজের) সিদ্ধান্ত নিয়ে।' (সুরা কদর : আয়াত ৪)

আয়াতে ‘রূহ’ বলে জিবরিল আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। জিবরিল আলাইহিস সালামসহ ফেরেশতাগণ এই রাতে ঐ সব কাজ আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, যা আল্লাহ এক বছরের জন্য ফায়সালা করে থাকেন। হাদিসে এসেছে-

১. উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'যখন রমজানের শেষ দশক আসত তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার চাদর কষে নিতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।' (বুখারি, মুসলিম)

২. নবিজী দীর্ঘ এক ভাষণ প্রদান করেন এবং উক্ত ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘এই মাসে এমন এক মহিমান্বিত রাত রয়েছে যে রাতের মাহাত্ম্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “রমজান মাসে এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।‘ (নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদ)

৩. 'লাইলাতুল কদরের রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশি অবতরণ করেন যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।' (মুসনাদে আহমাদ)

পবিত্র কুরআনুল কারিমে এই রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত বা ভাগ্য রজনী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই মাসে সিয়াম সাধনাসহ যতপ্রকারের ইবাদত করার চেষ্টা আমরা করেছি, তার ভুল-ত্রুটি থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে মহান আল্লাহর দরবারে কবুল করানোর আরজি পেশ করার এটিই একমাত্র নির্ধারিত রাত।

سَلٰمٌ ۟ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ

'শান্তিময় সে রাত, ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।' (সুরা কদর : আয়াত ৫)

'সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত।' (তাবারি)

এ রাতে কোনো প্রকার অমঙ্গল নেই। শুধু ‘শান্তিময়’। মুমিন এই রাতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে। এ রাতে ফেরেশতাগণ ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে সালাম পেশ করেন। কিংবা ফেরেশতাগণ আপোসে একে অপরকে সালাম দিয়ে থাকেন।

শবে কদরের ইবাদত

এই রাতে বিভিন্ন প্রকারের ইবাদত রয়েছে। বিখ্যাত আলেমগণ এই রাতে ইবাদতের আগে গোসল করে নতুন পোশাক পরতেন। সুগন্ধি লাগানোকে মুস্তাহাব বলেছেন। বর্ণিত আছে-

১. হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু রমজানের ২৪ তারিখ রাতে গোসল করে নতুন কাপড় পরতেন। শরীরে সুগন্ধি লাগাতেন।

২. প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রমজানের শেষ ১০ রাতের সম্ভাব্য রাতগুলোতে গোসল করে সুগন্ধী ব্যবহার করতেন।

৩. কুফার প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আবু মারইয়াম ইবনে হুবাইশকে ২৬ তারিখ দিনগত ২৭ তারিখ রাতে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

৪. তাছাড়া প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আইয়ুব সাখতিয়ানী রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অনেক তাবেয়িগণ রমজানের শেষ দশরাতের যেকোন একরাত লাইলাতুল কদর হবে মনে করে শেষ দশ রাতের অধিকাংশ রাতে গোসল করে নতুন পোশাক পরতেন করতেন এবং সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। 

সুতারং ইহা থেকে বোঝা গেল, জুমআ এবং ঈদের মত এই রাতে গোসল করে নতুন পোশাক পরে সুগন্ধি মেখে আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উত্তম।

এই রাতের আমলের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো-

১. নফল নামাজ

ফরজ নামাজের পর যত বেশি সম্ভব নফল নামাজ পড়া। কেননা, এই রাতের নফল নামাজের উসিলায় করুণাময় ক্ষমাশীল আল্লাহ বান্দার পূর্ববর্তী অপরাধগুলো মাফ করে দেন। হাদিসে এসেছে-

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় নামাজের মাধ্যমে কদরের রাত কাটাবেন, তার আগের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।‘ (বুখারি)

২. কোরআন তেলাওয়াত

মহিমান্বিত রাতের অন্যতম আমল হলো কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশ রাতে এমনভাবে তারতিল সহকারে কোরআন তেলাওয়াত করতেন যে, রহমত বা দয়া সংক্রান্ত কোনো আয়াত এলে তিনি আল্লাহর কাছে (তা) চাওয়া ছাড়া পরের আয়াতে যেতেন না। আর আজাব বা শাস্তি সংক্রান্ত আয়াত এলে তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা ছাড়া পরের আয়াত তেলাওয়াত করতেন না এবং প্রত্যেক আয়াত তেলাওয়াতের সময় গভীরভাবে চিন্তা করতেন।

হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্য কেউ একরাতে কোরআনুল কারিমের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে কী অক্ষম? প্রতি-উত্তরে বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কে এ কাজ করতে সক্ষম হবে? এই উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাছ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।' (মুসনাদ তায়ালাসি)

৩. দোয়া

দোয়া এই রাতের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহের মধ্য অন্যতম।হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা লাইলাতুল কদরের আমল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।' (নাসাঈ)

জিকির এই মহিমান্বিত রজনীর অন্যতম একটি আমল। কারণ, জিকির হলো বান্দা কর্তৃক আল্লাহর মহত্বের ঘোষণার অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহর বিশেষ ফেরেশতাগণ যমিনের মধ্য জিকিরের মজলিস তালাশে মগ্ন থাকেন এবং কোথাও জিকিরের মজলিস পেলে সেখানে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেষ্টনী দিয়ে রাখেন; মজলিস শেষান্তে আসমানে আরোহন করে মহান আল্লাহর নিকট জিকিরকারী বান্দাদের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

তাই জিকিরের মাধ্যমে শবে কদরে বান্দা এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-

‘আল্লাহর ভ্রাম্যমাণ বিশেষ (রিজার্ভ) কিছু ফেরেশতা রয়েছে। তারা শুধু বান্দার জিকিরের মজলিসসমূহ অনুসন্ধান করে বেড়ায়। তাঁরা যখন জিকিরের কোন মজলিস পায় তখন সেখানে জিকিরকারী বান্দাদের সাথে বসে যায়। তারা একে অপরকে পাখা দিয়ে বিস্তার করে এমনভাবে বেষ্টন করে রাখে যাতে তাদের ও আসমানের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানও পূর্ণ হয়ে যায়। জিকিরের মজলিস যখন শেষ হয়, তখন তারা আসমানে আরোহণ করে। আল্লাহ তাদের কোথায় থেকে ফিরেছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা জমিনে অবস্থানকারী আপনার এমন একদল বান্দাদের নিকট থেকে এসেছি যারা আপনার জিকির করে এবং আপনার কাছে তাদের কাঙ্ক্ষি বস্তুর প্রার্থনা করে । তখন আল্লাহ বলেন: আমার বান্দারা আমার কাছে কি চায়? ফেরেশতারা উত্তর দিয়ে বলেন, তারা আপনার কাছে আপনার বেহেশত প্রার্থনা করে। আল্লাহ বলেন, তারা কি বেহেশত দেখেছে? ফেরেশতারা বলেন, না; তারা দেখেননি। আল্লাহ বলেন, তারা যদি আমার বেহেশত দেখত তাহলে কী করত? তারা বলেন, তাহলে তারা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত। তিনি বলেন, কিসের থেকে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত? তারা বলেন, হে আমাদের প্রভু! জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেন, আমার বান্দারা কী জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না; তারা দেখেননি। তিনি বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে কী করত? তারা বলেন, তাহলে তারা আপনার কাছে মাগফেরাত কামনা করত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি আমার ঐ জিকিরকারী বান্দাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তারা যা আমার কাছে চেয়েছিল আমি তা তাদের দান করলাম।' (মুসলিম)

সুতারং মুসলিম উম্মাহর জীবনে রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। এই রাতেই মহান আল্লাহ তাআলা তার বান্দার পরবর্তী বছরের ভাগ্য ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করেন। বান্দাকে ক্ষমা করেন। বান্দার যে কোনো ইবাদত ও ভালো কাজের প্রতিদান হাজার মাসের সমান দান করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদর পাওয়ার তাওফিক দান করুন। এ রাতের মর্যাদা, সম্মান, ফজিলত, বরকত ও প্রতিদান দান করুন। আমিন।

আমারসংবাদ/এমএস  

Link copied!