ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

এক টুকরো উষ্ণতার খোঁজে

মাহতাব আজমাঈন রিয়াদ

মাহতাব আজমাঈন রিয়াদ

নভেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৬:২৬ পিএম

এক টুকরো উষ্ণতার খোঁজে
রাসেল ও আমিনার ছবি

ঢাকা শহরে ইতোমধ্যেই শীতের ফিনকে বাতাস হিম করে দিচ্ছে জনজীবনকে। ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ এর প্রভাবে বেলা ফুরাবার পরপরই যেন ঠান্ডার প্রকোপ কয়েকগুণ বেড়ে যায় ইদানিং। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেই দিনরাত্রী যাপন করে, এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। নয় বছর বয়সী রাসেল তার ছোট বোন আমেনাকে নিয়ে মায়ের সাথে কমলাপুর স্টেশনে থাকা সেই মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম। খুব সকালে ট্রেনের বিকট শব্দেই ঘুম ভাঙে ওদের। কাউকে জাগিয়ে দিতে হয়না। কখনো কখনো ভোর হওয়ার আগে আসা ট্রেনগুলোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম পায় না।

পরিবারের সাথে থাকা শিশুগুলোর মতো ওদের সকাল ব্রাশ করে টেবিলে সাজানো ব্রেকফাস্ট দিয়ে শুরু হয়না। মা সকালে উঠে রোজ কাজের সন্ধানে কিংবা খাবারের সন্ধানে ওদের রেখে চলে যান। স্টেশনে থাকে বলে বাসা বাড়ির কাজ কেউ দেয়না। শেষমেশ কিছু বাসি খাবার নিয়ে ফিরতে পারেন। কিন্তু, সেই বাসি খাবার আসতে আসতে কোনো কোনো দিন রাতও হয়ে যায়।

খাবার নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই রাসেল আর আমেনার। এর ওর থেকে চেয়ে নিয়ে কিংবা কোনো যাত্রীর ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট নিয়ে দৌড়ে ওদের খাবারের একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যায়। স্তব্ধ দুপুরে মাঝে মাঝে ঘুম পেলে স্টেশনের ফাঁকা কোনো এক কোণায় ঘুমিয়ে পড়ে। স্ট্রেশনে থাকা ওদের বয়সী অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে দিনের বেলা বেশ হেসে খেলেই সময় কাটে দুজনের।

রাতের শেষ ট্রেনটা ছেড়ে গেলে প্ল্যাটফর্ম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। তখন ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওদের ঘুমানোর নির্ধারিত জায়গায় ওরা চলে আসে। ওদের খুঁজে বেড়ানোর বালাই নেই ওদের মায়ের। গরমের দিনগুলোতে রাতের বেলায় ঘুমাতে খুব একটা সমস্যা হয়না। যত বিপাক বাধে এই শীতের সময়গুলোতে। শীতে দিনের বেলা চলার মতো একটা সোয়েটার আছে আমিনার, কিন্তু রাসেলের যে ওই ছেঁড়া হাফপ্যান্ট আর হাফ গেঞ্জিটাই সম্বল। কেনার মতো সামর্থ্য নেই । আর স্টেশনের আশপাশে দুই একটা পুরানো কাপড় পেলেও সেটা রাসেলের গায়ের মাপের চেয়ে অনেক ছোট হয়।

গত কয়েকদিনের শীতে বিকালের পর থেকে হাফ গেঞ্জিটার ভেতরে দুই হাত ঢুকিয়েও কোনোভাবেই যেন গায়ের কাঁপুনি থামানো যাচ্ছে না। রাতের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ। শীতের সকালগুলো ভালো গেলেও, রাতগুলো মোটেও ভালো যায় না ওদের। প্ল্যাটফর্মের ঢালাই করা বেঞ্চগুলো যেন বরফের একেকটা টুকরো হয়ে থাকে। ওর উপরে গা মেলে দিলেই যেন রাসেলের হাফ গেঞ্জিটা ভেদ করে বরফের টুকরো প্রবেশ করে। আমেনার সোয়েটার গায়ে থাকলেও যেন গায়ের শীত যায় না।

ওদের মায়ের কেমন অনুভূতি হয় এটা ওরা শুনবে শুনবে করে আর শোনা হয়ে ওঠে না। সারা বছর ঠান্ডা, অসুখ লেগে থাকলেও এগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপের বিলাসিতা করার সময় ওদের নেই। গতবছর শীতে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে হুট করে মাঝরাতে অনেকগুলো ফ্ল্যাশলাইট আর ক্যামেরাসহ কয়েকজন লোক এসে নাকি বেশ কয়েকবার সোয়েটার আর কম্বল দিয়ে গেছেন। উনারা আসলে শুধু ১ আর ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়েই ছবি তুলে যান। ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্ম অবধি যাওয়ার কষ্ট উনারা করেন না।

একদিন রাসেল সাহস করে ওইসময় ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়েছিলো। ওখানকার কয়েকজন ওকে চিনতে পেরে প্রায় মেরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর থেকে রাসেলের একটাই ইচ্ছে, একদিন শুধু ওদের প্ল্যাটফর্মে আসুক কেউ কম্বল দিতে, ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাউকে তখন আশপাশে দেখলে রক্ষা থাকবে না ওদের । সেই শীত পেরিয়ে এই শীত অবধি চলে এলো। তাদের ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কেউ কম্বল নিয়ে এলোনা। এবার শীতেও রাসেলের অপেক্ষা সেই স্বপ্নের রাতের, যে রাতে হুট করে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভদ্রলোকেরা সোজা ঢুকে যাবেন। সাথে ছবি তোলার ক্যামেরা আর আলোর ঝলকানি।

রাসেল আমেনা আর মাকে নিয়ে লাইনে সবার আগে দাঁড়িয়ে কম্বল, সোয়েটার নিবে। তারপর সতর্ক থাকবে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে কেউ আসে কি না। ভদ্রলোকেরা চলে গেলে জমিদারের মতো ওরা তিনজন তিনটা কম্বলের নিচে ঘুমিয়ে যাবে। স্বপ্নের কম্বলের গরমেই হয়তো শীতের এবারের রাতগুলোও কেটে যাবে ওদের। তবুও কেউ হয়তো কষ্ট করে ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্ম অবধি রাসেলদের কাছে যাবে না ওদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, নটরডেম কলেজ, ঢাকা

Link copied!