Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন

ফায়ার সার্ভিসের অগ্রগতি ও আধুনিকায়নের প্ল্যানিং মাস্টার

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ০১:০০ এএম


ফায়ার সার্ভিসের অগ্রগতি ও আধুনিকায়নের প্ল্যানিং মাস্টার

দেশে প্রাকৃতিক কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রথম সাড়াদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। দুর্জয় সাহস আর দৃঢ়প্রত্যয়ে গতি, সেবা ও ত্যাগের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি কর্মী সর্বদাই মানবসেবায় নিয়োজিত থেকে দেশজুড়ে সুনামের সাথে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সুশৃঙ্খল বিশাল কর্মী বাহিনীর এই সংস্থার সার্বিক অগ্রগতি ও আধুনিকায়নের নেতৃত্বে রয়েছেন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

দায়িত্ব গ্রহণের ১০০তম দিন ইতোমধ্যেই অতিক্রম করেছেন তিনি। এই ১০০ দিনে অতীতের কোনো মহাপরিচালক যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেননি বা করেননি, সেসব পরিকল্পনাই গ্রহণসহ বাস্তবায়নও শুরু করেছেন তিনি। সংস্থার প্রতিটি সদস্যের কাছেই ইতোমধ্যে প্ল্যানিং মাস্টার হিসেবেও পেয়েছেন সুখ্যাতি। যোগদানের পরই ফায়ার সার্ভিসের আগের অন্য কোনো মহাপরিচালক যেটা করেননি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সেটাই করেছেন।

দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি প্রথমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এবং পরের সপ্তাহেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মানসিকভাবে তিনি এই দীক্ষায় দীক্ষিত যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে হয়ত আমরা স্বাধীন হতাম না। স্বাধীন না হলে আজকে আমরা যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের চেয়ারে বসেছি সেখানে কোনো পাকিস্তানি বসত। আমরা হয়ত বসতে পারতাম না। আপনারা যে সুবিধা পেতেন সেটা হয়ত পেতেন না। কাজেই সবার যেন এ মহান মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধা থাকে। মুজিবীয় চেতনা-আদর্শ যাতে ফায়ার ফাইটারদের মধ্যেও থাকে সেজন্য তিনি ফায়ার ফাইটারদেরও সবসময় উজ্জীবিত করে রাখেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। সেখানে এতদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো উপাদান ছিল না। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরই সেখানে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু কর্নার। বঙ্গবন্ধুর জীবনী, আদর্শ সম্বলিত বিভিন্ন বই, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ছবিও কর্নারের বিভিন্নস্থানে সাঁটানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসে নতুন যারা যোগ দেবেন তারা যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জানতে, বুঝতে এবং শিখতে পারেন সে সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। শুধু আদর্শগত দৃঢ়তাই নয়, সংস্থার সার্বিক অগ্রগতি ও আধুনিকায়নেও দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। তারই ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব গ্রহণ করেই সংস্থার মাঠপর্যায়ের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী করতে দরবার করে জানতে চেয়েছেন ডিপার্টমেন্টের কোথায় কি কাজ করা প্রয়োজন। আগের অন্য মহাপরিচালকদের কেউ এটা না করলেও তিনি দরবারে নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের সবার কথা শুনেছেন। তিনি দু-এক মাস পরপর দরবারে বসবেন এবং নতুন নতুন চাহিদাও শুনতে চান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে যারা মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে এসেছেন তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখা গেছে পরিচালক পর্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া হলেও সব স্তরের স্টাফদের সঙ্গে বোঝাপড়ার ঘাটতি ছিল। বর্তমান ডিজি শুরুতেই সবার সঙ্গে বোঝাপড়া করেই কার্যক্রম শুরু করেছেন। দরবারে তিনি সংস্থার সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যার কথা জানতে চেয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে সরকারি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় আরও ভালোভাবে পৌঁছে দেয়াসহ সেবার মানোন্নয়নের অন্তরায় জানতে চেয়েছেন।

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলেন, দায়িত্বগ্রহণের পরই তিনি বহুতল ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় সব বিভাগীয় কার্যালয়ে টার্ন টেবল লেডারের (টিটিএল) বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন। এতে সব বিভাগীয় কার্যালয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। এটি তার দায়িত্বগ্রহণের পর বিভাগীয় পর্যায়ে সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নের অন্যতম একটি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান ডিজি যোগদানের পরপরই একটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। যেটি ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনারের দুর্ঘটনা। বিএম কন্টেইনারের দুর্ঘটনা গোটা ফায়ার সার্ভিসের জন্যও স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং সবচেয়ে বেশি ফায়ার ফাইটারের প্রাণহানির ঘটনাও।

