Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

নেতার আমলে ভাসছে ভোটার

আবদুর রহিম

আবদুর রহিম

মে ২৪, ২০২২, ০২:২৪ এএম


নেতার আমলে ভাসছে ভোটার

গামলা পাতিলে শিশু ভাসছে। মরে যাচ্ছে গবাদিপশু। এখনো গ্রাম থেকে গ্রাম পানির নিচে। ফসল ডুবে পচে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। ইটপাথরের বিল্ডিংও ভেসে যাচ্ছে। পাঠদান বন্ধ ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, সাড়ে ৫০০ প্লাবিত, ২০০ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। খাবারের জন্য চলছে হাহাকার। এ দৃশ্যপট সিলেট অঞ্চলে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও ঠেকানো যায়নি ভারতের উজানের পানি।

অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা জলাধার (পানি ধারণের স্থান) ভরাট করে আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এতে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে ডুবে যায় এলাকা।

গত দুই সপ্তাহ সিলেটের মানবিক দৃশ্য দেখে সারা দুনিয়ার মানুষের রক্তক্ষরণ হলেও এখনো ভোটারদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এলাকায় যাননি। কেউ ঢাকায় কেউবা এখনো বিদেশে সময় কাটাচ্ছেন। সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান দেশের বাইরে। তিনি নামমাত্র কিছু ত্রাণ পাঠিয়েছেন বিদেশে বসে। সিলেট-৬ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকায়। তার দাবি, তিনি ভোটারদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব ও সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী এটি ইউ তাজ রহমানকে টকশোতে দেখা গেলেও তিনি এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাননি। গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাম দল এবং ইসলামিক দলের অনেক নেতাকেই বন্যার্তদের পাশে দেখা যায়নি। 

এদিকে সিলেটের ঘরে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃষহ যন্ত্রণার এ সময়েও চিকিৎসাসেবা নিয়ে পাশে নেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মেডিকেল টিম। 

সংগঠনটির সভাপতিদের ভাষ্য, তারা খুব শিগগিরই কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। সেখানে বিশেষ টিম পাঠাবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল এবং অন্যন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেমন শিশু কল্যাণ, যুব কল্যাণ, নারী কল্যাণ, শারীরিক ও মানসিক অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ, রোগীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন কেউ বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের সাময়িক সাহায্য দিতে এগিয়ে আসেনি। দীর্ঘ সময় যারা জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে ভোটারদের। 

অভিযোগ উঠেছে, সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি অর্থবছরে ২০৯ কোটি টাকার কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। আর গত ১২ বছরে এ খাতে খরচ হয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা। তবুও জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। রাজনৈতিক নেতারা নদীতে হাজারো অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে, যার ফলে জমছে পলি, আটকে আছে আবর্জনা। সাতটি নদী এখনো রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের দখলে। এ বছরের বন্যায় শুধু মৎস্য সম্পদে দুই হাজার ১৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্য অনেক কিছুর হিসাব এখনো আসেনি। 

এদিকে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে ৪০০ পাহাড় টিলা নরম হয়ে পড়েছে। মৃত্যু ঝুঁকি থাকলেও এখনো কার্যত উদ্যোগ নেই। রাজনৈতিক নেতাদের আমলের কারণে ভোটারদের আজ এ পরিণতি, সবার মুখে মুখেই এ বাণী।  

দুঃসময়ে মোকাব্বির, নাহিদসহ আড়ালে শীর্ষ নেতারা : সিলেটের মানবিক দৃশ্য দেখছে সারা দেশের মানুষ। সাহায্য করে পাশে থাকছে বিভিন্ন জেলার মানুষ। কিন্তু নিষ্ঠুর আচরণ দেখা গেছে রাজনীতিবিদদের। জনগণের ভোটে যারা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিংবা যাদের ভোটের ভরসায় রাজনেতারা মাঠে আলোচিত রয়েছে এদের অনেকেই সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকেনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান, সিলেট-৬ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব ও সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী এটি ইউ তাজ রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বাম দল এবং ইসলামিক দলের অনেক নেতাকেই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার সংবাদকে বলেন, তিনি খোঁজখবর রাখছেন, সরকারের মাধ্যমে ত্রাণ পাঠাচ্ছেন।

