Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

রামগতিতে চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ০৩:৪৮ পিএম


রামগতিতে চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী

লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর বাদাম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে চিহ্নিত চোর চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

জানা যায়, ইউনিয়নের পঞ্চাত সমাজে সিঁদেল চুরি, টাকা, মোবাইল, রাতের অন্ধকারে হাড়ি পাতিল, রান্না করা মাংস চুরিসহ গৃহবধূকে রাতের অন্ধকারে ধারালো টেটা বিদ্ধ করা ও তাদের সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের কারণে এলাকাবাসী চরম এক আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।

থানা পুলিশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদারসহ সকলেই জানে এই চোর চক্রের অপরাধ জগত সম্পর্কে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চুরি করে ধরা খাওয়ার পর অধরা থেকে যাচ্ছে এ সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা জানায়, চর বাদাম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পঞ্চাত সমাজে বেশ কিছুদিন থেকে গড়ে উঠেছে আবুল বাশার বাসু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ রাজুর সহোদর ভাই সুমন, শাহীন, নোমান, শান্তর একটি সংঘবদ্ধ চোর ও অপরাধচক্র। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকবর হোসেন সুখীর বিরুদ্ধে উঠেছে এদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ। চোর চক্র ধরা খাওয়ার পর গডফাদাররা ক্ষমতার প্রভাবে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এদের কারণে সাধারণ মানুষের সমাজে বসবাস করা দ্রুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। কেউ মুখ খুললেই তার উপর নেমে আসে চুরি চামারি ও হামলার মত ঘটনা। গত একমাসের মধ্যে প্রায় ১৫/২০টি বাড়ীতে চুরি, ধারালো কোচ দিয়ে গৃহবধূর উপর হামলা, মোবাইল চুরি, টাকা চুরি, গরু ছাগল চুরি, সিঁদ কেটে ঘরের মালামাল চুরি করে তারা। এই চক্রটি গত কয়েক দিন আগে রাতে মৃত আবুল খায়েরের ছেলে আবদুর রহিমের ঘরের দরজা কেটে ভিতরে ঢুকে ২০হাজার মূল্যের একটি মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। নুরুল ইসলামের ছেলে প্রবাসী মাকসুদের ঘরের দরজা কেটে পাসপোর্ট ভিসা, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। আবুল কালামের ছেলে মোছলেহ উদ্দিনের পানির পাম্পের মোটর ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়। চৌধুরী মিয়ার ছেলে নুরনবীর একটি গরু নিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করিলে গরু রেখে চলে যায়। নুরনবীর ঘরের সিঁদ কেটে একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যা জিডি করার পর রামগতি থানা পুলিশ উদ্ধার করে। গত ১৫/২০দিন আগে মিরন পণ্ডিতের ছেলে আনোয়ারের ঘরের বেড়া কেটে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে যায়।

হাফেজ মাহবুব উল্যাহ ঘরের সিঁদ কেটে দুটি টাচ মোবাইল নিয়ে যায়। গত এক বৎসর আগে একই ঘটনা ঘটে। আবদুল মতিন বেপারীর বাড়ীর ঘরের সিঁদ কেটে দুইটি টাচ মোবাইল ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। ইসমাইলের ছেলে রাশেদ ডাক্তারের ঘরের সিঁদ কেটে দুটি এন্ড্রয়েড সেট ও ডাক্তারি যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। ইউনুছ পঞ্চাতের ঘরে সিঁদ কেটে ঢুকে তার স্ত্রীর গলা থেকে স্বর্ণের চেইন নিয়ে যাওয়া সময় চিৎকার দিলে চেইন রেখে চলে যায়, তারপর সামাজিক ভাবে শালিশী বৈঠকে তারা চোর প্রমাণিত হলে মাফ চায়। আবু জাকেরের ঘরের দরজা কেটে ঘরে ঢুকে মোবাইল, অন্যান্য মালামাল ও গরু নিয়ে যায়। পরপর দুইবারই তার ঘরে চুরি করে এ চোর চক্র। মো. রাসেলের ঘরে দুইবার পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করে এসময় তার একটি রান্নাঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রাসেলের মা নামায পড়তে উঠলে ওযু করা অবস্থায় কোচ মেরে তাকে হত্যা চেষ্টা করলে মহিলার চিৎকার করলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় তার বুকে কোচ বিদ্ধ হয়। ইতিপূর্বে রাসেলকে তারা বিভিন্ন কু-পরামর্শ ও হুমকি ধমকি দেয়।

স্থানীয়রা আরো জানায়, এ চক্রটি বিভিন্ন সময়ে মানুষের ঘরের সিঁদ কাটা, হাঁস-মুরগী, মোবাইল, নগদ টাকা, নারিকের, সুপারী চুরি করে সমাজকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ চক্রটি নামায পড়ানোর সময় মসজিদের ঈমামের দুটি মোবাইল নিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে তাজল ইসলামের ছেলে মো. ইউনুসের ঘরে ঢুকে নগদ আট হাজার টাকা নিয়ে যায় তা প্রমাণিত হলে সামাজিক ভাবে শালিশী বৈঠকে দেড় মাসের মধ্যে কারামতিয়া বাজার কমিটির সেক্রেটারির কাছে জরিমানার টাকা দিবে মর্মে স্বীকার করে তাদের পিতা বাসু। এই চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে চুরি করে আসছে। রামগতি থানায় তাদের নামে কয়েকটি জিডি রয়েছে। এদের নির্মূল করা এখন সময়ের দাবী।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম জানান, চোর চক্রের কারণে আমাদের এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ মো: আলমগীর হোসেন জানান, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সচেতন এলাকাবাসী এ চোর চক্রটি দমনে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানায়।

এসএম

Link copied!