ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

আজ বরিশাল মুক্ত দিবস

বরিশাল ব্যুরো

বরিশাল ব্যুরো

ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ১১:২১ এএম

আজ বরিশাল মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশালের আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে। ওইদিনই বরিশাল হানাদার মুক্ত হয়েছিল। বরিশাল মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির অয়োজন করেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর ওয়াপদা কলোনী সংলগ্ন স্মৃতি ৭১ নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পন করা হবে। পরে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ “অপারেশন সার্চলাইট”র মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনারা শুরু করে গণহত্যা। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার খবর বরিশালে টেলিফোনে আসে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষনার বার্তা বরিশাল পুলিশ লাইনের ওয়ারলেসযোগে পৌঁছে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের কাছে। গভীররাতে পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার ভেঙ্গে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র লুট করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

২৬ মার্চ ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের শপথ পড়িয়ে অস্ত্র হাতে তুলে দেয়া হয়। নুরুল ইসলাম মঞ্জু খবর পাঠান মেজর এমএ জলিলকে। সকালে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় সচিবালয় গঠণ করা হয়। ওই সচিবালয়ের মাধ্যমে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে অস্ত্র আমদানি, গল্লামারির যুদ্ধ, চাঁদপুরে অস্ত্র প্রেরণসহ বেশ কয়েকটি অপারেশন করে মুক্তিযোদ্ধারা। এখান থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হতো। ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদাররা আকাশ পথে বরিশালে প্রথমে হামলা চালায়। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মেডিক্যালের সামনে, কীর্তনখোলা তীরে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। সেদিন বোমায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। পরে ২৫ এপ্রিল তারা জল, স্থল ও আকাশ পথে দ্বিতীয় দফায় আক্রমন করে। স্থলপথে বরিশাল আসার পথে পাক সেনারা গৌরনদীতে বাঁধাগ্রস্থ হয়। সেদিন প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হাসেম, বাটাজোরের মোক্তার আলী, গৈলার আলাউদ্দিন সরদার এবং চাঁদশীর পরিমল মন্ডল শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে সেদিন আটজন পাক সেনা নিহত হয়েছিলো। পাক সেনারা প্রথমে অশ্বিনী কুমার টাউন হল পরে জিলা স্কুলে এবং সর্বশেষ ওয়াপদা কলোনীতে তাদের হেড কোয়ার্টার গড়ে তোলে। সেখানেই তৈরী করা হয় নির্যাতন কক্ষ। অসংখ্যবার সম্মুখ যুদ্ধ শেষে ৮ ডিসেম্বর বরিশাল পাক হানাদার মুক্ত হয়। সেদিন হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে বরিশালের আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল।
কি নির্মমতা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশাল নগরীর তৎকালীন ওয়াপদা কলোনীতে (বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড) হেড কোয়ার্টার ও সৈন্যদের ব্যারাক স্থাপন করে। ওয়াপদা কলোনীর কয়েকটি ভবনকে নির্যাতন কক্ষ (টর্চার সেল) হিসেবে ব্যবহার করেছিলো। ওয়াপদা কলোনীর বিভিন্নপাশে নির্মাণ করা হয় বাংকার। পরে বরিশালের বিভিন্নস্থানের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে এনে টর্চার সেলে অমানুষিক নির্যাতন করে ওয়াপদা ভবনসংলগ্ন খাল, কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম এলাকায় অবস্থিত দীঘি, অব্যবহৃত ভূমি ও কীর্তনখোলা নদীর তীরে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারসহ ব্যানেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে। ওয়াপদা কলোনীর অভ্যন্তরে থাকা দুটি ‘টর্চার সেল’ ও চারটি বাংকার আজও সেদিনকার নির্মম ইতিহাসের নিরব স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতিক বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের গঠিত তথাকথিত পাকিস্তানের জাতীয় শান্তি কমিটির প্রভাবশালী ১০৪ জন সদস্যের মধ্যে বরিশালের ছিলো ৩১ জন। ওই ৩১জন সদস্যকে নিয়েই বরিশালে প্রথম গঠিত হয় তথাকথিত স্বাধীনতা বিরোধী জেলা শান্তি কমিটি। পাকিস্তানী সেনা সদস্যরা শান্তি কমিটির সহযোগিতায় বরিশাল শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে ক্যাম্প বসিয়ে টর্চার সেল স্থাপন করে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের নিরব সাক্ষী নগরীর ওয়াপদা কলোনীর টর্চার সেল। যেখানে পাক সেনারা বাঙালি মা-বোনদের ধরে এনে পাশ্ববিক নির্যাতন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাসহ বাঙালিদের গণহত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে ওয়াপদার পাশর্^বর্তী খালে। আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই টর্চার সেল, বাংকার আর বধ্যভূমির ব্রিজটি। যা স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের সেই লোমহর্ষক ঘটনা। যেখানে পা রাখতেই শিউরে ওঠে পুরোশরীর। দীর্ঘ বছর অবহেলা আর অরক্ষিত অবস্থায় পরে থাকা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত সেই টর্চার সেল ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার নিরলস প্রচেষ্টায় ৭১’র নির্মম নির্যাতনের অবয়ব ফিরিয়ে আনতে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে বধ্যভূমি। আর এতে সহযোগিতা করছে প্রতœত্ত্বত অধিদপ্তর ও মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের অবয়ব সাজে সজ্জিত বধ্যভূমি ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর উদ্বোধণ এবং উন্মুক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, ওয়াপদা কলোনী ছিলো অপেক্ষাকৃত নির্জন এলাকা। এ কারণে হানাদাররা সেখানে তাদের ক্যাম্প ও একাধিক ভবনে টর্চার সেল স্থাপন করে। আর ওয়াপদা কলোনীর এ ক্যাম্প থেকেই ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও ভোলায় অপারেশন চালাতো পাকিস্তানিরা। তাছাড়া ওয়াপদা কলোনীর ২৫ নম্বর ভবনে শত শত বাঙালি মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হতো। ক্যাম্পের পাশ ঘেসে বয়ে যাওয়া সাগরদী খালে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী মানুষের মৃতদেহ। যাদের মধ্যে শহীদ মজিবর রহমান কাঞ্চন, শহীদ আলমগীর ও শহীদ নজরুলের নাম বলতে পেরেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এছাড়া তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আজিজুল ইসলামকে ৭১’র ৫ মে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনারা। ওয়াপদা কলোনীর পেছনে দক্ষিণ পাশে খাদ্য বিভাগের কর্মচারীরা তার মরদেহ দাফন করেছিলেন। শহীদ কাঞ্চনের ছেলে শফিউর রহমান জামাল বলেন, মাঝে মাঝে বধ্যভূমিতে আসি। এখানকার নির্যাতিত সেলগুলো যেখানে আমার বাবাকে রেখে নির্যাতন করা হতো। অগণিত মা-বোনকে এখানে রেখে অত্যাচার করা হয়েছে। এখানে আসলে আমার সেই দিনগুলির কথা মনে পরে। এখানে আসলে বাবার সান্নিধ্যে থাকা যায়।

তিনি আরও বলেন, বরিশালের এ নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য বিশেষ এক ভূমিকা পালন করবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে। পাশাপাশি প্রজন্মের হৃদয়ে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করবে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় আজীবন স্মরণ করবে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের। কারণ ওয়াপদা কলোনীতে পাক বাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্নগুলো মুক্তিযুদ্ধের জীবন ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

কেএস 

Link copied!