মোকাব্বির খান আমার সংবাদকে বলেন, আমি দেশের বাইরে থাকার কারণে এলাকায় যেতে পারছি না। তবে আমি টেলিফোনে খোঁজ রাখছি। ইউএনওর মাধ্যমে তিন উপজেলায় কিছু ত্রাণ পাঠিয়েছি গতকাল। দলের নেতাকর্মীরা গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি। তবে এলাকার ভোটারদের নিয়ে তার ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সিলেটে ঘরে ঘরে রোগ, স্বাচিপ-ড্যাব অসুস্থদের পাশে নেই : বন্যায় সিলেটের ঘরে ঘরে রোগ। বানভাসিদের চরম সংকট। বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। বিশুদ্ধ পানির সংকট। ঘরে দৃশ্যত জ্বর, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ। অতীতে এমন দৃশ্যপটে রাজনৈতিক দলগুলোর চিকিৎসা সংগঠনকে পাশে দেখা গেলেও এবার সবাই অদৃশ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মেডিকেল টিম এখনো দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ নিয়ে সিলেটের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ চলছে। 

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ আমার সংবাদকে বলেন, নানান রোগে সেখানে যারা অসুস্থ হচ্ছে আমরা তাদের পাশে থাকার জন্য একটা টিম যাওয়ার চিন্তা করছি। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে আমাদের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কোনো স্বেচ্ছাসেবকই সাহায্য করেনি : অতীতে বন্যা, করোনা, কৃষকের ধান কাটায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী বাহিনীকে মাঠে দেখা গেলেও এবার সিলেটের বানভাসিদের পাশে কেউ ছিল না। স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার সিলেটে বন্যাদুর্গতদের দুঃসময়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল এবং অন্যন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেমন শিশু কল্যাণ, যুব কল্যাণ, নারী কল্যাণ, শারীরিক ও মানসিক অসমর্থ ব্যক্তিদের কল্যাণ, রোগীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন কেউ এগিয়ে আসেনি। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল আমার সংবাদকে বলেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দিয়ে একটা টিম পাঠানোর চেষ্টা করছি। তবে আমাদের দলীয় নেতারা সেখানে কাজ করছেন। 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের  সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ আমার সংবাদকে বলেন, যেখানে মানবতা সেখানেই আমরা। করোনা, ধানকাটাসহ সব মানবিক ইস্যুতে আমাদের কেন্দ্রীয় উদ্যোগ থাকে। সিলেটের বিষয়টিও যদি দুর্যোগপর্যায়ে চলে যায় আমাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকবে। আমরা কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দিয়ে সেখানে লোক পাঠাব। আপনারা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে থাকেন তাহলে দেখবেন আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে সেখানে কাজ করছেন। 

চলতি বছরে ২০৯ কোটি, এক দশকে ৮৬৯ কোটি টাকা কাজেই আসেনি : সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি অর্থবছরে ২০৯ কোটি টাকার কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। আর গত ১২ বছরে এ খাতে খরচ হয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা। তবুও জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে জলাবদ্ধতার সংকট আরও বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা আমার সংবাদকে জানিয়েছে, ২০০৯ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েকটি ছড়া খনন করা হয়। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নগরের নালা-নর্দমা প্রশস্ত করা ও নির্মাণের কাজও সিটি কর্তৃপক্ষ করছে। ১২ বছরে এ খাতে কাজ হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার। চলতি বছরে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। নগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, যদি নদী ও ছড়াগুলো পরিকল্পিতভাবে আরও সুগভীর করার পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন হতো, তাহলে নগরের বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ পেত না। নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালগুলো যথাযথ খননের অভাবে পানির ধারণক্ষমতা হারিয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। 

রাজনৈতিক নেতারা নদী দখল করে আবাসনসহ স্থাপনা তৈরি করছে :  রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী প্রভাবশালীরা জলাধার (পানি ধারণের স্থান) ভরাট করে আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এতে পানি পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভরাট, দূষণ ও দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সিলেটের আটটি নদ-নদী। সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ আট উপজেলায় ১১১ ব্যক্তির দখলে রয়েছে বেশির ভাগ নদ-নদী। নদীগুলোর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ফার্মেসি, বস্তি, খাবারের হোটেল, গুদামঘর, রাইস মিল, বাসা, কাঠের দোকান, পোলট্রি ফার্মসহ বেশ কিছু স্থাপনা। নগরের কুশিঘাট, মাছিমপুর, কালিঘাট, তোপখানা, কাজিরবাজার, চাঁদনীঘাট ও কদমতলী এলাকায় ঘুরে সুরমা নদীর এমন চিত্র দেখা গেছে। 

