Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

ঝুঁকির মুখে দেশের শিল্প খাত

মো. মাসুম বিল্লাহ

অক্টোবর ৫, ২০২২, ০১:২৯ এএম


ঝুঁকির মুখে দেশের শিল্প খাত

দেশের শিল্প খাতে আমদানি বেড়েই চলেছে। আর রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশের শিল্প খাত দীর্ঘদিনেও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না। বরং বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কারণ আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে গেলেই বড় সংকটে পড়ে শিল্প খাত। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের শিল্প খাতে তেমনই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ বৈদেশিক বাণিজ্যের রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয়ের ব্যবধান বেড়েই চলেছে।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ছয় বছরে ওই খাতে ব্যবধান দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। মোট আমদানির মধ্যে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালে ব্যয় হচ্ছে ৫৭ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা। জ্বালানি তেল আমদানিতে ৯ শতাংশ। তাছাড়া ভোগ্যপণ্যে ১২ শতাংশ, বিলাসী পণ্যে ৭ শতাংশ। অন্যান্য খাতের আমদানি ব্যয় হচ্ছে ১৮ শতাংশ। তার মধ্যে শিল্প খাতের পণ্যও রয়েছে। অর্থনীতিবিদ এবং শিল্প খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্রমাগত দেশে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বাড়লেও শিল্পায়ন ও রপ্তানি বাড়ছে না। বরং বাস্তবে তার উলটো ঘটছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি দ্বিগুণ বাড়ছে। মূলত আমদানির বিকল্প পণ্য দেশে চাহিদা অনুযায়ী এবং মানসম্পন্নভাবে উৎপাদন হচ্ছে না বলেই আমদানি বাড়ছে।  দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠছে আমদানির নামে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে। বিশেষ করে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালেই বেশি অর্থ পাচার হচ্ছে। মূলত আমদানি-রপ্তানি দুভাবেই দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে।

এরফলে শিল্পের নামে আমদানি বাড়লেও শিল্প খাতে তার প্রতিফলন ঘটছে না। বাড়ছে না রপ্তানিও। ‘৮০-র দশক থেকেই দেশে শিল্পায়ন শুরু হয়েছে। সে তুলনায় গত চল্লিশ বছরে দেশে শিল্প খাত একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানোর কথা থাকলেও তা হয়নি। তাছাড়া আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি না হলেও দুটোর মধ্যকার ব্যবধান কমার কথা থাকলেও তা না হয়ে বরং বেড়েছে। এখন আমদানিজনিত কারণে দেশ বড় ঝুঁকিতে পড়েছে।

সূত্র জানায়, আমদানিজনিত কারণে বর্তমানে দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে। কারণ চড়া দামে বেশি পণ্য আমদানি করায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। কিন্তু আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে না। তাতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। আর আমদানি ব্যয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। তার প্রভাবে বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা পুরো অর্থনীতিকে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে এখন আমদানিনির্ভর শিল্পগুলো চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আনতে পারছে না। ফলে তাদের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়ে সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।

সূত্র আরও জানায়, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশ থেকে রপ্তানি হয়েছিল তিন হাজার ৮৯ কোটি ডলার আর আমদানি হয়েছিল চার হাজার ২৫ কোটি ডলার। তাতে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল ৯৩৬ কোটি ডলার। আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ কোটি ডলারের আমদানি হলে রপ্তানি হয়েছিল ৭০ কোটি ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল তিন হাজার ৩৩০ কোটি ডলার আর আমদানি হয়েছিল ৫০৫২ কোটি ডলার। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল এক হাজার ৭২৩ কোটি ডলার। ওই বছর আমদানি-রপ্তানির ব্যবধান বেড়ে ৫১ দশমিক ৭৪ শতাংশে ওঠে। অর্থাৎ ওই বছরে ১০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হলে রপ্তানি হয়েছিল ৪৮ কোটি ডলার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩৯৬০ কোটি ডলার আর আমদানি হয়েছিল ৫৫৪৪ কোটি ডলার। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়েছিল এক হাজার ৫৮৪ কোটি ডলার। ফলে ব্যবধান ছিল ৩৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হলে রপ্তানি হয়েছিল ৬০ কোটি ডলার।

তাছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল তিন হাজার ২৮৩ কোটি ডলার আর আমদানি হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬৯ কোটি ডলার। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়েছিল এক হাজার ৭৮৬ কোটি ডলার। দুই খাতের ব্যবধান ছিল ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩৬৯০ কোটি ডলার আর আমদানি হয়েছিল ছয় হাজার ৬৮ কোটি ডলার। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়েছিল দুই হাজার ৩৭৮ কোটি ডলার। তাতে দুই খাতে ব্যবধান বেড়ে ৬৪ দশমিক ৪৩ শতাংশে দাঁড়ায়।

২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল চার হাজার ৯২৫ কোটি ডলার আর আমদানি হয়েছিল আট হাজার ২৫০ কোটি ডলার। রপ্তানির চেয়ে আমদানি রেকর্ড পরিমাণে বেশি বা বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল তিন হাজার ৩২৫ কোটি ডলার। দুই খাতে ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।

অর্থাৎ ১০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হলে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ৩২ কোটি ডলার। আমদানির চেয়ে রপ্তানি কম হলে স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে। গত ছয় বছরে বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় ঠিকভাবে দেশে আসছে কি-না তাও দেখা প্রয়োজন। কারণ দুই খাতে ভারসাম্য না হলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি টেকসই হবে না।

ভারত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে কম। কিন্তু বাংলাদেশে এ খাতে খরচ অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, করোনার সময় থেকে রপ্তানি আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দেউলিয়া হয়ে গেছে। বাজার ধরে রাখতে অর্থ না পেলেও রপ্তানি করতে হচ্ছে। আমদানির একটি বড় অংশ হচ্ছে জ্বালানি, ভোগ্য ও বিলাসী পণ্য। জ্বালানির বড় অংশই ভোগে ব্যবহূত হচ্ছে। দেশে পাঁচতারা হোটেলের সংখ্যা বাড়ছে। সেগুলোর প্রায় সব সেবাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

Link copied!