Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

দুর্যোগেও কাজে আসেনি কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

মে ১৬, ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম


দুর্যোগেও কাজে আসেনি কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষকদের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে স্থাপন করা হয়েছে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড। তবে তথ্য বোর্ডগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। 

ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট  অতি প্রবল ঘুর্ণিঝড় ‘মোকা’ আঘাত হানার আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসের পর থেকেই উপজেলার  কৃষককূলে উৎকন্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করে আসছিল। তবে দুর্যোগকালীণ এ চরম সময়েও কৃষকদের তা কোন কাজে আসেনি।  

১টি পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষকরা তা থেকে কাঙ্খিত কোনো সেবা পায়নি। এতে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারি উদ্যোগ। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, অবশ্য সরকারি প্রকল্পের কাজ-কারবার এমনই। দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলেও কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।

উপজেলার বিবিচিনি, বেতাগী সদর, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ ও সড়িষামুড়ি ইউনিয়ন  পরিষদে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, এ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপনকৃত কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের কোনোটিই সচল নেই। 

জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বোর্ড গুলো।  কোথাও খুলে খুলে পড়ছে। অনেক জায়গায় সংখ্যা গণনার ঘুঁটিগুলো অকেজো অবস্থায় নামে মাত্র বিদ্যমান আছে। এটির তথ্য কখনো আপডেট করা হয়েছে কিনা তা বুঝার কোনো উপায় নেই। 

নিয়ম অনুযায়ী, আগে ও পরের তিন দিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এই বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও সেগুলো কোনো দিনই সচলই হয়নি। সেখানে হালনাগাদ থাকবে কিভাবে? প্রায় সবগুলোরই একইঅবস্থা। 

তবে বেতাগী পৌর শহরে স্থাপিত সদর ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন কার্যালয়ের সম্মুখে স্থাপনকৃত কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের কোন হদীস নেই। কার্যালয়ের প্রবেশদ্ধারে ঘর উঠিয়ে দোকানে ভাড়া দেওয়ার কারণে সেটি খুলে ফেলা হয়। নতুন ইউপি ভবনেও সেটি স্থাপন করা  হয়নি।

 

বর্তমানে এটি কোথায় রাখা হয়েছে তা চেয়ারম্যান ও সচিব সঠিকভাবে কেউভাবে বলতে পারছেন না। বেতাগী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির খলিফা বলেন,‘এটি কোথায় রয়েছে আমার চেয়ে সচিব ভালো বলতে পারবেন। 

এবিষয়ে সদর ইউপি সচিব লিটন চন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভবন সংস্কারের কারনে এটি কোথায় রয়েছে জানেন না। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।  

মূলত, কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে গত তিন দিন আগের এবং পরবর্তী তিন দিনের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়। 

এছাড়া আগামী তিনদিনের আবহাওয়াভিত্তিক কৃষিবার্তা ও বিপদ সংকেত কী হবে তা সম্পর্কেও জানা যায়। তবে বোর্ডগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় তা কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা এলাকাগুলোর মধ্যে বরগুনার অবস্থান প্রথম সারিতে। তাই অতি দ্রুত এটি চালু করার জোর দাবি করেন এখানকার কৃষকরা।

বেতাগী সদর ইউনিয়নের কৃষক মো. শাহআলম মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড থাকলেও আজ পর্যন্ত আমরা এটা থেকে আবহাওয়ার কোনো তথ্য পাই নি। এটা চালু করলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো। আব্দুল আজিজ নামের বিবিচিনি ইউনিয়নের এক কৃষক জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে প্রতিবছর তাঁদের ফসলের অনেক ক্ষতিসাধন হয়। 

আগাম তথ্য পেলে আগে থেকেই সর্তক হতে পারতেন। তাঁদের এখন টেলিভিশন থেকে শুনে সর্তক থাকতে হয়। তবে তাদের তো সবসময় টেলিভিশনের সামনে থাকা সম্ভব নয়।

উপজেলার দুর্গম জনপদ হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান জানান, আমাদের এখানে শুধু তথ্য বোর্ডটাই রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল এসব কিছুই নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগ থেকেই অচল অবস্থা। যা চালুর বিষয়েও কারও কোন উদ্যোগ দেখছিনা।  

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল রক্ষায় আগাম তথ্য দিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বেতাগী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসেই কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড রয়েছে। তবে এর কোনো কার্যক্রম নেই। 

এগুলো অকেজো বলে স্বীকার করেন বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা। তিনি বলেন, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নেই কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড চালু করা সম্ভব হলে আমাদের চাষীরা অনেক উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন,‘আমরা চেষ্টা করছি অতি দ্রুত আমাদের ইউনিয়নগুলোতে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের কাজ চালু করার জন্য। এ বিষয় ইতোমধ্যে আমি কৃষি বিভাগকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছি।’ 

এইচআর
 

Link copied!