এর আগে এক দুর্ঘটনায় এতো ফায়ার ফাইটারের প্রাণহানি ঘটেনি। সেই রাতে দুর্ঘটনার খবর শুনেই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরদিন সকাল ৭টায় পৌঁছান এবং পৌনে ৮টায় প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি। নতুন যোগদানের কারণে এতটা জানার কথা নয়, তারপরও তিনি পুরো ঘটনা মোকাবিলায় দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যখনই শুনছেন ফায়ার সার্ভিসের অনেক লোক হতাহত হয়েছেন, তখনই তিনি সেনাবাহিনী প্রধানের সহায়তা চান। সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলে তিনি ফায়ার ফাইটারদের সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এর আগে কোনো ঘটনায় এত ফায়ার ফাইটারকে একসাথে সিএমএইচে চিকিৎসা দিতে হয়নি।

এছাড়াও দুইজন ফায়ার ফাইটারের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়লে তখনও তিনি সেনাপ্রধানের কাছ থেকে হেলিকপ্টার চেয়ে নেন। সেই হেলিকপ্টারে করেই দুই সদস্যকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় এবং সময়মতো উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এটাও দেশের ইতিহাসে প্রথম যে, কোনো দুর্ঘটনায় হতাহত ফায়ার ফাইটারদের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এজন্য সেনাবাহিনীর প্রতি তিনি সবসময় কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়াও বিএম কনটেইনারে নিহত ১৩ জন ফায়ার ফাইটারকে (১০ জন শনাক্ত, তিনজন এখনো ডিএনএ টেস্টের জন্য অপেক্ষমাণ) রাষ্ট্রীয় খেতাব দেয়ার জন্যও সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন তিনি।

জানা গেছে, সুরক্ষা সেবা বিভাগের মিটিংয়ে অধিদপ্তরের এই প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। নিয়মানুযায়ী চলতি বছর রাষ্ট্রীয় খেতাবের প্রস্তাব দেয়া হলে সেটা পরবর্তী বছর বাস্তবায়ন হয়। তবে বিএম কনটেইনারে নিহত ১৩ জনের ক্ষেত্রে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় পদক যেন এ বছরই দেয়া হয় সে প্রস্তাবও তিনি করেছেন। বর্তমানে তা আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১০০ দিনে তার মাস্টারপ্ল্যানিংয়ের প্রথম অংশেই রয়েছে বর্তমান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে বাসস্থানসহ একাধিক সংকট সমাধানে অধিদপ্তর স্থানান্তরের পরিকল্পনা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিরপুরে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সে স্থানান্তর হবে অধিদপ্তর। জাইকার সহযোগিতায় সেখানে দেশের প্রথম সিসমিক অর্থাৎ ভূমিকম্প প্রতিরোধক বিশেষায়িত ভবন নির্মাণ হবে। ডিজি, ডিরেক্টর, অ্যাডমিন সবাই বিশেষায়িত ওই ভবনে স্থানান্তর হবেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা। একইভাবে দুই বছর পর বিশেষায়িত ওই ভবন নির্মাণ শেষে অধিদপ্তর স্থানান্তরকালে মিরপুরের ট্রেনিং কমপ্লেক্সটিও স্থানান্তর করা হবে পূর্বাচলে সংস্থাটির মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে। বর্তমানে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ইতোমধ্যে সেখানে অবকাঠামোগত কার্যক্রমও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। আপাতত নতুন রিক্রুট হওয়া ফায়ার ফাইটারদের প্রশিক্ষণসহ সব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও সেখানেই হবে। ১৯৮১ সালে সারা দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল ১০০টি। অধিদপ্তরে সে সময়কার ওয়ার্কশপ দিয়েই বর্তমানে ৪৯১টি স্টেশনের বাড়তি গাড়ি মেরামতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো সচল থাকতে হয় সার্বক্ষণিক (২৪ী৭)। বাড়তি গাড়ির চাপ সামাল দিয়ে মেরামত কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত করতেই ওয়ার্কশপ স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্বাচলের ২৮ নম্বর সেক্টরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি জমির একটিতে স্থানান্তর হবে ওয়ার্কশপ।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ওয়ার্কশপ না থাকায় স্থানান্তর শেষে বর্তমান অধিদপ্তর ও ওয়াকর্শপটিই হবে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও বিভাগীয় ওয়ার্কশপ।ফায়ার সার্ভিসের অফিসার্স আবাসন ব্যবস্থা করতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশেও দুই একর ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ফায়ার সার্ভিসের জমি নিয়েও তৈরি করেছেন মাস্টারপ্ল্যান। দেশের স্বনামধন্য স্থপতি দ্বারা সেখানকার মাস্টারপ্ল্যান ইতোমধ্যে প্রণয়নও করছেন। বর্তমানে সেটির ডিপিপি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের ওই একাডেমিতেই হবে ফায়ার সার্ভিসের স্থায়ী ট্রেনিং কমপ্লেক্স। পূর্বাচলের ট্রেনিং কমপ্লেক্সটি স্থায়ী হবে মুন্সীগঞ্জের একাডেমিতে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি ১০ তলা ভবন ভেঙে চার তলা ভবন করার প্রশিক্ষণ আমাদের নেই। ট্রেনিং সিমুলেটর নেই, নেই ট্রেনিং ভিলেজ। ট্রেনিংয়ের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো দরকার। যেমন, জাহাজে আগুন লাগলে নেভানোর ক্ষেত্রে জাহাজে কি কি জিনিস থাকে সেক্ষেত্রেও ফায়ার কর্মীরা প্রশিক্ষিত নন। ওই একাডেমিতে সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। অর্থাৎ ফায়ার ফাইটারদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের জন্য যেকোনো ধরনের ফাইটিংয়ের ক্ষেত্রে (স্ট্রাকচারাল ফায়ার ফাইটিং, কেমিক্যাল ফায়ার ফাইটিং, শিপ ফায়ার ফাইটিং) প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ফায়ার সার্ভিসের যত ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনারে যে সমস্যার কারণে ১৩ জন ফায়ার ফাইটার মারা যায়, সে সমস্যায় যেন আগে থেকে প্রশিক্ষিত থাকে সে ব্যবস্থা থাকবে। এটাকে বলে সিমুলেটর। সিমুলেটরও থাকবে সেখানে। ফলে ওইটা হবে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

