Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

‘নো’ হরতাল অবরোধ

আবদুর রহিম

জুলাই ৩, ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম


‘নো’ হরতাল অবরোধ
  • জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আসছে এক দফা কর্মসূচির ঘোষণা  
  • রোডমার্চ, অবস্থান ঘেরাও কর্মসূচি সিরিজ আকারে চলবে
  • বড় কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের বিদায়ে খালেদা জিয়ার বার্তা 
  • বিদেশি প্রেসক্রিপশনের বাইরে নয়, সংঘাত এড়াতে সতর্কতা 
  • এবার আন্দোলনে ব্যর্থ হলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে

এক দফাতে এই সরকার চলে যেতে বাধ্য হবে 
—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত এখনই চূড়ান্ত আন্দোলন 
—কর্নেল ড. অলি আহমদ

জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। শান্ত নীতিতে মাঠ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যাবে না তারা। বিদেশিরা বিএনপিকে কড়া সতর্কতা দিয়েছে নির্বাচনি সংঘাত থেকে সতর্ক থাকতে। তবে এক দফার ঘোষণার পর থেকে রোডমার্চ, সমাবেশ, অবস্থান, ঘেরাও কর্মসূচি সিরিজ আকারে চলবে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিই এক দফার মূল বিষয় থাকবে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জুলাই মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে টানা কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জুলাই সিলেটে, ১৭ জুলাই খুলনায় এবং ২২ জুলাই ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করবে বিএনপির তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। আর আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের। ফলে এই কর্মসূচিগুলো শেষ হওয়ার পরই নতুন পর্যায়ের যুগপৎ কর্মসূচির তারিখ দেয়া হবে। তবে আন্দোলন কোনোভাবেই সংঘাতময় হবে না। বিদেশি প্রেসক্রিপশনের বাইরে যাবে না বিএনপি। দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম বলছে, বড় কোনো আন্দোলন হলে অন্য কেউ সুবিধা নিতে পারে এবং বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য দলটি সর্বোচ্ছ সতর্ক থেকে কর্মসূচি চিন্তা করবে।

এদিকে সরকার হটাতে বড় কর্মসূচির পক্ষে বার্তা দিয়েছেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গেও সাক্ষাতেও খালেদা জিয়া জানিয়েছিলেন এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। জনগণকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিদায়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এবার ঈদুল আজহার দিন গত বৃহস্পতিবার রাতে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও  একই নির্দেশনা দেন খালেদা জিয়া। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন সঠিক পথে রয়েছে বলে জানান তিনি। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে দলের নেতাদের তিনি বলেছেন, ঠিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারলে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে। খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনসম্পৃক্ত আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে পারলে সেটিই হবে বড় অর্জন। এ জন্য আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান। সাক্ষাতে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির ছয় সদস্য— জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। 

বিএনপির সিনিয়র নেতা মনে করছেন, এবার আন্দোলনে ব্যর্থ হলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। দ্বাদশ নির্বাচন ২০১৮ বা ২০১৪ এর মতো হবে না। সরকারের অধীনে নির্বাচনে ষড়যন্ত্রে পা না দিতে কড়া নির্দেশনা রয়েছে খালেদা জিয়ার। বিদেশিরা এবার অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর, নির্বাচন সুষ্ঠুই হবে ভিন্ন কিছু ঘটবে। এ জন্য নির্বাচনি প্রস্তুতিও রাখতে হবে বলেও বার্তা পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়া। যাতে শেখ হাসিনা বিহীন যেকোনো ফর্মেটে নির্বাচন হলে অংশগ্রহণে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়। নির্বাচনি চাপ নিশ্চিতে চলতি মাসে চলবে সিরিজ কর্মসূচি। শেষ সপ্তাহে আসবে এক দফার কর্মসূচি। সেখানে প্রায় ৩০টির মতো রাজনৈতিক দল অংশ নেবেন। দলের নীতি নির্ধারণ ফোরাম বলছে, এক দফা ঘোষণায় থাকছে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও বর্তমান সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী  জানান, শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি। তার কথায় রয়েছে বিদ্বেষের শক্তি। এরা দেশের রাজনীতিতে জীবনীশক্তি ও সহমর্মিতার শক্তিকে নিঃশেষ করে ঠেলে দিয়েছে এক ব্যর্থ ও সীমাহীন অপচয়ের দিকে। ওরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিয়ে তৈরি করছে ক্রমবর্ধমান বিনষ্টির পথ। গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক সার্থকতার প্রতি তারা বিদ্বেষপরায়ণ। এ জন্য গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ চাপা দেয়ার জন্য তারা বিগত ১৪ বছর ধরে লাখ মানুষকে কারাবন্দি ও অসংখ্য মৃতদেহ ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত, কোথাও স্তূপিকৃত করে গণতন্ত্রের পথকে করেছে জনশূন্য। জনমানুষের মুক্তির জন্য সরকারের বিদায়ের জন্য মানুষ এখন অপেক্ষা করছে। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে রক্তপিপাসু সরকারের বিদায়ের জন্য আন্দোলনে প্রস্তুত। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা শিগগিরই এক দফা আন্দোলন শুরু করব। এখন তারুণ্যের সমাবেশ হচ্ছে, সামনে আমাদের পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু হবে। আমরা আশা করি, এক দফাতে এই সরকার চলে যেতে বাধ্য হবে। এক দফার আন্দোলনের ধরনও নিঃসন্দেহে গত আন্দোলনগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন হবে এবং জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়বে। আমরা শুরু থেকেই জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনেও জনগণের অনেক বেশি সম্পৃক্ততা আসবে। আমি বিশ্বাস করি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সরকার বাধ্য হবে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। 

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল ড. অলি আহমদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরাও বিএনপির সঙ্গে একমত। এ দেশের জনগণের চিন্তাভাবনার সাথে একমত। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, চূড়ান্ত আন্দোলন এক দফারই আন্দোলন। এক দফার কর্মসূচিতে এলডিপিও রাজপথে থাকবে’। এখনো বিএনপির জোটের সব কর্মসূচিতে আমার দল সারা দেশে রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে।
 

Link copied!