Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

ইডিসিএল এমডি এহসানুল কবির জগলুলের প্রতিনিধিত্ব

ভ্যাকসিনে প্রশংসিত বাংলাদেশ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মে ১৯, ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম


ভ্যাকসিনে প্রশংসিত বাংলাদেশ

• কলেরা টিকায় সফল, বিকাশ ও বিতরণে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত বাংলাদেশ 
• দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে কৌশলগত সহযোগিতা দেবে আইভিআই
• ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দেশ

ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বপরিমণ্ডলে স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার জানান দেবে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনা সর্বজনীন টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুফল পাবে মানুষ
—অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল, বোর্ড অব ট্রাস্টি, আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইডিসিএল

বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন আবিষ্কার, এর বিকাশ ও সরবরাহের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১৯৯৬ সালের ২৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) প্রতিষ্ঠার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রথমদিকে চুক্তিতে যে কটি দেশ স্বাক্ষর করে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে অলাভজনক আন্তঃসরকারি সংস্থা আইভিআই প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ২১ মার্চ চুক্তিটি বাংলাদেশ অনুসমর্থন করে এবং একই বছর জাতিসংঘ চুক্তির অনুসমর্থন প্রাপ্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিটি কার্যকর করা হয়। বর্তমানে সংস্থাটির ৩৯টি সদস্য দেশ রয়েছে এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আইভিআই সদর দপ্তর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত। 

দক্ষিণ এশিয়ার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) বোর্ড অব ট্রাস্টির একমাত্র সদস্য অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল। তিনি ২০১৪ সাল থেকে সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ‘ভ্যাকসিন হিরো’খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছিলেন, মহামারি করোনার আবির্ভাবের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও উৎপাদনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাকসিন নিয়ে অধিকতর গবেষণা ও উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ও মিশন সর্বজনীন টিকা কর্মসূচি সফল করতে গোপালগঞ্জে নির্মাণাধীন রয়েছে এসেনসিয়াল বায়োটেক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার নামের ভ্যাকসিন প্লান্ট। ভ্যাকসিন প্লান্টটির কার্যক্রম শুরু হলে করোনা, ডেঙ্গুসহ ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। প্রকল্প প্রস্তাবনার তথ্যমতে, রিসার্চ সেন্টারে তিনটি মূল ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ভ্যাকসিন, থেরাপিউটিকস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকসের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা সংবলিত একটি ইউনিট। একটি ভ্যাকসিন উৎপাদন ইউনিট এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও ডেভেলপমেন্ট ইউনিট। আগামী তিন অর্থবছর পরই ছয়টি টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। 

যার মধ্যে রয়েছে এইচপিভি, টিসিভি, এমসিভি, ফ্লু ভ্যাকসিন, অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন ও জাপানিজ এনসেপালিটিটিস। আর ২০২৯ সালে টিকার কাঁচামাল উৎপাদন করে টিকার সম্পূর্ণ নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং হবে। এ পর্যায়ে আইপিভি, পেন্টা, টিটি, পিসিভি-১০ এবং কোভিড ও ডেঙ্গুর টিকা উৎপাদন করা হবে। ফলে ভবিষ্যতে যে কোনো মহামারি বা অতিমারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি হবে। আর আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের টিকা রপ্তানিও করা যাবে। একইসঙ্গে দেশের সর্বজনীন টিকা কার্যক্রম (ইপিআই) শক্তিশালী হওয়া ছাড়াও ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে। 

টিকা তৈরির এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে প্রতি বছর ৩০-৪০ লাখ টিকার প্রয়োজন হয়। শুধু জলাতঙ্কের জন্যই লাগে তিন-চার লাখ টিকা। সে হিসাবে সরকারি উদ্যোগে দেশে টিকা তৈরি হলে এটা খুবই সাশ্রয়ী মূল্যের হবে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) বোর্ড অব ট্রাস্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল। আন্তর্জাতিক সংস্থাটিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সফলতা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। বিনামূল্যে ওষুধ ও ভ্যাকসিন পাচ্ছে এখন প্রান্তিক মানুষও। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমি আমাদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে আমরা প্রযুক্তি ও কৌশলগত সহযোগিতা পাব। 

সম্মেলনে আইভিআইয়ের কলেরা ভ্যাকসিনের অভ্যন্তরীণ বিকাশ ও বিতরণসহ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অংশীদারদের সঙ্গে ভ্যাকসিন গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন স্মরণ করা হয়। কলেরা, শিগেলা, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল জাতীয় রোগ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় সাফল্য দেখাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট। আইভিআইয়ের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ রোগমুক্ত বিশ্ব নিশ্চিতকরণে এ কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নততর গবেষণা, ক্লিনিক্যাল বিকাশ ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন তৈরির পথ সুগম করবে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।

 

Link copied!