Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

বরগুনায় কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনা প্রতিনিধি

মে ১৫, ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম


বরগুনায় কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

বরগুনায় সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাকান্ড ও ডাকাতিসহ বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন পুলিশ সুপার মো. আব্দুস ছালাম। সোমবার (১৫ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের হলরুমে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুস ছালাম জানান, গত ২ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৫ নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের পাকুরগাছিয়া গ্রামে নির্বাচন সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতা এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম পনু নৃশংসভাবে খুন হন। হত্যা মামলাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল হতে ৭ জন এবং পরবর্তীতে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্র এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো ৪ জন মোট ১১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

 গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্য হতে ৪ জন আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এজাহারনামীয় ১ নং আসামি আকাইদ হোসেন ঠান্ডা ওরফে আসাদুজ্জামানকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামি আকাইদ হোসেন ঠান্ডা ওরফে আসাদুজ্জামান বর্তমানে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

৪ মে রাতে বরগুনা সদর থানার কেওরাবুনিয়া ইউনিয়নের কোটবাড়িয়া গ্রামের একটি পারিবারিক বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে জনৈক শাজাহান হাওলাদারের শিশু কন্যা রিপা (১২) নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পরদিন বরগুনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয় পুলিশ এবং নিখোঁজের ভিকটিমের পরিবার নিখোঁজ রিপাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে খোঁজাখুঁজি একপর্যায়ে ৪ মে বিকেল ৫টার দিকে একই গ্রামের আজম দরবার কালভার্ট সংলগ্ন খালের পাশে পরিত্যক্ত ভিটার জঙ্গলের মধ্যে নিখোঁজ রিপার মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। যার নং ৫। তারিখ ৫ মে ২০২৩। চাঞ্চল্যকর এ ক্লুলেস হত্যা মামলাটি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে একই ইউনিয়নের কোটবাড়িয়া গ্রামের মৃত রমজান আলী মৃধার পুত্র আল আমিনকে (৩৫) ঢাকার রামপুরা থেকে ১৩ মে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ আটককৃত আল-আমিন মামলায় ঘটনায় নিজে জড়িত মর্মে স্বীকার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আল আমিন জানায়, ভিকটিমের মাতা শিউলি বেগমের (৩৮) সাথে তার অবৈধ পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। মামলার ঘটনার তারিখ রাতের বেলায় তাদের মাঝে অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনা ঘটে যা ভিকটিম শিশু কন্যা রিপা দেখে ফেলে। জানাজানি না হয় সেজন্য আল আমিন ভিকটিম রিপাকে কৌশলে আজম দরবার কালভার্টের কাছে নিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। ওই রাতেই মৃত রিপাকে পরিত্যক্ত বিচার জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রেখে আলামিন আত্মগোপন করে। আল-আমিনকে আদালতে সোপর্দ করলে সে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে নিজেকে জড়িয়ে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

গত ২৪ এপ্রিল রাত ২টা হতে ৩টার মধ্যে বরগুনা সদর থানার আদাবাড়িয়া গ্রামে জনৈকা মিনারা বেগমের বাড়ির গ্রীল কেটে একদল ডাকাত তার ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে অবস্থানরত মিনারা বেগম ও মেহমানদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরের আলমারী শোকেস ও ওয়ারড্রবের তালা ভেঙ্গে আঠাশ লক্ষ পয়তাল্লিশ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়-চোপড় ও মোবাইল ও নগদ টাকা লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় বরগুনা সদর থানায় একটি ডাকাতি মামলা রুজু হয়। যার নং- ৩৮, তাং- ২৫/০৪/২০২৩।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে একই উপজেলার বড় গৌরীচনা গ্রামের মৃত্যুর খায়রুল ইসলামের পুত্র মনিরুল ইসলাম ওরফে পোড়া মনির ও শিংড়াবুনিয়া গ্রামের শাজাহান শিকদারের পুত্র মিলন শিকদার ওরফে অস্ত্র মিলনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মনিরুল ইসলাম ওরফে পোড়া মনিরের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার বাসা থেকে লুণ্ঠিত কাপড়-চোপড়েরএকাংশ তিনটি শাড়ী ও একটি বিছানার চাদর ও চার হাজার টাকা উদ্ধার করে বিধি মোতাবেক জব্দ করা হয়েছে । আসামীর দেয়া তথ্যানুযায়ী সহযোগি অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বরগুনা জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আব্দুল হালিম, বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আহমেদ, ইন্সপেক্টর (ক্রাইম) কালাম খান, ওসি ডিবি মোঃ শহিদুল ইসলাম, ডিআই ওয়ান মোঃ ফেরদৌস আলম খান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সদর থানা মোঃ আজিজুর রহমান,পনু হত্যা মামলার আইও মনিরুল ইসলাম, রিপা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাসেল মাহমুদ প্রমুখ।

এআরএস

Link copied!