Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

রাজধানীতে প্রতিবন্ধী দুই বোনের লাশ উদ্ধার

মো. মাসুম বিল্লাহ

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ১৩, ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম


রাজধানীতে প্রতিবন্ধী দুই বোনের লাশ উদ্ধার
  • বয়স ৩০ পেরুলেও তাদের বিয়ে হয়নি
  • দুই বোনই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন
  • মৃত্যুর আগে ৯৯৯-এ দুই বোনের ফোন

রাজধানীর হাজারীবাগের কালিনগর এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুই বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বোনের মরদেহ গলাকাটা অবস্থায় ছিল। গত রোববার গভীর রাতে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের নাম নাসরিন আক্তার (৩০) ও জেসমিন আক্তার (৪৪)। আহত নাসরিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসক  তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বড় বোন জেসমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার মরদেহ গলাকাটা অবস্থায় ছিল। কালুনগরের ওই বাসায় জেসমিন ও নাসরিন ছাড়াও তাদের মা ও ভাই থাকেন। বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। বৃদ্ধা মা অসুস্থ। ভাইয়ের একটি ছোট বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান আছে পাশাপাশি নিজেও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রীর কাজ করেন। তিন ভাইবোনের কেউ বিয়ে করেননি। ভাইয়ের আয়ে সংসার চলত। বড় বোন সাত বছর বয়স থেকে এবং ছোট বোন তিন বছর বয়স থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ। ঘটনার সময় ভাই বাসায় ছিলেন না। তিনি ফিরে এসে দুই বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুই বোনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত দুই বোনের বয়স ৩০ পেরোলেও তাদের বিয়ে হয়নি। জানা যায়, মানসিক অসুস্থতার কারণে তাদের কেউ-ই বিয়ে করেননি। তাদের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপ এলাকায়। তবে সেখানে কোনো জমিজমা ছিল না। ঢাকায় দুই বোন মানুষের সাথে বেশি মিশতেন না। মানসিক প্রতিবন্ধী বোনটি মানুষকে বেশি পছন্দ করত না। 

হাজারীবাগ থানার ওসি আহাদ আলী জানান, রোববার মধ্যরাতে কালুনগর এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাজারীবাগের ওই ফ্ল্যাটে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ওই দুই বোন থাকতেন। ঘটনার সময় তাদের ভাই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিলেন। তার অসুস্থ মা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না। 

ওসি আরও জানান, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বোনই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাদের চিকিৎসাও চলছিল। তাদের বিয়ে হয়নি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, একজনকে হত্যা করে আরেকজন আত্মহত্যা করেছেন। তবে তদন্তের আগে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। 

ওসি আরও জানান, বাসার কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। দুই বোনের ঘরে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে, সেটি ছোট বোন ব্যবহার করতেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ওই ফোন থেকে ১১টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ডায়াল কল আর ৯৯৯ থেকে রিসিভড কলের লগ পাওয়া গেছে। তবে আমরা (থানায়) ৯৯৯ থেকে কোনো ফোন পাইনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। থানায় কেউ মামলাও করেনি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাওন কুমার জানান, লাশ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তারা খুন হয়েছেন নাকি আত্মহত্যা করেছেন তা তদন্ত করে জানা যাবে। নিহতের ভাই নাজির হোসেন বলেন, তার দুই বোন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বড় বোন জেসমিনকে হত্যার পর নাসরিন আত্মহত্যা করে বলে জানান তিনি। তাদের কক্ষে প্রবেশ করে জেসমিনের গলাকাটা লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে ও নাসরিনকে আহত অবস্থায় জীবিত দেখতে পান। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সোয়া ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

পরিবারের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন বোনের দেখাশোনা করতে গিয়ে নিজেও মানসিক রোগীতে পরিণত হন ছোট বোন নাসরিন। ছুরি দিয়ে বড় বোনকে হত্যার পর নিজেও সেই ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আর তার আগে হত্যার এই সংবাদ ট্রিপল নাইনে ফোন করে জানান খোদ নাসরিন। 

পরিবার বলছে, মানসিক রোগী বড় বোন জেসমিনকে দেখাশোনা করত ছোট বোন নাসরিন। এক সময় তিনিও হয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন। নিহতদের ভাইয়ের দাবি, বড় বোনকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে নিজের শরীরেও জখম করে সে। পরিবারের লোকজন বাসায় থাকলেও এ ঘটনায় কিছুই টের পাননি তারা। 

প্রতিবেশীরা জানান, সাত বছর ধরে পরিবারটি এই বাসায় ভাড়া থাকলেও দুই বোনকে তারা দেখেননি কখনোই। ধানমন্ডি জোনে সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু তালেব বলেন, নিহত দুজনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাবে তাদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত ছাড়া কিছু বলতে চাননি তিনি। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, পারিবারিক বিষয় নিয়ে কলহে বোনকে হত্যার পর আরেক বোন আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
 

Link copied!