Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজারহাটে শ্রমিক সংকট, ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

 রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 

 রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 

মে ১৭, ২০২২, ০৫:৪৭ পিএম


রাজারহাটে শ্রমিক সংকট, ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ধান কাটা শ্রমিক (কৃষাণ) সংকটের কারণে দ্বিগুন মজুরি দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। এতেও সময় মতো শ্রমিক না মেলায় ধানকাটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

এমনিতেই সার-কীটনাশক ও সেচের ডিজেল-বিদ্যুৎ বিলের মূল্য বেশি,তার উপর শ্রমিকের অস্বাভাবিক মজুরী বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষাবাদ করে খরচের টাকা তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এরফলে প্রতি বছর লোকসান দিয়ে চাষাবাদ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে।

জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১১হাজার ৭৭০হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ফসল ফলান কৃষকরা। অতিবৃষ্টির ও পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় তিন থেকে চারবার পর্যন্ত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে কৃষকদের। তারপরও আশানুরুপ ফলন হয়নি। 

এ অবস্থায় ধান কাটা মাড়াই শুরু হলে ব্যাপকভাবে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। শ্রমিকরাও মজুরী বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুন হারে। ধান বাড়িতে আনতে বাড়তি পরিবহন ও মাড়াই খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে সবমিলে এক একর (১০০শতক) জমির ধান ঘরে তুলতেই খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। 

উপায়ান্ত না পেয়ে কৃষকরা অতিরিক্ত মূল্যে ধান কর্তন শুরু করেন। তবে অতিরিক্ত মজুরী দেয়ার পরও ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় ক্ষেতের ধান পেকে যাওয়ার পরও অধিকাংশ ধান কাটতে পারেননি কৃষকরা। 

উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের চাকিরপশার তালুক গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, এবারে শ্রমিকরা শুধু ধান কর্তন করছেন,কোথাও ধান মাড়াইয়ের কাজ করছে না। ফলে মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে হচ্ছে। শুধু ধান কাটতেই সের প্রতি (৫শতক) মজুরী নিচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকা। যা অন্যান্য বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এতে করে চাষাবাদ করে মূলধন টিকছে না। তারপরও এখন পর্যন্ত শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা সম্ভব হয়নি বলে জানান। 

 উমর মজিদ ইউনিয়নের ঘুমারু ভিমশীতলা গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, ৭শ টাকা সেরে (৫শতক) দেড় একর (১৫০শতক) জমির ধান কেটে নিয়েছি। কামলারা (শ্রমিক) শুধু জমিতে ধান কেটে দিয়ে গেছে। আলাদা ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাড়িতে আনতে হচ্ছে ধান। দু’দিন থেকে মেশিন ভাড়া না পাওয়ায় এখনো ধান মাড়াই করতে না পেরে দুঃশ্চিন্তায় ভূগছি।

 রাজারহাট সদর ইউনিয়নের পুটিকাটা সুন্দর গ্রামের কৃষক জালাল মন্ডলের ৫বিঘার মধ্যে ১ বিঘা,বাবলু মন্ডলের ৬বিঘার মধ্যে ১বিঘা এবং মুকুল মন্ডল ১০ বিঘার মধ্যে ২ বিঘা জমির ধান কর্তন হলেও শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান এখনো তারা কাটতে পারেননি বলে জানান। এতকষ্ট ও ব্যয়ের পরও তারা লাভের মুখতে দেখতে পারবেন কিনা এনিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

কৃষকরা জানান, ইরি-বোরো মৌসুম শুরুর আগেই ডিজেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক দফায় বেড়েছে সার ও কীটনাশকের দাম। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরী দ্বিগুন বেড়ে যাওয়ায় চাষাবাদ করে দিনদিন তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শম্পা আক্তার বলেন, শ্রমিকের পাশাপাশি রাজারহাট উপজেলায় ৫০ শতাংশ ভূর্তুকী মূল্যে নতুন একটি সহ সরকারি ভাবে বিতরণকৃত ৪টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার এবং এবং ১০টি রিপার মেশিন দিয়ে ধান কর্তন চলছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা কম খরচে দ্রুত সময়ে ধান কর্তন করতে পারবেন। 

এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করন সহ এই উপজেলায় আরো যন্ত্রপাতি সরবরাহের প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

আমারসংবাদ/এআই
 

Link copied!