ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
Amar Sangbad
সাত বছর পর রহস্য উন্মোচন

জামাইকে ফাঁসাতে মেয়েকে খুন করেন বাবা

মো. মাসুম বিল্লাহ

জানুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০১:৫৭ এএম

জামাইকে ফাঁসাতে মেয়েকে খুন করেন বাবা

ঘটনা ২০১২ সালের। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গড়িয়ার বাসিন্দা পারুল আক্তার (১৫) ও নাছির উদ্দীন সরকার (১৯) একে-অপরকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেন। তবে পারুলের পরিবার এমন প্রেমের বিয়ে মানতে পারেনি। বিয়ের পরে অল্প বয়সি এই দুজন আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে ভাড়া বাড়িতে সংসার পাতেন। সাংসারিক জীবনে শুরু হয় টানাপড়েন। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা পারুল বাবা আব্দুল কুদ্দুস খাঁকে মোবাইলে ফোনে বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য চান। কুদ্দুস মেয়েকে সুন্দর ভবিষ্যৎ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাসে স্বামী নাছিরকে ছেড়ে যেতে বলেন। সুযোগ বুঝে পারুল গত ২০১৫ সালে ১৮ জুলাই স্বামীকে না জানিয়ে চলে যান বাবার কাছে। পরদিন বাবা কুদ্দুস মেয়ে নিয়ে যান ভূঞাপুরে তার বন্ধু মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডলের বাড়িতে। সেখান থেকে মোকা মণ্ডল ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং কিছুদিন তার স্বামী নাছিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় তুলসীগঙ্গা নদীর পাশে একটি নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে পারুলকে বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর বন্ধু মোকা মণ্ডলের সহযোগিতায় পারুলের পরনের ওড়না দুই টুকরা করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তারপর গলাটিপে হত্যা করে।

এরপর মেয়ে জামাতা নাছির ও তার পরিবারকে ফাঁসাতে একটি গুমের মামলা করেন পারুলের বাবা। মামলার তদন্তে কালিহাতী থানা-পুলিশ প্রেমের বিয়ের সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু ভুক্তভোগী পারুলকে না পাওয়ায় এবং ঘটনাস্থল কালিহাতী থানার আওতাধীন। না হওয়ায় এই মামলা তাদের এখতিয়ারের বাইরে বলে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে পারুলের বাবা কুদ্দুসের বারবার নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডি সদস্যরা তদন্তে নামেন। তারাও কোনো কুলকিনারা করতে না পেরে একই প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। এরপরও কোনো এক অজানা কারণে পারুলের বাবা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। সবশেষে আদালত জুডিশিয়াল তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারেন।

এবার কুদ্দুস খাঁ আগের তদন্তের রেফারেন্সসহ মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে। অভিযোগ করা হয় নাছির উদ্দীন যৌতুকের জন্য তার মেয়ে পারুলকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। গত ডিসেম্বরে দায়ের করা এই মামলার তদন্ত ভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই)। তদন্তে নেমে একটি মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে এগোতে থাকে সংস্থাটি। প্রথমে গফরগাঁও বর্তমান কর্মস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পারুলের স্বামী নাছিরকে। তারপর ডাকা হয়। পারুলের পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে। নাছিরসহ পারুলের পরিবারের সবাই অসংলগ্ন তথ্য দিতে থাকেন। দুই পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পারুলের বাবা তার বন্ধু মোকা মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে পারুলকে নিজ হাতে হত্যার কথা স্বীকার করেন পিবিআইয়ের কাছে। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এই হত্যা রহস্য উন্মোচনের পর গতকাল রোববার সকালে ধানমন্ডির পিবিআই হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার আদালতে কুদ্দুসের দেয়া জবানবন্দি তুলে ধরে বলেন, ‍‍`তারা তিনজন (পারুল, মোকা ও কুদ্দুস) রাতের অন্ধকারে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে থাকে। মেয়ের ইতোপূর্বের কার্যকলাপের অপমান বোধ থেকে রাগে বাবা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর মেয়ের ওড়না দুই টুকরা করে কুদ্দস পারুলের হাত এবং মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডল পা বাঁধে। এরপর কুদ্দুস নিজের গামছা দিয়ে পারুলের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে ও গলাটিপে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে পারুলের মরদেহ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে আসেন তারা দুজন। 
নিজ হাতে মেয়েকে খুন করার পরও নানা পর্যায়ে আইনি লড়াই কেন করলেন পারুলের বাবা- এমন প্রশ্নের জবাবে পিবিআই প্রধান কুদ্দুসকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, এটি একটি অনার কিলিংয়ের ঘটনা। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা কুদ্দুস ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন। তাই শাস্তি হিসেবে মেয়েকে খুন করেছেন। কিন্তু এই সম্মানহানির পেছনে তার মেয়ের সঙ্গে জামাতা নাছিরেরও সমান হাত আছে। তাই মেয়ের মতো জামাতা নাছিরকেও শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন কুদ্দুস। তিনি (কুদ্দুস) চেয়েছেন এই খুনের মামলায় নাছিরের যেন ফাঁসি হয়। তাহলেই তার সম্মানহানির প্রতিশোধ সম্পূর্ণ হবে। এই জন্যই নিজে মেয়েকে খুন করেও বিভিন্ন পর্যায়ে আইনি লড়াই করেছেন তিনি।

এখন তাহলে পারুলের স্বামী নাছিরের কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে আমরা গফরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। আশা করি আইনি জটিলতা কাটিয়ে নাছির দ্রুতই মুক্তি পাবেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করায় কুদ্দুস ও তার বন্ধু মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

Link copied!