Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

অবরোধেও জনজীবন স্বাভাবিক

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নভেম্বর ১২, ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম


অবরোধেও জনজীবন স্বাভাবিক

সন্ধ্যা-রাতে চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ  

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চতুর্থ দফা সর্বাত্মক অবরোধের গতকাল রোববার ছিল প্রথম দিন। দিনের শুরু থেকেই মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়ি তুলনামূলক কম চললেও রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে গণপরিবহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরে যানজট না হলেও সিগন্যালগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তবে রাস্তায় গাড়ি থাকায় অফিসগামী মানুষদেরও পোহাতে হয়নি দুর্ভোগ। অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যেই নিজ নিজ গন্তব্যে যাতায়াত করতে পেরেছেন তারা। তবে বিএনপি-জামায়াতের ঘোষণা অনুযায়ী, অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা কিংবা ৯টা নাগাদ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। যা চোরাগোপ্তা হামলা হিসেবেই দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া অবরোধের সারা দিনে কোথাও সমর্থকদের ভাঙচুর কিংবা মিছিলের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সিগন্যালে যানবাহনের চাপ সামলাতে হয়েছে।

গতকাল সকাল থেকেই সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, গুলিস্তান, ফার্মগেট, মহাখালী, কমলাপুর, খিলগাঁও রেলগেট, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনের চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের কড়া অবস্থান। বিজিবিও ছিল সর্বোচ্চ তৎপরতায়। যে কারণে কোথাও সুবিধা করতে পারেনি অবরোধ-সমর্থকরা। সাধারণ মানুষের ভাষ্য, দিনের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানের কারণে তারা সুবিধা করতে না পারলেও সন্ধ্যা-রাতে সুযোগ বুঝেই বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে  দিনের চলাচলে যে কারণে তেমন আতঙ্ক নেই গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে। এর আগে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ধারাবাহিক অবরোধে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অ্যাসকর্ট দেয়ার ঘোষণা দেয় র্যাব। র্যাবের অ্যাসকর্টে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যেও স্বস্তি বিরাজ করছে। 

তৃতীয় দফার অবরোধে চট্টগ্রাম থেকে আসা তেলবাহী লরি কনভয় অ্যাসকর্ট দিয়ে রংপুরে অবস্থিত তেলের ডিপোতে পৌঁছেও দেয় র্যাব-১৩। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব বিএনপি-জামায়াতের প্রতি দফায় ডাকা অবরোধে অ্যাসকর্ট দিয়ে যাচ্ছে। যারাই অ্যাসকর্ট চাইবে তাদেরই অ্যাসকর্ট দিতে প্রস্তুত রয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া অবরোধে অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে  সারা দেশে শোডাউন-শান্তি সমাবেশ করছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন। গতকাল উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসেন জুনায়েদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি মতিঝিলের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গেল কয়েক দিনের চেয়ে আজকে রাস্তা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কোনো ঝামেলা দেখিনি আসার পথে। এর আগে অবরোধের অন্য দিনগুলোতে উত্তরা থেকে আমার অফিসে আসতে সময় লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট। তবে আজকে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট লেগেছে। রাস্তায় গাড়ি বেড়েছে, জ্যামও বেড়েছে। তবুও মানুষের মনে আতঙ্ক কাজ করছে বলেও জানান তিনি। 

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে অফিস করেন করেন নাইমুল ইসলাম। গুলিস্তানে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গাউছিয়া থেকে গুলিস্তান আসার পথে আমাদের বাস কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। এরকম অবরোধ থাকলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। গুলিস্তান বাস কাউন্টার এলাকায় গ্লোরি এক্সপ্রেসের ম্যানেজার আলী হোসেন বলেন, শুধু হরতালে এক দিন বাস বন্ধ রেখেছিলাম। এ ছাড়া রাস্তায় গাড়ি কম নামলেও একেবারে বন্ধ রাখিনি। অন্যান্য দিনের মতো আমরা আজও বাস চালাচ্ছি। এর আগের অবরোধেও বাস চালিয়েছি, কোনো দিন কোনো সড়কে বাধা পাইনি। তবে অবরোধ নিয়ে যাত্রীদের মনে একটা আতঙ্ক আছে। যে কারণে কাউন্টারগুলোতে যাত্রী সংখ্যা কম। আর যাত্রী কম থাকার কারণে দূরপাল্লার বাসও কম চলছে। বলাকা পরিবহনের এক হেলপার বলেন, গাজীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে সায়দাবাদ এসেছি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার অবরোধে চারটি ট্রিপ দিতে পারলেও আজ দুটির বেশি পারব না। কারণ আজকে রাস্তায় গাড়ি অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। অবরোধের কোনো প্রভাব তিনি দেখেননি বলে জানান। রাইদা পরিবহনের বাসচালক সুমন বলেন, গতকালের তুলনায় আজ রাস্তায় অনেক গাড়ি। তবে গাড়ি চালাচ্ছি ঠিকই, মনের আতঙ্ক কমেনি। কখন যে কে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় কে জানে। একটি বাস পুড়লে অনেক ক্ষতি হয়। তারপরও আমরা ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছি। 

উল্লেখ্য ১৮ অক্টোবরের পর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল অনেকটা থমকে যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে অনেক এলাকায়। অবরোধ সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি শোডাউন দেখা যায়। তবে গতকাল রোববার এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত গাড়িতে আগুন দেয়ারও তেমনি কোনো ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক দিনের মতোই শেষ হয় বিএনপি-জামায়াতের চতুর্থ দফায় ডাকা অবরোধের প্রথম দিন।
 

Link copied!