ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

মামলা খরচে নিঃস্ব বিচারপ্রার্থী

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ৮, ২০২২, ০২:০০ এএম

মামলা খরচে নিঃস্ব বিচারপ্রার্থী
  • লঘুদণ্ডের মামলা চলে ৩৫ বছর
  • ব্যয় মেটাতে বিক্রি করতে হচ্ছে ভিটেমাটি, জমি-জিরাতও
  • ভূমি মামলার সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই
  • অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন ও রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্বহীনতাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা

আব্দুস সোবহান। রাজশাহীর বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে হাট ইজারা নিলামের নামে ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৯৮১ সালে তার নামে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন ব্যুরো। ওই মামলায় সোবহানের পাঁচ বছর সাজা হয়। তবে রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন আব্দুস সোবহান। আপিল নং-১৮৬/১৯৮৮। দীর্ঘদিন মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০০১ সালে মারা যান সোবহান। আপিলে দুদককে পক্ষভুক্ত করায় মামলা আটকে যায়। 

ফলে ওই মামলা উচ্চ আদালতে এতদিন শুনানিই হয়নি। ফলে দীর্ঘ ৩৫ বছরেও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে আসামিপক্ষ। আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড ঘাড়ে নিয়েই মারা যান আসামি সোবহান। পরে দুদক এই মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে শুনানিতে অংশ নেয়। 

শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে এ মামলায় হেরে যায় দুদক। খালাস দেয়া হয় আসামি আব্দুস সোবহানকে। ৮১ সালের মামলা নিষ্পত্তি হয় ২০২২ সালে। শুধু সোবহানের মামলাই নয়, দেশের আদালতগুলোতে মামলার পাহাড় জমে আছে। অধিকাংশ মামলা চলছে যুগের পর যুগ। কোনো কোনো মামলা ৪০ বছরেও নিষ্পত্তি হচ্ছে না।  নানা চেষ্টার পরও কোনোভাবেই বিচারে দীর্ঘসূত্রতা কমানো যাচ্ছে না। মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে সীমাহীন খরচে হাবুডুবু খাওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। অনেক সংসারই ধ্বংস হয়ে যায় মামলায় জড়িয়ে। 

ঘরের সোনা-গয়না বিক্রি করে মামলা চালানো, শখের জিনিস বিক্রি করে মামলা চালানোর ঘটনাও ঘটে। এছাড়া ভূমি-সংক্রান্ত মামলার পেছনে যুগের পর যুগও পার করেছেন দেশের লাখ লাখ মানুষ। আইনজীবীর ফি, বিভিন্ন নথির সই, মুহুরি, নকল সংগ্রহ, যাতায়াত, খাবার ও আনুষাঙ্গিক খাতে সীমাহীন খরচ মেটাতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রির ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। 

তবে বিচারপ্রার্থী নিঃস্ব হলেও অর্থ-বিত্তে ফুলে-ফেঁপে উঠছেন আদালতকেন্দ্রিক পেশাজীবী শ্রেণি। কেউ কেউ গড়ছেন আলিশান অট্টালিকাও। মামলার নথি দেখা, হাজিরা দেয়া, ওকালতনামায় সই করা, জামিননামা দেয়া, জামিনের শুনানি করা, মামলার নকল তোলাসহ মামলা-সংক্রান্ত যেকোনো কাজে ‘বখশিশ’ বা ‘খরচাপাতি’র নামে বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি পয়সা। 

কম এগিয়ে নন এক শ্রেণির আইনজীবী এবং তাদের সহায়করা। এমনকী মাঝেমধ্যে লঘুদণ্ডের মামলা নিষ্পত্তিতেও কেটে যায় যুগের পর যুগ। মামলা শেষ করতে আদালতে হাজিরা দিয়ে ক্লান্ত হন বিচারপ্রার্থীরা। অনেকে হাজিরা খরচ ও মামলার ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে বিক্রি করেন জমি-জিরাতও। তবুও মামলা শেষ হয় না। 

নিষ্পত্তিতে নিযুক্ত আইনজীবীরও নেই তোড়জোড়। মামলা জিইয়ে রেখেই হাজিরাপ্রতি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা— এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে তদন্ত, চার্জশিট দাখিলে গাফিলতি ও সময়মতো সাক্ষী হাজির না হওয়াই মামলা নিষ্পত্তির মূল বাধা, এমনটিই জানান আইনজীবীরা।

আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচারপ্রার্থীর মনে সুবিচার পাওয়ার ভরসা নেই। ঘাটে ঘাটে টাকা ঢালতে হয়। টাকা আর প্রভাবের জোরে সবলতর আসামিকে রেহাই পেতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে আদালতের বাইরে আপস এবং তা নিয়ে বাণিজ্যের একটা ধারা তৈরি হয়ে গেছে। 

বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও অর্থ নষ্ট এড়াতে হলে প্রথমে বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে হবে। দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে পারলে বিচারপ্রার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে। আর দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া অথবা মামলা ঝুলে যাওয়ার বড় কারণ সাক্ষীর গরহাজিরা। আইনত আদালতে সাক্ষী হাজির নিশ্চিত করবেন রাষ্ট্রপক্ষ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে এক্ষেত্রে তাদের চরম উদাসিনতা লক্ষ্য করা যায়। 

