Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

সংসদের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ ও ২২তম অধিবেশন সমাপ্ত

মো. মাসুম বিল্লাহ

এপ্রিল ১১, ২০২৩, ১২:০৪ পিএম


সংসদের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ ও ২২তম অধিবেশন সমাপ্ত

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ ও ২২তম অধিবেশন গতকাল সমাপ্ত হয়েছে। অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল এ অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।  

এর আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণের অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। গত ৬ এপ্রিল থেকে ৫ কার্যদিবস পর্যন্ত অধিবেশন চলার পর গতকাল জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হয়। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ৭ এপ্রিল সংসদে স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন।

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা কর্তৃক কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাবের (সাধারণ) ওপর ৬৩ জন সংসদ-সদস্য মোট ১০ ঘণ্টা ২৭ মিনিট আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনন্য উপহার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বনন্দিত ও অনন্য সংবিধান প্রণয়ন ও সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।  

স্বাধীনতা লাভের সূচনালগ্নে ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল নির্বাচিত গণপরিষদে গৃহীত হয় বাংলাদেশের সংবিধান আর ৭২ সালের সাময়িক সাংবিধানিক আদেশবলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভের সূচনাতেই সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্র লাভের এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের ৭২-এর সংবিধানকে অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং শ্রেষ্ঠ সংবিধানসমূহের একটি বলে আখ্যায়িত করা হয়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করতে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
তিনি জানান, এবারের অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৫।

এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২০টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৪৪৯টি প্রশ্নসহ মোট ৪৬৯টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে। বিধি-৭১ এ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিস পাওয়া গেছে ৩৬টি। অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য ৮টি সরকারি বিলের নোটিস পাওয়া গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তিনটি রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। স্পিকার বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করে এসে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। অর্থনৈতিক সূচক, জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, নারী ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, দুর্যোগ মোকাবিলা, সামাজিক উন্নয়ন সূচক, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং সফলতার স্বাক্ষর রাখছে।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ তরুণদের অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ। আসুন, আমাদের মাতৃভূমিকে এমনভাবে গড়ে তুলি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সাল নাগাদ সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী, উচ্চ অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সদস্যবৃন্দ অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশা করি।’

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার চেতনার সত্যিকার বাস্তবায়নে স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আসুন জনগণের প্রতিনিধিরূপে আমরা সংসদ সদস্যরা সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করে তুলি। বিশ্বায়নের এই যুগে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে নিত্যনতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে, আসুন সেগুলো উত্তরণে একত্রে কাজ করি।

আমাদের সংবিধানের অঙ্গীকার পূরণে, রাজনীতির ধারাকে সুসংহত করি। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি ও মূল্যবোধ জোরালো করার ক্ষেত্রে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই সংসদ সদস্যদের এ লক্ষ্যে জনগণের মাঝে কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, দেশ ও জাতির অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে এবং আপনাদের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন ও আন্তরিক শুভ কামনা জানাই।’ সংসদ পরিচালনায় সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্পিকার ধন্যবাদ জানান। এরপর স্পিকার অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Link copied!