Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল

সংশয় এখনো কাটেনি

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ১১:৫৮ পিএম


সংশয় এখনো কাটেনি

আমরা সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত জানাতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি কিন্তু এখনো জবাব পাইনি 

—জাপা মহাসচিব

স্বতন্ত্র এমপিরা অন্য দলে যোগ দিলে বিরোধী দলের সদস্য হতে পারবেন, মোর্চা বা জোট করলে জটিলতায় পড়তে পারেন
—নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ  

একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হবে কিনা তা নিয়ে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত মত বা ভিন্নমত শোনা গেলেও এ বিষয়ে জটিলতা কাটেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ সময় যখন রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এবং দলটির মিত্র জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিল তখনই প্রশ্ন ওঠে সংসদের বিরোধী দল হবে কে বা কারা। এই প্রশ্ন আরও জোড়ালো হয় যখন ৭ জানুয়ারি ভোট গণনার পর জাতীয় পার্টির চাইতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রায় ছয়গুণ বেশি আসনে নির্বাচিত হওয়ার খবর আসে। ভোটের পর ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও এ প্রশ্নের এখনো চূড়ান্ত উত্তর মেলেনি। অবশ্য সংসদের বিরোধী দল হতে অনেকটাই আগ্রহী জাতীয় পার্টি। তারা ইতোমধ্যে দলের সংসদীয় দলের একটি সভা করে। ওই সভায় কে বিরোধী দলের নেতা হবেন, উপনেতা হবেন, চিফ হুইপ ও হুইপ হবে তা নির্ধারণ করে রেখেছে। 

গত রোববার বিকেলে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে স্পিকারকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু সেদিন চিঠি পায়নি স্পিকার, কারণ তিনি ঢাকার বাইরে ছলেন। গতকাল স্পিকার চিঠি পেয়েছেন কিনা তাও নিশ্চিত নয় জাতীয় পার্টি। এদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত ৫৯ সংসদ সদস্যসহ মোট ৬২ জন নতুন সংসদ সদস্যের একটি অংশ বিরোধী দল হওয়ার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়। শেষ পর্যন্ত বিরোধী দল কারা হচ্ছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। 

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেন ১০ জানুয়ারি। শপথ নেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন বসার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গেছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেলা ৩টায় এ অধিবেশন শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন। সংসদের বৈঠকের প্রথম দিন নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল এবারও স্পিকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে মনোনয়ন দিয়েছে। 

কিন্তু সবকিছু অনেকাংশে ঠিক হয়ে গেলেও বিরোধী দল নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। জাতীয় পার্টিও নিশ্চিত হতে পারছে না তারা জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসতে পারছে কিনা। শেষ পর্যন্ত বিএনপি যখন ভোটে আসল না, তখনই প্রথম প্রশ্ন ওঠে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল কারা হচ্ছে। কারণ, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রেখে রাজনীতি করছে। তারা আওয়ামী লীগের অনুগত বলেও সাধারণ মানুষের ধারণা, ফলে সংসদে সত্যিকারার্থে কার্যকর কোনো বিরোধী দল পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। জাতীয় পার্টি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ভোটে আসে, অর্থাৎ জাতীয় পার্টির সমর্থন রয়েছে এমন অন্তত ২৬টি আসন থেকে নৌকার প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের মধ্যে ওপেন রাজনৈতিক সমঝোতা হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয় সরকারের কোনো অনিয়ম ও অপরিপক্ক কোনো সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করার মতো কোনো বিরোধী দল সংসদে যাচ্ছে কিনা। ভোটের আগের এমন প্রশ্ন ভোটের পরও থেকে যায়। জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেয় তাদের অনেকেরই জনসমর্থন নেই। যা ভোটের পর প্রমাণিত হয়ে যায়। ভোটে ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক নৌকা নিয়ে মাঠে লড়াই করে টেকেনি জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু। তিনি শূন্য হাতে ঘরে ফেরেন। 

