লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
নভেম্বর ২১, ২০২২, ১১:৫২ এএম
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
নভেম্বর ২১, ২০২২, ১১:৫২ এএম
ব্যানার, পেষ্টুন, বড় বড় তোরণ ও পোস্টারের নগরী এখন লক্ষ্মীপুর জেলা শহর। অলিগলি থেকে শুরু করে সড়ক কিংবা দেয়ালে দেয়ালে ঝুলে আছে বর্ণিল রঙের ব্যানার-পোস্টার। এসব ব্যানার-পোস্টারে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিকে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চাই বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর কাল (২২ নভেম্বর) মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে সফল করতে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। বিশালাকারের প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরীর কাজ প্রায় সম্পন্ন। রোববার বিকেলে জেলা আওয়ামীলীগের নেতারা সম্মেলনের মাঠ পরিদর্শন করেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত দলের নেতাকর্মীরা। জেলার সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসাহ উদ্দীপনা। জল্পনা-কল্পনা চলছে, কারা হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের আগামীদিনের জেলার কান্ডারী? পুরনো নেতৃত্ব থাকছে, নাকি আসছে নতুন মুখ?
দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি-সম্পাদক পদে একাধিক ব্যক্তির নাম এসেছে। তবে ব্যানার-পোস্টারে জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরউদ্দিন চৌধুরী এমপিকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে ছেয়ে নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণা বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে আরো কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
তারা হলেন- এএফএম জসীম উদ্দিন, জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদ, জেলা আইনজীবী সমিতির নেতা নুরুল হুদা পাটোয়ারী, জেলা জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের মাঠে প্রচার-প্রচারণা তেমন একটা দেখা যায়নি।
এছাড়া সভাপতির দৌড়ে জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এম আলাউদ্দিন, পৌরসভার সাবেক মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা সফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিমসহ বেশ কয়েকজনের নাম জোরো শোরেই প্রচার হচ্ছে। এতে নতুন কমিটিতে সভাপতি কে হচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সর্বশেষ লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সম্মেলনে গোলাম ফারুক পিঙ্কুকে সভাপতি ও নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিগত সাড়ে সাত বছরে দল পরিচালনায় সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রতি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আস্থা-বিশ্বাস তৈরী হলেও সভাপতি হিসেবে গোলাম ফারুক পিঙ্কু নিজের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
বিগত ইউপি নির্বাচনেও গোলাম ফারুক পিঙ্কুর বিরুদ্ধে নমিনেশন বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবারের সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যে গোলাম ফারুক পিঙ্কুর বিরুদ্ধে নমিনেশন বাণিজ্যের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের ৪৯টিতে আওয়ামীলীগের মনোনীত (নৌকা) প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও গোলাম ফারুক পিঙ্কু নিজের ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেনি। তবে দল পরিচালনায় বিগত সাড়ে ৭ বছরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ থাকলেও প্রকাশ্য কোনো গ্রুপিং দেখা যায়নি।
দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আগামী ২০২৩ সাল আওয়ামী লীগের জন্য একটি টার্ণিং পয়েন্ট। এসময় মাঠের কর্মীদের সাথে থেকে যিনি বিএনপি-জামাতের অপরাজনীতি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মোকাবেলা করতে পারবেন, তাকেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা উচিৎ।
বহুলালোচিত মঙ্গলবারের এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন- মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি ও মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, দল যাকেই নির্বাচিত করুক আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিঙ্কু ও সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের স্বার্থে যাকেই নেতা নির্বাচিত করবেন, সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো।