ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

যে কারণে টুইটার কিনলেন ইলন মাস্ক

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

এপ্রিল ২৬, ২০২২, ০৩:১৮ পিএম

যে কারণে টুইটার কিনলেন ইলন মাস্ক

প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত নাম ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিও তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়, বিশেষ করে টুইটারে। সেখানে ৮ কোটি ৪২ লাখের বেশি অনুসারী তাঁর। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। ফেসবুকের বিরুদ্ধে রীতিমতো নাখোশ তিনি।

বিশেষ করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলো নিয়ে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলো শক্তিশালী করা, টুইটারকে আরও বেশি উদার, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টুইটারকে কিনে নিলেন ইলন মাস্ক।

প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মাস্ক বরাবরই ‘ঠোঁটকাটা’ বা স্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত। সময়–সুযোগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে দু-একটি কথা শোনাতে ভোলেন না তিনি। প্রযুক্তি বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল, ফেসবুককে টক্কর দিতে ইলন মাস্ক হয়তো নতুন কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আনবেন। তবে টুইটারে তাঁর ‘খামখেয়ালি’ পোস্ট থেকে অনেকেই আবার ভিন্ন ধারণাও পোষণ করতেন। তবে বরাবরই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী মাস্ক গতকাল সোমবার সেই টুইটারে লাভ চিহ্ন দিয়ে ‘ইয়েস’ কথাটি লিখলেন, তখন আর কারও বুঝতে বাকি নেই, টুইটারের মালিক এখন কে!

বিবিসি জানিয়েছে, ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কাছে টুইটার বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর পরিচালনা পরিষদ। বেশ কিছুদিন কথা–চালাচালির পর গতকাল সোমবার এক বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, ইলন মাস্ক কোন উদ্দেশ্যে টুইটার কিনলেন, আর এ নিয়ে তিনি কোন পথে হাঁটবেন? এ ব্যাপারে অবশ্য তিনি আগেভাগেই সব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন।

সবার আগে বলেছেন, তিনি রাজনীতির বাইরে থাকতে চান। তবে তিনি এ কথায় কতটা অটল থাকতে পারবেন, তার ওপর চোখ রাখতে হবে। কারণ, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার মার্কিন সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি। এদিকে টুইটার কেনার খবরে ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জেফ বেজোস তাঁকে খোঁচা দিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, চীন সরকার কি এবার টুইটার থেকে বাড়তি সুবিধা পাবে? মাস্ক অবশ্য এর কোনো জবাব দেননি।

বিবিসির খবরে আরও বলা হয়েছে, কিছুদিন আগে টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তখন থেকেই গুঞ্জন ছিল, তিনি পুরো টুইটার কিনে নেবেন। এবার সেই গুঞ্জন সত্যি হলো। মাস্ক টুইটারের পূর্ণাঙ্গ মালিকানা কিনে নিতে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ নিয়ে টুইটারের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মাস্কের বৈঠক হয়। যদিও টুইটারের পর্ষদ এর আগে মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

টুইটার বিক্রির খবরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ইতিমধ্যে ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৬২ ডলারে। তবে ইলন মাস্ক শেয়ারপ্রতি ৫৪ দশমিক ২০ ডলার দিতে চেয়েছেন। টুইটার কেনার বিষয়টির সূত্রপাত হয় এপ্রিলের শুরুর দিকে। মাস্ক প্রথমে টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনেন। রীতিমাফিক তখন তাঁকে পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ১৪ এপ্রিল মাস্ক হঠাৎই পুরো টুইটার কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অমিত সম্ভাবনা আছে, তার অর্গল খুলে দিতে চান তিনি।

মাস্ক কিছুদিন আগে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, টুইটারের আরও উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এটি বাক্‌স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্তিমূলক এলাকা হওয়া উচিত। তিনি নিজের সাড়ে আট কোটি অনুসারীর উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, টুইটারে এডিট বাটন বা সম্পাদনার সুযোগ রাখা উচিত কি না। উত্তরে ৭৪ শতাংশ মানুষ বলেন, ‘হ্যাঁ, রাখা উচিত।’

এখন মাস্কের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে কে টুইটার পরিচালনা করবেন, তা পরিষ্কার নয়। কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুসারে তিনি টেসলার প্রধান নির্বাহীর পাশাপাশি ‘টেকনোকিং’। এ ছাড়া একাধারে তিনি প্রধান নির্বাহী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং রকেট ও মহাকাশযান সংস্থা স্পেসএক্সের চেয়ারম্যান। মাস্ক আরও বেশ কয়েকটি ব্যবসা ও স্টার্টআপের সঙ্গে জড়িত। এখন টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ পরাগ আগরওয়াল। টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির সমর্থনে গত নভেম্বরে তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেই সময় ডরসি বলেছিলেন, ‘টুইটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে পরাগের ওপর আমার আস্থা গভীর। আমি তাঁর দক্ষতা, সহৃদয়তা ও আত্মার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এখন তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার সময়।’

মাস্ক ইতিমধ্যে টুইটারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। প্রস্তাবপত্রে তিনি টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেলরকে বলেছেন, ‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষে আমার আস্থা নেই।’

টুইটারের প্রধান নির্বাহী অবশ্য আগেভাগেই বলেছেন, কী ঘটতে চলেছে, তা নিয়ে তাঁদের এখনো কোনো ধারণা নেই। ইলন মাস্কই ঠিক করবেন, কোন পথে চলবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে তিনি চাকরি খোয়ালে ৪৪ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থ পাবেন।

এদিকে বিবিসি তাদের এক বিশ্লেষণে বলেছে, টুইটারের নিয়ন্ত্রণ পেতে বেশ আগ্রহ ছিল মাস্কের মধ্যে। এর কারণ তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, একে ভালোবাসেন তিনি। তাঁর টুইটারে তিনি প্রচুর বিতর্কিত, কখনো কখনো বিপর্যয়মূলক টুইট করার রেকর্ড আছে। একবার টুইট করে টেসলার শেয়ারে ধস নামিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া টুইট নিয়ে তাঁকে মানহানির মামলার মুখেও পড়তে হয়েছে। তবে তিনি কি–বোর্ড ছাড়েননি।

অনেকেই ভাবতে পারেন, ১৬ বছর বয়সী একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব বিশেষ কিছু। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফেসবুকের তুলনায় এর ব্যবসায়িক প্রসার ও সাফল্য ততটা নেই। তাই ৪৪ বিলিয়ন অর্থের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বেই ছিল এর পরিচালনা বোর্ড। তবে ইলন মাস্ক টুইটার কেনার আগেই বলেন, এর যে অসাধারণ সম্ভাবনা আছে, তার পূর্ণ রূপ দেখতে চান তিনি। টুইটার থেকে তিনি অর্থ পকেটে তুলতে চান না। কারণ, ইতিমধ্যে তাঁর পকেটে অনেক অর্থ রয়েছে। তাঁর আগ্রহের ক্ষেত্রটা অন্যখানে। তিনি এখানে আরও বেশি বাক্‌স্বাধীনতা দিতে চান।

কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে এর কনটেন্টের জন্য দায়ভার নিতে বলছে। এ জন্য কঠোর নীতিমালাও তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ, সহিংসতা ছড়ানো ও ঘৃণ্য বক্তব্যের পোস্ট ঠেকানোর মতো বিষয়ে এসব মাধ্যমকে কঠোর হতে বলছে। ইলন মাস্কের টুইটার কেনার খবরে ইতিমধ্যে সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করেছে।

বিবিসি বলছে, টুইটারের মূল ব্যবসার মডেল হচ্ছে বিজ্ঞাপনভিত্তিক। মাস্ক তা বদলে ফেলতে চান। তাঁর আগ্রহ সাবস্ক্রিপশন–ভিত্তিক ব্যবসায়। তাঁর দাবি, অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা যায় বিনা মূল্যে। কিন্তু তিনি অর্থের বিনিময়ে এ সেবা দেবেন। টুইটার ব্যবহারকারীরা তাঁদের তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে না দিতে চাইলে তার জন্য অর্থ খরচ করতে হবে। তবে মাস্কের এই ব্যবসার ধারণাটি একধরনের বাজিই বলা যেতে পারে। এ ছাড়া মাস্কের পছন্দ ক্রিপটোকারেন্সি। তিনি হয়তো বিটকয়েনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনকে সামনে আনতে পারেন এর মাধ্যমে।

ইলন মাস্ক নিজেও একটা ব্র্যান্ড। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা তিনি। পেপ্যাল, টেসলার মতো প্রতিষ্ঠান তাঁর হাত ধরে এসেছে। তাঁর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব অন্যদের থেকে তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। তিনি সব সময় প্রথা ভেঙে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। এ কারণেই গত জানুয়ারিতে টুইটারের পরিচালনা বোর্ডে যেতে অসম্মতি জানান তিনি। তিনি দায়িত্বের বাঁধনে বাঁধা পড়তে চাননি। ইলন মাস্কের বড় শক্তি হচ্ছে তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তরা। অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন। একে কাজে লাগাতে পারেন তিনি।

ইলন মাস্ক ঝানু ব্যবসায়ী হলেও টুইটার অধিগ্রহণের কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। একজন আগ্রাসী ব্যবসায়ীর মতো তাঁকে প্রস্তাব দিতে হয়েছে। সে প্রস্তাব এমনই ছিল যে তাতে কোনো দর-কষাকষি বা আপসের সুযোগ ছিল না। বিবিসি আরও বলছে, একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে আরেক ব্যবসায়ী কিনে নিচ্ছেন। এটা কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ নয়। তাই এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে খুব বেশি বাধা আসবে না। তবে ৩০ কোটি টুইটার ব্যবহারকারীর জন্য ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্ল্যাটফর্মটি কেমন হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

টুইটার ব্যবহারকারীরা আশা করতে পারেন, ইলন মাস্কের অধীন এটি আরও উদার হবে। অন্তত তাঁর প্রতিশ্রুতি যদি অটল থাকে, তবে টুইটারকে আরও উন্মুক্ত দেখা যাবে।

ফলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার তাঁর অ্যাকাউন্ট ফেরত পেতে পারে। বর্তমানে টুইটার থেকে নিষিদ্ধ ট্রাম্প। এ প্ল্যাটফর্মে তুমুল জনপ্রিয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ হওয়ার পর ট্রুথ সোশ্যাল নামে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খোলেন। তবে তাতে সফল হতে পারেননি তিনি। টুইটারে ফিরতে পারলে ট্রাম্প খুশিই হবেন।

তবে টুইটার ব্যবহারকারীরা পুরো বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন, তার সামষ্টিক চিত্র এখনই পাওয়া কঠিন। টুইটার ব্যবহারকারীরা একে ভালো চোখে দেখবেন, নাকি টুইটার ছেড়ে যাবেন, তা হয়তো অচিরেই দেখা যেতে শুরু করবে। আর সবকিছুই নির্ভর করছে ইলন মাস্কের সিদ্ধান্তের ওপর।

আমারসংবাদ/আর  এইচ

Link copied!