একই অবস্থা জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর। তিনিও নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার কাছে হেরে যান। হাঁকডাক দিয়ে ভোটে আসা কিংস পার্টি খ্যাত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের (বীর প্রতীক) শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি উঠে এলেও তার দলের অন্য কেউ নির্বাচিত হননি। তৃণমূল বিএনপির শীর্ষনেতারাও জামানত হারান। আওয়ামী লীগ ছাড়া ভোটে অংশ নেয়া অন্য দলগুলো ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান দেখাতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংসদ সদস্যের সংখ্যা বিবেচনায় দল হিসেবে জাতীয় পার্টিই এগিয়ে রয়েছে। তবে স্বতন্ত্র দলগুলো যদি কোনো জোট করেন এবং সেই জোট যদি ক্ষমতাসীন দলের পর সংখ্যাগরিষ্ঠতার দৃষ্টিতে দ্বিতীয় বৃহত্তর হয় তাহলে তারাও বিরোধী দল হতে পারে, এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র এমপিদের একটি অংশ নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ২২ জানুয়ারি এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মোর্চা বা ফোরাম গঠনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।

গতকাল বিকেলে রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সংসদ নির্বাচনে দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়ায় তার দল জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হবে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাননি বলে জানান তিনি। জিএম কাদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরাই সংসদে বিরোধী দল হবো। একইদিন দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির  সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া রাজনৈতিক দলই হবে প্রধান বিরোধীদল। স্বতন্ত্ররা স্বতন্ত্রই আছেন। দল যদি বলেন, তাহলে জাতীয় পার্টি। অর্থাৎ দল বিবেচনায় জাতীয় পার্টিই নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্ত স্পিকারকে জানাতে ২১ জানুয়ারি বিকেলে তার দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয় পার্টির পক্ষ থেকে। স্পিকার ঢাকার বাইরে থাকায় (নির্বাচনি এলাকা রংপুর) তিনি সেই চিঠি ২১ জানুয়ারি পাননি— এমনটি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা জানান। গতকাল সোমবারও স্পিকার এ চিঠি হাতে পেয়েছেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নন পার্টির মহাসচিব। তবে স্পিকার বা তার দপ্তর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো চিঠি বা প্রতিক্রিয়া জাতীয় পার্টি পায়নি বলে আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন। 

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা হয়। তিনি আমার সংবাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, দল হিসেবে জাতীয় পার্টিই দ্বিতীয় বৃহত্তর দল যারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্যের অবস্থান হচ্ছে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ (কোনো কোনো সময় কিছু জিনিস নিয়ে এমন কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যাকে ঘরে স্থান দেয়া যায় না, আবার ঘরের বাইরেও রাখা যায় না। অর্থাৎ যাকে কাছেও রাখা যায় না আবার সম্পূর্ণভাবে দূর করেও দেয়া যায় না।) এখন স্বতন্ত্র এমপিরা যদি কল্যাণ পার্টি, জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেন তাহলে তো তারা বিরোধী দলে থাকতে পারছেন। তারা যদি আওয়ামী লীগেও ফিরতে চান তাহলে দলটির প্রধান শেখ হাসিনার সম্মতি দরকার হবে কিন্তু স্বতন্ত্র এই এমপিদের তিনি দলে নিতে সম্মতি দেবেন বলে মনে করেন না এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তবে স্বতন্ত্র এমপিরা আলাদা ফোরাম বা মোর্চা করতে চাইলে জটিলতায় পড়তে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।  

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মাত্র ১১টি আসনে জয়লাভ করে। এই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ব্যক্তিরা। তারা মিলে জোটবদ্ধ (গ্রুপ) হলে তারাই হবে প্রধান বিরোধী দল এবং তাদের একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। আর যদি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ না হন, তাহলে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিই আবার প্রধান বিরোধী দ
 

Link copied!