Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫,

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাড়ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ১৪, ২০২৫, ১২:০৮ এএম


বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাড়ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম
  • এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪১টি প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে
  • বিভিন্ন দেশের ৪১টির মধ্যে ২৪টি চীনা কোম্পানি
  • অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ চলছে

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪১টি প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার মোট বিনিয়োগ ৯১৩ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এর লক্ষ্য হলো এক লাখ ৩১ হাজার ৫৭৭ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। 

কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে। যার মধ্যে পোশাক ছাড়াও রয়েছে জুতা তৈরির আনুষাঙ্গিক, প্যাকেজিং উপকরণ, ফিনিশড লুব্রিকেন্টস, ক্যাম্পিং সরঞ্জাম, বহিরঙ্গন পণ্য, তাঁবু, পোশাক তৈরির আনুষাঙ্গিক, চুলের ফ্যাশন আনুষাঙ্গিক, সুতার পণ্য, হাসপাতালের পণ্য, ব্যাগ, ম্যাট্রেস, মোজা এবং আরও অনেক কিছু। 

৪১টি কোম্পানির মধ্যে চারটি ইতোমধ্যেই তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। 

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ এই বছরের মধ্যেই শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া অর্জনে সক্ষম হয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যেই জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং অনেকগুলো পাইপলাইনে রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ চলছে। যার মধ্যে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান এ বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে, যার আংশিক প্রভাব পড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক নীতি এবং প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারের ওপর। 

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্য বৈচিত্র্যের পাশাপাশি উচ্চমানের এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক পণ্যগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। জিয়াউর রহমান বলেন, বেপজা কোনো আবেদন অনুমোদনের আগে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের সুযোগ, রপ্তানি সম্ভাবনা, পাশাপাশি পণ্যের ধরন, উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের কতটা প্রয়োজন হবে তার মতো উৎপাদন বিষয়গুলোসহ বেশ কয়েকটি বিষয় মূল্যায়ন করে। 

বেপজার তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের ৪১টির মধ্যে ২৪টি চীনা কোম্পানি। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে, বেপজা ৩৪ জন সম্ভাব্য চীনা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত আটটি চীনা কোম্পানি ১৫৩ দশমিক ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের সাথে লিজ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই কোম্পানিগুলোর সৌর যন্ত্রাংশ, ব্যাগ, লাগেজ, হালকা প্রকৌশল পণ্য, তৈরি পোশাক, সিলিকন ডাই অক্সাইড, নমনীয় মধ্যবর্তী বাল্ক কন্টেইনার এবং প্যাকেজিং তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তৈরি পোশাকের বাইরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সৌর প্যানেলের জন্য কাঁচামাল উৎপাদনের মতো খাতে বৈচিত্র্য আনার জন্য চীনা বিনিয়োগ সমৃদ্ধ হবে বলের আশা করছেন জিয়াউর রহমান। 

গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থান এবং ক্ষমতার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বেপজা প্রধান বলেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও উদ্যোগের কারণে পরিস্থিতি এখন সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এখন এখানে বিনিয়োগ করতে আসছেন। 

তিনি আরও বলেন, চীন এবং কোরিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যেই ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছেন। আমরা এখন ইউরোপীয় দেশগুলো এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও বিনিয়োগ খুঁজছি। দেশের ভাবমূর্তি উন্নত হওয়ার কারণে ইউরোপীয় এবং অন্যান্য দেশগুলোও এখানে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে বলে আমি মনে করি। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মতো শিল্প অঞ্চল তৈরি, উন্নয়ন, পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রচারের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি সরকারি সংস্থা বেপজা। 

গত চার দশক ধরে বেপজা তার নয়টি অঞ্চলে ৩৮টি দেশের বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড স্থাপন করেছে। যা ধারাবাহিকভাবে দেশের বার্ষিক রপ্তানির ১৮-২০ শতাংশ উৎপাদন করে। 

নয়টি অঞ্চল হল চট্টগ্রাম ইপিজেড, ঢাকা ইপিজেড, মংলা ইপিজেড, উত্তরা ইপিজেড, ঈশ্বরদী ইপিজেড, কুমিল্লা ইপিজেড, আদমজী ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড এবং বেপজা ইজিজেড। মাস্টার প্ল্যান অনুসারে এনএসইজেডে বেপজার এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ১ হাজার ১৩৮ দশমিক ৫৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ৫৩৯টি শিল্প প্লট রয়েছে।

Link copied!