Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ যেন গরু ছাগলের চারণভূমি

তাজনগর ওমর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ

রুবেল হোসাইন সংগ্রাম, মিঠাপুকুর

রুবেল হোসাইন সংগ্রাম, মিঠাপুকুর

আগস্ট ১৯, ২০২২, ০৯:৪৬ পিএম


তাজনগর ওমর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর বিশেষ তিনটি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ করা হয়। কাজ শেষে বিদ্যালয়গুলোতে ২০১৮ সালে পাঠদান শুরু হয়। এরমধ্যে একটি তাজনগর ওমর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আবাসন প্রকল্পের ৫০০ গজ দক্ষিণে বিদ্যালয়টির অবস্থান। পাশেই তাজনগর ও তাজনগর জোতপাড়া নামক আরও দুইটি গ্রাম রয়েছে। তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েরা এই বিদ্যালয়ে পড়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির উদাসীনতায় বিদ্যালয়টি যেন গরু ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও গত ৪ বছরে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকার কোনো কাজ হয়নি। এমতাবস্থায় ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে বিদ্যালয়টি। কাগজে কলমে ১১০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও সবগুলো ক্লাস মিলে মাত্র ১১ জন শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেখা যায়। তৃতীয় শ্রেণিতে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন একজন শিক্ষিকা। অফিস কক্ষ অগোছালো এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিও নিয়ম মেনে টাঙানো নেই। হেলে পড়ে থাকা ছবিগুলোতে কখন হাতের ছোঁয়া লেগেছে ধারণা করা দূরসাধ্য ব্যাপার। ঠিকঠাক ফ্যান চলছে না। প্রাম প্রাথমিকের শিশুদের জন্য শেণিকক্ষের বেহাল দশা। অথচ বিদ্যালয়টিতে দফায় দফায় বরাদ্দ এসেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ ২ লাখ, স্লিপের ৫০ হাজার এসেছিল এই বিদ্যালয়ে।

এছাড়াও আরও ৩ টি চেকের কি অবস্থা টাকা কোথায় হিসাব নেই। অভিযোগ রয়েছে একক আধিপত্য খাটিয়ে ওই ২ লাখ টাকার নাম মাত্র কাজ করেছেন বিদ্যালয়টির সভাপতি ওয়াজেদ মেম্বার।

এছাড়াও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোসলেম মিয়া ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেন না। এমনকি প্রধান শিক্ষককে ক্লাস নিতে দেখেননি শিক্ষার্থীরা। বরাদ্দের টাকা আসার সময় হলেই স্কুলে আনাগোনা বাড়ে প্রধান শিক্ষকের। বাকি বেশীরভাগ সময় নানান অজুহাতে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। এমন পরিস্থিতিতে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানির স্বীকার হওয়া কথা জানান স্থানীয় সূধীজন ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা বলেন, বিদ্যালয়টির পাশেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এছাড়াও পাশেই আরও দুটি গ্রাম তারপরও এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্কুলটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজন দায়িত্বশীল নয়, বরাদ্দ আসে কিন্তু কাজ হয় না। তারা তাদের ইচ্ছেমত সবকিছু করেন এজন্য বিদ্যালয়টির প্রতি স্থানীয়দের আগ্রহ নেই। সমস্যা নিরসনে আমরা নতুন কোন শিক্ষককে প্রধানের দায়িত্ব দিতে বলেছিলাম। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্যারের কাছে একটি আবেদনও করা হয়েছে কিন্তু আজ অবধি তা ফাইলবন্দি রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি তবুও কোন কাজ হচ্ছে না। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠিন নজরদারি বাড়াতে হবে।

আরেক শিক্ষিকা বলেন, বরাদ্দ আসে কাজ হয় না, এগুলো কি টিও এবং এটিও স্যার জানেন না, সবাইকে ম্যানেজ করেই সবকিছু হয়। কিন্তু কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না কারণ নিয়মের কথা বললেই বিপদ। আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াতে আসছি এখানে শিক্ষার্থী কম থাকার কারণ বিদ্যালয়ের ক্যাচমেট এলাকায় কোন এনজিও সংস্থার স্কুল থাকার নিয়ম নেই কিন্তু এখানে এনজিও পরিচালিত দুটি স্কুল রয়েছে। আর ওই স্কুলের শিক্ষিকা শিক্ষক থেকে শুরু করে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লোকজন সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় কোন অভিযোগ হয় না। আমরা স্থানীয়দের সহায়তা চাই।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোসলেম মিয়াকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এমপি স্যারের প্রোগ্রামে আছি এসব বিষয়ে পরে কথা হবে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি ওয়াজেদ মিয়া (মেম্বার) বলেন, বরাদ্দ পাওয়া ২ লাখ টাকার ভালো দামি জিনিসপত্র দিয়ে কাজ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়গুলো তিনি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন সভাপতির দায়িত্বের দিন শেষ। প্রধাণ শিক্ষক এসব বিষয়ে সব তদারকি করে থাকেন, অনিয়ম হলে দায়ভার তার উপর বর্তাবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল হক বলেন, ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে শুনেছি। স্কুলটির পাশে সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হচ্ছে এজন্য বিদ্যালয়টি নিয়ে আমাদের যুগোপযোগী পরিকল্পনা রয়েছে। শীঘ্রই সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।

মিঠাপুকুর উপজেলা জুড়ে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৭৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব স্কুলে অনিয়ম হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এআই

Link copied!