সৈয়দুর রহমান তালুকদার, দিরাই (সুনামগঞ্জ)
আগস্ট ২, ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং দিরাই-শাল্লা আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মিফতা উদ্দিন চৌধুরী রুমি বলেন, “দীর্ঘ ১৭ বছর ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, বিশেষ করে রক্তস্নাত জুলাই বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এই আত্মত্যাগ জাতি আজীবন স্মরণে রাখবে।”
তিনি বলেন, “এই আন্দোলন ছিল কারো একার নয়। এটা ছিল দেশের সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। উদ্দেশ্য ছিল—ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করা। সেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় মসজিদের খতিব, উচ্চ পর্যায়ের আমলা, মন্ত্রী ও প্রশাসনের বহু কর্মকর্তা দেশত্যাগ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে—ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউই জনগণের হাত থেকে রেহাই পায় না।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে মিফতা উদ্দিন বলেন, “৫ আগস্টের পর কেউ কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে খারাপ কাজে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তারেক রহমান কঠোরভাবে তাদের প্রতিহত করছেন। তার ঘোষণা স্পষ্ট—চাঁদাবাজদের বিএনপিতে কোনো স্থান নেই।”
ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি দিরাই-শাল্লা আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তবে আপনাদের সকলের সহযোগিতা ছাড়া আমি একা কিছু করতে পারব না। একমাত্র ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলেই ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই মিলে তার পক্ষেই কাজ করব—এই মানসিকতা থাকতে হবে। বিভাজন নয়, আমাদের মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে ঐক্য থাকতে হবে।”
সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সুস্থতা কামনা করে তিনি বলেন, “তিনি দিরাই-শাল্লার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যদি তিনি নির্বাচনে অংশ নেন, আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে থাকব। আর না পারলে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে একযোগে কাজ করব।”
দিরাই-শাল্লার হাওরাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, “বিচারপতি থাকাকালীনও আমি এই এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার ছেলে ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরীও আপনাদের পাশে আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি দিরাই-শাল্লাকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজে পরিণত করতে চাই।”
তিনি মাদক ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সভাপতিত্ব করেন দিরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির হোসেন।
সভা পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু সাইদ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, যুক্তরাজ্য ওল্ডহাম বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী ও শাল্লা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নিত্যানন্দ দাস।
বক্তব্য দেন- উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক শেখ আব্দুল লতিফ, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম চৌধুরী ও আজিম উদ্দিন, কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মুজিবুর রহমান তালুকদার, ভাটিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নেওয়াজ মাহমুদ রিপন, কুলঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন মিয়া প্রমুখ।
ইএইচ