ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫
Amar Sangbad

হাজারো পুরুষের নীরব কান্না

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুন ৪, ২০২২, ০১:১৩ এএম

হাজারো পুরুষের নীরব কান্না

দ্রুতই বদলাচ্ছে সমাজ। বদলে যাওয়া সমাজেরই নতুন রূপ পুরুষ নির্যাতন। নির্যাতিত পুরুষের কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, কেউ সামাজিকভাবে নারীদের কাছে হচ্ছেন নির্যাতিত। ঘরে-বাইরে এ ধররের নীরব নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যদিও পুরুষশাসিত বর্তমান সমাজে হরহামেশাই আলোচনায় আসে নারী নির্যাতনের খবর। 

তবে বর্তমান সময়ে প্রশ্ন উঠেছে, জগৎ সংসারে নারীরাই কি শুধু স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছেন? পুরুষরা কি স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছেন না? বিভিন্ন মামলার তথ্য আর বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, নিজ ঘরে প্রতিনিয়তই নির্যাতিত হচ্ছে সমাজের হাজারো পুরুষ। 

চক্ষুলজ্জা আর সংসার টেকানোর কথা ভেবেই দিনের পর দিন বউয়ের নির্যাতন-নিপীড়ন আর হুমকি-ধমকি নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো বলছে, সমাজের হাজারো পুরুষ তার স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন; কিন্তু দেখার কেউ নেই। বলারও উপায় নেই। বিভিন্নমহল থেকে দীর্ঘদিন ধরেই পুরুষ নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নেরও জোর দাবি জানানো হচ্ছে। 

বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বলা চলে, নারীসমাজ পরাধীনতার খোলস ভেঙে, নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। যদিও এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে নিগৃহীত হচ্ছেন। 

এছাড়াও ধর্ষণ, অত্যাচার, যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, তুলনামূলক কম হলেও দেশে নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান থাকলেও নেই পুরুষ নির্যাতনের সঠিক তথ্য। ফলে নারী নির্যাতনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হলেও অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো।  

পুরুষরা কেন নিগৃহীত হচ্ছেন— এমন প্রশ্নে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার বন্ধন আগের চেয়ে অনেকটা হালকা। এছাড়া সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়া, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশ্বায়নের ক্ষতিকর প্রভাব, অবাধ আকাশ সাংস্কৃতিক প্রবাহসহ নানা কারণেই এমনটা ঘটছে। যার চরম পরিণতি হচ্ছে সংসারের ভাঙন ও নির্যাতন। 

পারিবারিক অশান্তি ও সংসার ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সমাজের সব অংশই প্রতিনিয়ত ভুগছেন নানা পারিবারিক যন্ত্রণায়। এক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীর পক্ষে সমাজের অনেকেই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পুরুষশাসিত এ সমাজে পুরুষও যে নির্যাতিত হতে পারে সেটি যেন কারো ভাবনাতেই নেই। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যায় পুরুষ নির্যাতনের করুণ কাহিনী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না পুরুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা, চক্ষুলজ্জা, জেল-পুলিশ আর উল্টো মামলার ভয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর নির্যাতন নীরবে সহ্য করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। পুরুষ চাইলেও নির্যাতনের কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে একজন নারী আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছে করলেই ঘটনা সাজিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে সহজেই নারী নির্যাতনের মামলা বা যৌতুক মামলা দিতে পারছেন।

সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদেও নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইনও রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য। 

কিন্তু আইনগুলো নারীর সুরক্ষার জন্য তৈরি হলেও বর্তমানে এ আইনগুলোকে কতিপয় নারী, পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সামান্য কিছুতেই স্বার্থান্বেষী নারী স্বামীদের নাজেহাল করতে এসব আইনের অপপ্রয়োগ করছেন। অন্যদিকে দেশে ‘পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ’ আইন এখনো সৃষ্টি হয়নি। নেই পুরুষ নির্যাতনবিরোধী ট্রাইব্যুনালও। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কারণে আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগী পুরুষ। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে পারিবারিকভাবে কাবিন করেন সোহেল রানা (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে উঠিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয় তখন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করার আগেই ওই সম্পর্ক গড়ায় আদালতে। অধ্যয়নরত অবস্থায় স্ত্রীর নানা দাবি মেনে নিতে না পারা এবং স্ত্রীর অবাধ্যতার কারণে শ্বশুর বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়ায় কুমিল্লার আদালতে সোহেলের বিরুদ্ধে দেয়া হয় নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনের মামলা। ওই মামলার ঘানি এখনো টানছেন তিনি। 

