Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

পেশা হারাতে বসেছে চাটমোহরের মৃৎশিল্পীরা

শিমুল বিশ্বাস, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

শিমুল বিশ্বাস, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ০৩:০২ পিএম


পেশা হারাতে বসেছে চাটমোহরের মৃৎশিল্পীরা

এঁটেল মাটি সংকট, জ্বালানীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, মাটির তৈজসপত্রের প্রতি মানুষের অনিহার মতো বিভিন্ন কারণে পেশায় টিকে থাকা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেছেন পাবনার চাটমোহরের মৃৎশিল্পীরা। ফলে শত শত বছরের ঐতিহ্য একেবারে বিলুপ্ত না হলেও ক্রমশই সংকুচিত হয়ে পরছে। পেশা হারাতে বা ছাড়তে বসেছে শতাধিক মৃৎশিল্পীরা।

একাধিক পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া ইউনিয়নের বেলগাছি, গৌড়িপুর, মির্জাপুর, বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর, পৌর সদরের বালুচর মহল্লা, হরিপুর ইউনিয়ন সদর, মূলগ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাটির হাড়ি পাতিলসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি হতো। শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। তখন  মৃৎশিল্পের ব্যবসা বেশ রমরমা ছিল। কালের বিবর্তনে ভাটা পরেছে তাদের ব্যবসায়।

হরিপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী চিত্তরঞ্জন পাল জানান, সিলভার, প্লাস্টিকের পণ্যসামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ মাটির তৈজস পত্র কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে। পূর্বে আমাদের মাটি কিনতে হতো না। এখন মাটি কিনতে হয়। মাটির দামও বেশ। এঁটেল মাটি পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে।

একই গ্রামের সম্ভুনাথ পাল জানান, এক সময় মাটির হাড়ি পাতিল তৈরি করতেন তারা। কিন্তু এখন সেখান থেকে সরে এসে পায়খানার ট্যাংক তৈরির মাটির পাট তৈরি করেন। হরিপুরের সাত-আটটি পরিবার এখন বিভিন্ন আকারের পায়খানার ট্যাংকির পাট তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাটি, খড়ি, শ্রমিকের দাম বাড়ায় বেশি লাভ করতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় পেশায় কোন রকমে টিকে থাকলেও এ নিয়ে চিন্তিত তারা।

বেলগাছি ও বহরমপুর গ্রামের মৃৎশিল্পীরা জানান, মাটির তৈজসপত্র তৈরির পাশাপাশি পূজা উপলক্ষে দুর্গা, সরস্বতী, কালী, লক্ষ্মী, মনসা, শিব ঠাকুর, বিশ্বকর্মা, গণেশসহ বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করেন তারা। এগুলো মৌসুম ভিত্তিক। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। পৈত্রিক পেশা ছাড়তেও পারছেন না আবার ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পরেছে। অনেকে পেশা পরিবর্তন করে চলে গেছেন অন্য পেশায়। যারা এখনও যুক্ত আছেন তারা এ শিল্পকে আঁকড়ে কোন রকমে দিনাতিপাত করছেন।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরজাহান বেগম মুক্তি জানান, মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত পরিবার গুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা সচ্ছল নয়। মৃৎশিল্পের উপকরণের দাম বাড়লেও হাড়ি পাতিলের দাম তেমন বাড়েনি। উপরন্তু তারা মাটির যে তৈজসপত্র তৈরি করেন সেগুলোর চাহিদাও কমে গেছে। তার পরও এ পেশাটি আঁকড়ে ধরেই কোন মতে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।

এসএম

Link copied!