নদীতে হাজারো অবৈধ স্থাপনা, জমছে পলি, আটকে আছে আবর্জনা : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ছড়া সংস্কার করা হয়েছে। ছড়ার পাড় দখল করে হাজারো ব্যক্তি স্থাপনা বানিয়েছেন। অথচ এসব স্থাপনা ঠিকমতো উচ্ছেদ না করে গার্ডওয়াল দিয়ে ছড়াকে আটকে রেখে দখলদারদেরই স্থায়ীভাবে পাকাপোক্ত করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এসব ছড়া-খালও আবর্জনায় ঠাঁসা। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নদীর বুকে পলি জমে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, শহরের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলোও অনুপযোগী। তাছাড়া শহরের যত্রতত্র বৈধ-অবৈধ স্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, এ সব কিছুই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী।

সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত, ২০০ আশ্রয়কেন্দ্র, পাঠদান বন্ধ ৭০০ : সিলেটের এবারের বন্যায় অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ২০০-র মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে জেলার অন্তত সাড়ে ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এক হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে রোববার দুপুর পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে তা জানানো হবে বলে জানা গেছে। 

৪০০ পাহাড়-টিলায় মৃত্যু ঝুঁকি, এখনো কার্যত উদ্যোগ নেই : সিলেট নগর ও সদর উপজেলাসহ জেলার গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। এসব টিলায় ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছে। তবে এর সঠিক তথ্য নেই জেলা প্রশাসকের কাছে। অধিক বৃষ্টিতে পাহাড় নরম হয়ে গেছে, বেশ কিছু জায়গায় ভাঙনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বন্যার মধ্যে গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে মারা গেছেন এক এনজিওকর্মী। গত কয়েক বছরে পাহাড়ধসে ২০ জনের মতো মারা গেছে। বেলার তথ্যমতে, সিলেট নগরী ও সদরে ২০০ টিলা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আরও দুইশর বেশি টিলা আছে। এসব টিলার অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। বন্যা ও অধিক বৃষ্টির কারণে আরও শঙ্কা বাড়ছে। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিলা বা টিলার পাদদেশে বসবাস করছেন তাদের সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ টিলাগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুধু মৎস্য সম্পদে ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি : বন্যায় সিলেটের ১১টি উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দীঘি, হ্যাচারি ও মাছের খামার তলিয়ে গেছে। এতে দুই কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং দুই হাজার ৩০৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে মাছচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। মাছ ভেসে যাওয়া ছাড়াও হয়েছে অবকাঠামোগত ক্ষতি। 

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান,  সিলেট জেলার ১৫ হাজার ১৬৩ জন খামার মালিকের দুই হাজার ১৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। জেলায় মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়। আর এ ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এখনো পানিবন্দিতে লাখো মানুষের দুঃষহ জীবনযাপন : রাত এবং দিনে মানুষ যেন জলে ভাসছে। গ্রামের চারপাশে থইথই পানি। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ডুবে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পানির মধ্যে ভাসছে গ্রামগুলো। কয়েক দিন আগেও যেখানে ধান মাড়াই ও শুকানোর জায়গা করা হয়েছিল, সেখানে এখন পাঁচ থেকে ১০ ফুট পানি। এ চিত্র সিলেট সদর উপজেলার নীলগাঁও, নলকট, কাজিরগাঁও, বনগাঁও এবং নোয়াগাঁও গ্রামসহ আরও বেশকিছু জায়গায়। হাজার হাজার বাসিন্দা দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। 

স্থানীয়রা জানান, দেড় দশক আগেও নলকট ও আশপাশের গ্রামের চারদিকে প্রচুর খাল ও নালা ছিল। অতিবৃষ্টিতে সেসব জলাধার পানি ধারণ করত। এখন সেসব ভরাট করে আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে যেসব বাড়িঘরে বন্যায় তুলনামূলকভাবে কম পানি থাকার কথা, সেখানেও বেশি পানি উঠেছে। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ত্রাণ পাওয়ার তালিকায় যাদের নাম আছে, সেখানে জনপ্রতিনিধিরা স্বজনপ্রীতি করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। প্রয়োজন সত্ত্বেও অনেক দরিদ্র মানুষ কোনো ধরনের ত্রাণ পাননি। খাবারসহ নানা সংকটে পানিবন্দি জীবনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই বলে তিনি আক্ষেপ করেন। 

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিলেট প্রতিনিধি মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত)

Link copied!