Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস

উদাসীনতায় বাড়ছে রোগী

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মে ৮, ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম


উদাসীনতায় বাড়ছে রোগী
  • দেশে প্রতি ১৪ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত
  • রোগটির প্রতিকারে প্রয়োজন বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসায় রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব

—অধ্যাপক ডা. মনজুর মোরশেদ
উপদেষ্টা, থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতাল

একটি বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানির সহকারী পরিচালক আবেদিন হোসেন। রাজধানীর থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে তিন বছর বয়সি শিশুসন্তান আরিফকে নিয়ে প্রতি মাসে একবার আসেন রক্ত দিতে। তার সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলে, জন্মের ছয় মাস পর আমার ছেলের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। পরবর্তীতে আমি ও আমার স্ত্রী রক্ত পরীক্ষা করালে আমাদের থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত হয়। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করালে এভাবে আমার সন্তানকে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাতে হতো না। ছেলের চিকিৎসা বাবদ প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে আট হাজার টাকা। এসব বলতেই তিনি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। 

এ অবস্থা শুধু আবেদিন হোসেনেরই নয়। ব্যয়বহুল থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে এমনই নিরুপায় অবস্থা প্রতিটি পরিবারের। থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। সাধারণত একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি অপর একজন বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাদের প্রতিটি সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। তবে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণায় মনে করা হয় রক্তের গ্রুপের সঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি প্রাণের ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতিকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে সকলের জন্য ন্যায়সংগত ও সহজলভ্য থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা’। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় সাত শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ এই রোগ বয়ে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে, আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতি বছর সাত হাজার শিশু বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। শঙ্কার বিষয় হলো, এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ শিশু জন্মের এক থেকে দুবছরের মধ্যে ধরা পড়ে। এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন ইনফেকশন, শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ অন্যতম। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী, অন্যটি এর বাহক। যারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, তাদের প্রতি মাসেই এক-দুবার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং তারা সারা জীবন এ রোগ বহন করে বেড়ান। এদের অনেকেই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করে  চিকিৎসা করা হলে এদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন জটিল ও ব্যয়বহুল এবং  অপ্রতুল। 

অপরদিকে যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তারা এই রোগ বহন করেন এবং আরেকজন বাহককে বিয়ে করলে তাদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একজন বাহক নন— তাকে বিয়ে করেন, তবে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগী বৃদ্ধি ও প্রতিকার নিয়ে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মনজুর মোরশেদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উদাসীনতা। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করালে এ রোগ থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচানো যায়। আমাদের দেশে আইন করে বিয়ের পূর্বে রক্ত পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা করা হলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। থ্যালাসেমিয়া থেকে বাঁচতে হলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।  কোনো কারণে কেউ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। অনেক সময় দীর্ঘ চিকিৎসায় থ্যালাসেমিয়া রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
 

Link copied!