আইনজীবীরা বলেন, সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সাক্ষী হাজির করার উদ্যোগ নেবেন, সময়মতো আসামিকে আদালতে তুলবেন। কিন্তু সেটা পালিত হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার জবাবদিহিতা ও তদারকি নেই। মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। সাক্ষীদের ভালোভাবে বসানো, হাজিরা দ্রুত করানো, সম্মান-সৌজন্য দেখানো দরকার। সরকারি সাক্ষীরা পান, অন্যদেরও যাতায়াত খরচ দেয়া দরকার।

মামলার ক্ষয়-ক্ষতি ও অপচয় : দেশে আদালত ও সার্বিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা খুব একটা নেই। এ নিয়ে গ্রহণযোগ্য জরিপও কখনো হয়নি। বিচারাঙ্গনের অংশ-বিশেষ নিয়ে নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিপর্যায়ে কেউ কেউ নিবন্ধ-প্রবন্ধ গ্রন্থ লিখেছেন। এর মধ্যে একটি বাংলাদেশের ভূমি মামলার।

রাজনৈতিক অর্থনীতি : ‘বিশাল এক জাতীয় অপচয়ের কথকতা’। গ্রন্থটি লেখা অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের। তিনি নিজে এবং ওবায়দুর রহমান ও সেলিম রেজা সেলিম এটি অনুবাদও করেছেন। গ্রন্থের ভূমিকায় দেওয়ানি কিংবা ‘ভূমি মামলার’ ক্ষয়-ক্ষতির কিছুটা ধারণা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রায় ১২ কোটি মানুষ ভূমি মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত। মামলাধীন জমির পরিমাণ ২৩.৫ লাখ একর। যা মোট জমির এক-চতুর্থাংশ। 

ভোগান্তি বছরে প্রায় দুই কোটি ৭০ লাখ বছরের সমতুল্য। মামলা মোকাবিলার জন্য ব্যয়িত অর্থের মোট পরিমাণ দেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ব্যয়ের চেয়ে বেশি। মামলায় জর্জরিত পরিবারগুলোর সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির মোট পরিমাণ বছরে ১১ দশমিক ৫১৯ কোটি টাকা। মামলাজনিত আকস্মিক খরচের বার্ষিক পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০ ভাগই বিভিন্ন ধরনের ঘুষ। প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। 

ওই বইয়ের ভূমিকায় আরও বলা হয়, ভূমি মামলা-কবলিত পরিবারগুলোর নিঃস্বকরণ ও বঞ্চনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। উভয়পক্ষের জন্যই এক ক্ষতিকর যুদ্ধ। যে যুদ্ধে কোনো পক্ষই জেতে না। এটা বিচার বিভাগ, পুলিশ, ভূমি শাসন ও ব্যবস্থাপনা, উকিল, স্থানীয় প্রভাবশালী, টাউট এবং এদের মতো আরও অনেকেই কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের জন্য জয়-জয়কার পরিস্থিতি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন মামলা চলায় খরচের হিসাব থাকে না। অধিক ব্যয়ের মধ্যে থাকে আইনজীবীদের ফি। আইনজীবীদের কোনো নির্ধারিত ফি নেই। 

কিছু নামকরা আইনজীবীকে কোনো মামলায় শুনানি করতে নেয়া হলে মোটা অঙ্কের ফি দিতে হয়। মামলায় জেতার জন্য বিচারপ্রার্থীরা তাই করেন। আবার ঘুষও প্রচলিত। ঘুষ দেয়ার নাম করেও বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। আদালতের কর্মচারীদেরও দফায় দফায় বখশিশ বা টাকা দিতে হয়। দেশের একটি প্রচলিত কথা, ‘কোর্টের ইটও টাকা খায়’। আদালতে যারা যান তারা এ কথার সত্যতাও খুঁজে পান।” 

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বিচারাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় নতুন নয়। অনেকে মামলা চালিয়ে দরিদ্র হয়ে গেছে কিন্তু মামলার সুরাহা পায়নি। বিচার চাইতে এসে যদি কেউ জটে আটকা পড়ে নিঃস্ব হয়ে যায় তাহলে বিচারকার্যের ওপর অনাস্থা তৈরি হয়। আর কেউ আদালতমুখী হতে চান না। এতে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়। মন্ত্রণালয়ের উচিত বিচারাঙ্গন থেকে দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করে কিভাবে মামলাজট কমিয়ে বিচার ত্বরান্বিত করা যায় তার একটা কার্যকরী সমাধান বের করা।’ 

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক বলেন, ‘দেওয়ানি প্রকৃতির এক মামলা তিন প্রজন্মকে লড়তে দেখেছি। আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীদের নির্ধারিত ফি না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের বেকায়দায় পড়তে হয়। মামলার প্রকারভেদে খরচ হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হলো দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন কার্যকর করে বিচারপ্রার্থীরা যাতে সহজে বিচার পান সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। আইনও সংশোধন করতে হলে তা করতে হবে।

Link copied!