তিনি বলেন, স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবন শুরুর আগেই যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং একচ্ছত্র বস্ত্রে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগে মামলার আসামি হতে হয় তাকে। এমন ঘটনা দেশে অহরহই ঘটছে। বিশেষ করে যৌতুক আইনের অপপ্রয়োগই সবচেয়ে বেশি।  

আইনজীবীরা বলছেন, যৌতুক আইনের অধিকাংশই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। পারিবারিক যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ঝগড়া হলে সেটি থানা পুলিশে গড়ালে পরিণত হয় যৌতুক মামলায়। কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে অথবা স্ত্রীকে তালাক দিলে অথবা উচ্ছৃঙ্খল স্ত্রীকে শাসন করলে অথবা স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দিলে সেই স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন থানায় বা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০-এর ১১(খ) অথবা যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০-এর ৪ ধারায় একটি মামলা করেন। একজন পুরুষের জীবন অতিষ্ট করার জন্য এই একটি মামলাই যথেষ্ট।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আখতার বলেছেন, ‘বর্তমানে পুরুষরাও নারীর হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন। শুধু ঢাকাতেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ৬০ ভাগ পুরুষ।’ নারীবাদী মানে পুরুষকে অস্বীকার করা না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাবা, ভাই, স্বামী সবাই পুরুষ। তাদেরও দরকার রয়েছে। বরং নারীশিক্ষার প্রসার দরকার এই নিগ্রহ ও নির্যাতনের প্রতিকারের স্বার্থে।’

ঢাকায় এমন ঘটনার অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নামকরা একজন সংগীত শিল্পীকেও সইতে হচ্ছে তার স্ত্রীর মানসিক নির্যাতন। নিজের কণ্ঠে গাওয়া গানের সঙ্গে মডেল করতে গিয়ে স্ত্রীর মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে তাকে। স্ত্রীর বক্তব্য তার গানের মডেলে তাকেই নিতে হবে। অন্য নারীর সাথে মডেল করা চলবে না। এ নিয়ে সংসারে নানা টানাপড়েন সৃষ্টি হচ্ছে বলে বলছেন ভুক্তভোগী সংগীতশিল্পী। 

এছাড়া হোমিও এক চিকিৎসকও তার স্ত্রীর বহুমাত্রিক মানসিক নির্যাতনের শিকার। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে তিনি নিজেই স্ত্রীর হরমনজনিত চিকিৎসাও করিয়েছেন। তাতেও শুধরায়নি। বরং নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ২০২০ সালে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় জমি-জমা লিখে নেয়ার চেষ্টায় কাপড় ব্যবসায়ী স্বামীকে শুধু মানসিকই নয়, শারীরিকভাবেও করেছেন নির্যাতন। এ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত থানায় মামলা করতে হয়েছে স্বামী আহাম্মদ শরীফকে। এর আগের বছর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সদস্য ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলেন আদালতের। 

মামলা পর্যালোচনা করে জানা যায়, স্ত্রী জান্নাতুল স্বামীর কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। দিতে অস্বীকৃতি জানালেই শুরু হয় নানা ধরনের নির্যাতন। লোকলজ্জার ভয়ে সবকিছু নীরবে সহ্য করেও নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন ওই পুলিশ সদস্য। এমন হাজারো ঘটনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে। বেশিরভাগই অজানা থেকে যাচ্ছে পুরুষদের চক্ষুলজ্জা আর আইনি সংকটের কারণে। 

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে কিছু কিছু ঘটনা আঁচ করা যায় সহজেই। গত রোববার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম ফরাজী নামের বিবাহিত একজন। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘স্ত্রী আর ইস্ত্রি হলো আপন দুই বোন। তাদের একজনের চাপে জামা সোজা; আরেকজনের চাপে জামাই সোজা’।
 

Link copied!