Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

অনিশ্চয়তায় নির্বাচন কমিশন

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

মার্চ ২২, ২০২৩, ০২:৩৭ এএম


অনিশ্চয়তায় নির্বাচন কমিশন

ইভিএম ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

—বদিউল আলম মজুমদার

 

ইভিএম ব্যবহারে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি

—নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

 সম্ভাব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই ১৫০ সংসদীয় আসনে তা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না পাওয়ার সংশয়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কমিশন। তবে ইতোপূর্বে ক্রয় করা ইভিএম মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া গেলে মেরামতের পর সচল হওয়া ইভিএমের মাধ্যমে যে কটি আসনে ভোটগ্রহণের সুযোগ রয়েছে ঠিক সে কটি আসনে ভোটগ্রহণ করার চিন্তা করছে কমিশন। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে কি-না, হলেও ঠিক কত আসনে হবে। যদি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না যায় তাহলে ব্যালটের মাধ্যমেই ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটিই জানা গেছে। 

তবে ভোটে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে যে সংলাপের আয়োজন করেছিল তাতে বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। আর যারা অংশ নিয়েছে তারা ইভিএমের পক্ষে ও বিপক্ষে দুদিকেই মত দিয়েছে। এ ইস্যুতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই ইভিএম মেরামতের উদ্যোগ নেয় ইসি। ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কিনেছিল। ক্রয় করা ওই দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪০ হাজার অকেজো। এ ছাড়া বাকি যে এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম রয়েছে তাও মেরামত করা প্রয়োজন। ইসি জানিয়েছে, এসব মেরামত করতে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা খরচ হবে। 

এর আগে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিতর্কের মধ্যেই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন নতুন করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম কিনতে আট হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ইসি। তখন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সে প্রকল্প স্থগিত রাখা হয়। এখন নষ্ট ৪০ হাজার ইভিএম বাদ দিয়ে বাকি এক লাখ ৪০ হাজার ইভিএম ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য ইসি উদ্যোগ নিয়েও তারা এ উদ্যোগে সফল হবে কি-না তার নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি। গত ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে টাকা পাওয়ার সিদ্ধান্ত জানা গেলে ছয় মাস সময় পাওয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম ব্যবহারযোগ্য করা গেলে ৭০ থেকে ৮০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে।

গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান এর সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের। এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম ব্যবহারযোগ্য করতে ইসি প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘হ্যাঁ’ পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ গতকাল ২১ মার্চ এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে গত ২০ মার্চ ইসি আনিছুর রহমান জানান, গত ১৫ মার্চের কমিশন বৈঠকে আমরা অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়ার জন্য বলেছি। এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করা লাগবে। সেটি পাওয়া যাবে কি-না নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি চিঠি দিতে বলেছি। চিঠিটি প্রস্তুত রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিলেও বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে ইসি। গত ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ইভিএম নিয়ে কী হবে না হবে জানি না। 

উই আর ইন ডার্ক (আমরা অন্ধকারে)। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো টাকার নিশ্চয়তা পাইনি। যদি অর্থ বিভাগ টাকার সংস্থান করে তাহলে আমরা ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হবো। অন্যথায় যদি টাকা না পাওয়া যায় তাতেও আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে কী করব। মানে ব্যালটে কত আসনে নির্বাচন করব বা আদৌ ইভিএমে নির্বাচন করব কি-না। কাজেই সবটাই নির্ভর করবে অর্থ প্রাপ্তির ওপর।’ কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত আসতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো একেবারে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসে থাকতে পারব না। আমরা যদি টাকা হাতে পাই...তাতে ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) বলেছে, মেরামত করার জন্য তাদের ছয় মাস সময় দিতে হবে। কাজেই আমরা তো মনে করি এখনই হাই টাইম।’

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক প্রফেসর ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বহুবার বলেছি, এ যন্ত্র দিয়ে জালিয়াতি করা যায়। বেড়ায় ক্ষেত খেতে পারে। এই ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে ব্যাপক জনমত রয়েছে। এরপরও ইসি ইভিএম ব্যবহার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ প্রচেষ্টা নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্টতা প্রমাণ হয়।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেখুন আমরা তো কৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে জাতি হিসেবে পিছিয়ে থাকতে পারি না। ইভিএম নিয়ে ব্যাপক পাইলটিং হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, উপজেলাসহ বিভিন উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে এক ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। ইসি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার ও ইসি এখন সেভাবে এগোচ্ছে না। এখন ক্রয় করা ইভিএমগুলো মেরামত করা হলে ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ব্যবহার করা যাবে হয়তো। 

অর্থাৎ ব্যাপকভাবে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ সম্ভবত থাকছে না। বিরোধী দলগুলোর ভোটে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার যৌক্তিকতা কী— এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটি সরকার শুরু করেছে এ কারণেই হয়তো বিরোধী দলগুলো এর বিরোধিতা করছে।’ প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইসি। যেহেতু তখন তারা ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই সেই কর্মপরিকল্পনায় ইভিএম ব্যবহারে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়ার ওপর জোর দেয়। এ বিষয়ে মত জানতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। সংলাপের পর ইসি জানায়, ২৯টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২টি দল স্পষ্টভাবে ইভিএমের বিরুবস্থান নিয়েছে এবং ১৭টি দলের অবস্থান ইভিএমের পক্ষে। আর ইসির ওপর আস্থা নেই জানিয়ে বিএনপিসহ ৯টি দল আলোচনায় অংশ নেয়নি। ইসি যে ১৭ দলকে ইভিএমের পক্ষে বলে দাবি করেছিল, সেই দলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে ইসি তাদের সঠিক অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেনি।

Link copied!