ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

মিরপুরে মধু সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মামুন

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম

মিরপুরে মধু সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মামুন

মৌমাছির মাধ্যমে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সাফল্য পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মৌ-চাষি মামুন অর রশিদ ওরফে মধু মামুন। তার উৎপাদিত মধু এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও।

সফল এই মধু সংগ্রহকারী মামুনের পেছনের গল্পটা খুব সহজ ছিল না। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ছিল তার বিরল প্রতিভা। যাত্রাপালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠের গান সবই করেছেন। জীবিকার তাগিদে এক সময় এনজিও চাকরিও কয়েছেন তিনি। তবে কোন কিছুই যেন তার জীবনে ধরা দেয়নি। এক সময় সিদ্ধান্ত নেয় চাকরি ছেড়ে মধু সংগ্রহের। এরপর ১৯৯৭ সালে কারিগরি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই দুই হাজার ৬’শ টাকা দিয়ে মাত্র চারটি মধুর বাক্স নিয়ে শখের বশেই মৌ-চাষ শুরু করেন। এসময় পুরোদমে আত্ময়োগ করেন মৌ-চাষে। নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে তিনি এখন স্বাবলম্বী। মামুনের সংগৃহীত মধু দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। বর্তমানে মামুনের ৩টি মৌ খামারে প্রায় সাড়ে ৪০০ বাক্স রয়েছে। একেকটি বক্স থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।

কুষ্টিয়র মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মামুন। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করেন। পরে স্থানীয় একটি এনজিও চাকুরীও করেন । তবে অসুস্থতার কারণে সেই চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হন মামুন। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে এক সময় চাকরির আশা না করেই বাণিজ্যিকভাবে মধুর চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করেন। বর্তমানে তার মধু খামারে প্রায় ২০ জন কর্মচারী কাজ করছেন।

সম্প্রতি মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে বিস্তীর্ণ সরিষার ক্ষেত। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ-চাষের বাক্স বসিয়েছেন মামুন। বাক্স থেকে মৌমাছির দল সরিষার ক্ষেতে উড়ে উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার বাক্সে ফিরে যাচ্ছে। বাক্স থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয় মধু।

নাটোর থেকে ধুবইল মাঠে মধু কিনতে আসা ফারুকুল আলম তুষার নামে এক ঠিকাদার বলেন, আমি নাটোর থেকে এসেছি মধুমামুনের নাম শুনে। সারা দেশে মধু মামুনের মধুর সুখ্যাতি রয়েছে। তার মধু অনেক মানসম্পন্ন। যার কারণে সরেজমিন দেখে এবং নিজে খেয়ে বাসার জন্য আরো পাঁচ কেজি মধ্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

স্থানীয় কুষ্টিয়ার মিরপুর মাহমদা চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন বলেন, মধু মামুন আমাদের এলাকার ছেলে। সে দীর্ঘ দিন ধরে মৌ-খাামার গড়ে তুলেছেন। ইতোমধ্যে সারা দেশে তার অনেক নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। তার উৎপাদিত মধু চরম সমাদৃত।

তিনি আরও বলেন, মামুন স্থানীয় ধুবইল মাঠে খামার স্থপন করেছে জেনে সেটি দেখতে এসেছি। দেখে বেশ ভালো লাগছে। সে সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন।

মামুন আর রশিদ বলেন, বর্তমানে আমার তিনটি খামারে সাড়ে ৪০০ বক্সে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে তাড়াশের কেন্দুয়িল, চাপাইনবয়াবগঞ্জের সুকনাপাড়া এবং কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।

মামুন আরও বলেন, প্রতি বছর সরষে, কালোজিরা, ধনিয়া, বরই, টমেটো, লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়। মেয়ের নামানুসারে খামারে নাম রেখেছি ‘মিষ্টি মৌ খামার’। কুষ্টিয়ার বিসিক থেকে মধু বাজারজাত করার সনদও দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।

মামুন জানান, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল তার বিরল প্রতিভা। যাত্রাপালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠের গান সবই করেছেন। মামুনের স্ত্রী রাশিদা আক্তার খুলনা বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী।

মেয়ে মায়মুনা রশিদ মিষ্টি চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছেন। ছেলে আহানাফ তাহমিদ মুন পড়াশোনা করছে। বর্তমানে মামুনের মধু দেশ-বিদেশে বিক্রি হয়। অনেকে তার বাড়িতে এবং খামারে গিয়ে সরাসরি মধু কেনেন।

মামুন বলেন, বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বল্প মূল্যে মধু কিনে নিয়ে তাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। গাছি সংগ্রহকারীরা মৌচাকে চাপ দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আর মৌ খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। এতে মধুর গুণগত মান ভালো থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমার খামারে উৎপাদিত মধু দেশের গন্ডি পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে যায়। আমার ইচ্ছে রয়েছে সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমার খামার আরো বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হব।

সফল এই মধু খামারী বলেন, গত বছর আবহাওয়া কিছুটা বিরুপ থাকায় মধুর উৎপাদন কম হয়েছিল। তবে এবার আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পুরন করতে পারবো। গত বছর বিভিন্ন ফুল থেকে দশটন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। এবার আশা করছি বিশটন মধু সংগ্রহ করতে পারবো।

কেএস

Link copied!