Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪,

এক মঞ্চে ছাত্রদল-শিবির বাম ছাড়াই নতুন ঐক্য!

আবদুর রহিম

মার্চ ১০, ২০২৪, ১২:০৯ এএম


এক মঞ্চে ছাত্রদল-শিবির বাম ছাড়াই নতুন ঐক্য!

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলনের যাত্রা

বাংলাদেশে শিক্ষা নাই পচে গেছে অবশ্যই ছাত্র-শিক্ষকের ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন রয়েছে
—অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

জাতির স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে একত্রিত হয়ে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই 
—আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রদল

শিক্ষাব্যবস্থা ইস্যুতে আমরা কখনোই আপস করব না, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব
—সিবগাতুল্লাহ, সাহিত্য সম্পাদক, শিবির

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটাধিকার রক্ষায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য নামে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ পায়। তাতে ডানপন্থি কিংবা ইসলামপন্থি অনেক ছাত্র সংগঠনকেই রাখা হয়নি। ঐক্য গঠনের পর জোটবদ্ধভাবে ২৮ অক্টোবরের আগে পরে সরকার পতনের যে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় তাতে কোনো ছাত্রসংগঠনকেই দেখা যায়নি। উপযুক্ত সময়ে সবাই চলে যায় আত্মগোপনে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেশের অধিকাংশ মানুষেরই বক্তব্য হচ্ছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে। যার মূল কারণ সাংগঠনিক শক্তিশালী ডানপন্থি ছাত্র সংগঠনকে যুক্ত করা হয়নি। তখন ইসলামপন্থি দলগুলোকে কেন যুক্ত করা হয়নি প্রকাশ্যে এমন উত্তর দেয়নি ছাত্রদল কিংবা কেউ। 

তবে গোপনীয়তা রক্ষা করে একাধিক ছাত্রনেতার ভাষ্য ছিল, বাম ছাত্রসংগঠনের চাপে ইচ্ছে থাকলেও যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এবার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়াই নতুন ঐক্যের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নাম দেয়া হয়েছে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য এই ঐক্য গঠন করা হয়েছে বলে নতুন জোটের অধিকাংশ নেতার ভাষ্য। নতুন ঐক্যের মুখপাত্র ও ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিজাম উদ্দিন আল আদনান প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রমজলিসের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ আশিকুর রহমান জাকারিয়ার আহ্বানে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল ও জাতীয় শিক্ষানীতি সংস্কার শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে ইসলামপন্থি ১০টি দলের সঙ্গে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকেও একই মঞ্চে দেখা গেছে। 

এই জোটের কয়েকজন নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ছাত্রদল এবং শিবিরকে ব্যানারে যুক্ত করা হয়নি। তবে আগামী চূড়ান্ত আন্দোলনে অবশ্যই যুক্ত করা হবে। দলমত সব আদর্শ ভুলে একমঞ্চে শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নতুন ছাত্রঐক্য নিয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যে ঐক্য হয়েছে আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। কারণ আমাদের দেশে তো এখন শিক্ষাব্যবস্থা নেই। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে ঐক্য হয়েছে আমি এটাকে ভালো পদক্ষেপ বলেই মনে করব। বাংলাদেশে তো এখন আর শিক্ষা নাই, পচে গেছে। এটা নিয়ে এখন দাবি তোলা, পথ খুঁজে বের করা তো আবশ্যক। এখন গবেষণা করা দরকার। দাবি আদায়ে ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে এগিয়ে আশা আবশ্যক। এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এখন যদি আন্দোলন হয় আমাদের দেশের জন্য ভালো কথা। এটার জন্য অবশ্যই ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন রয়েছে।’

জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আজকে আমাদের সব চাইতে স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। এই ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে আমি জাতীয় শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুটো ছেলে এসে জানালো আমান ভাই আমরা আপনার পরিচয় জানি। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সেক্রেটারি ছিলেন। আমরা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছি, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এই ছাত্রনেতা বলেন, আজ আমাদের এমন হয়েছে, ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথায়।’ এই রাষ্ট্রের এমন কোনো সেক্টর নাই যাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয় নাই। একটা এজেন্ডা নিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং সেটা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের পতন ছাড়া এর কোনো সমাধান আছে বলে মনে হয় না। এই সরকারের পতন হয়ে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষানীতি বাংলাদেশে থাকবে না। আবরাররা খুন হবে না, সীমান্তে মানুষ মারা যাবে না। আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি, কাদের ইশারায় কাদের নিয়ন্ত্রণে এই শিক্ষাব্যস্থা চালু হয়েছে। কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে, আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। এজন্য কাদের জোর করে জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে বসানো হয়েছে তা এখন এদেশের সব মানুষই জানেন। এই অপশক্তিকে না সরানো পর্যন্ত এ দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না। আজকে সময় এসেছে আমার-আপনার পুরো দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। জাতির স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে একত্রিত হয়ে আন্দোলন করার। এই আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সবার সম্মিলিত আন্দোলনে এই সরকার শিগগিরই চলে যেতে বাধ্য হবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, আসলে একটা জাতির শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কেউ আপস করে না। এই একটি মাত্র উদ্দেশ্যে এখানে আওয়ামী-বিএনপি নেই। এটা হচ্ছে একটা জাতির প্রশ্ন। এই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে আমরা যে ধরনের মানুষ তৈরি করতে চাচ্ছি তাতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। আমরা আজকে দেখি শুধুমাত্র দেশের পক্ষে কথা বলার কারণে আবরারের মতো শিক্ষার্থীকে খুন হতে হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ও আমাদের কাছে অনেক খারাপ উদাহরণ রয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে এখনই সচেতন হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ইস্যুতে আমরা কখনোই আপস করব না। এটা আমাদের জন্য এখন বড় ক্রাইসিস। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিক্ষাব্যবস্থায় আজকে আমাদের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত রয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আসলে কী হওয়া উচিত এই নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন মাত্র শুরু। আগামীতে তা আরও এগিয়ে যাবে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব, ছাত্ররা অবশ্যই রাস্তায় নেমে আসবে। আমরা সচেতন করব। একই সঙ্গে আন্দোলনও চালিয়ে যাব। 

এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, একটা জাতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এ জাতির শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিয়ে বিজাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রবেশ করানো হয়েছে। ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল। যার কারণে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেও উপনিবেশিকের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছি। সেখান থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। আমরা এখন গভীরভাবে দেখছি আমাদের ওপর যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে, যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে এটি গত দুই বছর আগে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে অন্য কারো প্রকল্পের অংশ হিসেবে চালু ছিল, তা এখন জাতীয়ভাবে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে কিন্তু সেই দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা কেমন, অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন, তা বলা হচ্ছে না। শিক্ষার সঙ্গে অন্য বিষয়গুলো মেলানো হচ্ছে না। উন্নত দেশে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে কতজন শিক্ষক, আমাদের দেশে একজন শিক্ষকের পেছনে কতজন শিক্ষার্থী সেগুলো বলা হচ্ছে না। আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তকে যতটা অসঙ্গতি আছে তা অন্যদেশে রয়েছে কিনা আমরা সেগুলো বলছি না। এই ক্ষোভ-আক্রোশ থেকে সন্তানদের বিপর্যস্ত টের পেয়ে আজকে আমাদের অভিভাবকরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে গেছেন।

এছাড়া গতকাল অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচনা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, লেখক ও গবেষক কবি মূসা আল হাফিজ, আর্মি ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিলেটের সাবেক প্রভাষক সৈয়দ তালহা আলম। সেমিনারে যৌথভাবে প্রবন্ধ পাঠ করেন ছাত্র আন্দোলন এনডিএমের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসউদ রানা জুয়েল ও জাগপা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী। 

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও অভিভাবক পরিষদের অন্যতম সদস্য মাওলানা জাকির হুসাইন। 

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ খালেদ সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি এহতেশামুল হক সাখী, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ মিলন, জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ আহমদ, জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ , বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নেওয়াজ খান বাপ্পি, ছাত্র ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি সানজিদুর রহমান শুভ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আহমদ ইসহাক, ছাত্র জমিয়তের সাহিত্য সম্পাদক সাদ আমীর প্রমুখ।
 

Link copied!