মহাপরিচালকের প্রত্যাশা— সেখানে ফাইটাররা যেমন প্রশিক্ষিত হবে, তেমনি ভবিষ্যতে বাইরের দেশের লোকরাও এসে প্রশিক্ষণ নেবে। দায়িত্বগ্রহণের পর গোটা ফায়ার সার্ভিস নিয়ে মহাপরিচালকের গৃহীত সবকটি পরিকল্পনার মধ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি।

এছাড়াও আরও দুটি ভবন নির্মাণ করতে চান তিনি। একটি পূর্বাচলে (১২ তলা), আরেকটি মিরপুরে (১২ তলা)। দুটি ভবনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং স্টাফদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণের জন্য। এসব পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই তিনি গ্রহণ করেছেন। প্রজেক্ট প্ল্যানও মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। আর ১০ তলা ভবন নির্মাণ করবেন ছয়টি। ছয়টি ভবনই ফায়ার সার্ভিসের স্টাফদের জন্য। যাতে দুর্ঘটনার সময় তাৎক্ষণিক তাদের পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিসের স্টাফদের বদলিজনিত কারণে পারিবারিক সংকট সমাধানেও এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। দায়িত্বগ্রহণের পর অতিক্রান্ত ১০০ দিনে গৃহীত সব পরিকল্পনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে, স্থায়ী ট্রেনিং একাডেমি হওয়ার আগেই ফায়ার সার্ভিসের এমপ্লয়িদের নিয়ে সাময়িকভাবে একটি বিশেষায়িত টিম গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে তার। যে টিম বিএম কনটেইনারের মতো বিশেষ দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় কাজ করবে। সে জন্য মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। বিশেষায়িত এই টিমকে বলা হয় সিবিআরএনই (কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল, নিউক্লিয়ার এবং এক্সক্লসিভ ইউনিট)। বিশেষায়িত এই ইউনিট বিশেষ দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কাজ করবে।

ফায়ার সার্ভিসের প্রত্যাশা, অগ্নিদুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগে সাধারণ মানুষ যেন সচেতন হয়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করে। এ বিষয়ে যেন শিখে এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এসব এতদিন বিভিন্ন সভা সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হলেও বর্তমান মহাপরিচালক অনলাইনে ব্যাপকহারে প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করারও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ শুধু ফায়ার সার্ভিসকেই ডাকবে এ ধারণায় না থেকে ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দুর্ঘটনা রোধে, দুর্ঘটনা যেন না ঘটে অথবা দুর্ঘটনা যেন কম ঘটে- এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে আগে থেকেই সচেতন করার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।

ইতোমধ্যে টিভিসি নির্মাণ, নাটক নির্মাণের কার্যক্রমও হাতে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সারা দেশে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন সংখ্যা ৪৯১টি। বিভাগীয় ছাড়াও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের স্টেশনগুলোর যে জমি সেগুলোর কাগজপত্র কোথায় কীভাবে রয়েছে বা নামজারির তথ্যেরও কোনো হদিস ছিল না। তিনি যোগদানের পরই এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। এসবের কাজ ইতোমধ্যে মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় সম্পন্নও হয়েছে।

সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, এমনও দেখা গেছে, কোনো একটি স্টেশনের যিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তার নামে নামজারি হয়েছে এবং প্রকল্প শেষে তিনি চলেও গেছেন। পরবর্তীতে প্রয়োজন সাপেক্ষে ফায়ার সার্ভিস জানতে পারে ওই জমি প্রকল্প বাস্তবায়নকারীর নামে নামজারি করা। ফায়ার সার্ভিস যদি কখনো এ জমি হস্তান্তর করতে চায়, তখন পারবে না। এ জন্য তিনি আদেশ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সমস্ত জায়গা মহাপলিচালকের নামে নামজারি হবে। যেন কখনো সে জায়গায় উন্নয়ন কিংবা স্থানান্তর করতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসকে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে না হয়। সারা দেশে এই কাজ চলছে। এটি বিরাট কর্মযজ্ঞ এবং ফায়ার সার্ভিসের জায়গাজমির স্থায়িত্ব প্রদান করবে।

Link copied!