Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪,

অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু!

আল-আফতাব খান সুইট, নাটোর

আল-আফতাব খান সুইট, নাটোর

জুন ১৩, ২০২৩, ০৬:১০ পিএম


অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু!

বাগাতিপাড়ায় ৫ অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু! নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আব্দুলপুর-পার্বতীপুর ও আব্দুলপুর-রাজশাহী দুই রুটে রেললাইনের ১০ রেল ক্রসিংয়ের পাঁচটিই অরক্ষিত। ওই পাঁচটি ক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান। নেই কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। যানবাহন ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে উন্মুক্ত রেলগেটগুলো দিয়ে। 

ফলে এসব লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই বাড়ছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু্র সংখ্যা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

সরকারিভাবে অনুমোদিত না হওয়ায় এ পাঁচটি ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন, রেলের কর্মকর্তারা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগাতিপাড়া উপজেলার সীমানার মধ্যে মালঞ্চি ও লোকমানপুর দুটি রেলস্টেশন রয়েছে। 

এর মধ্যে আবদুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে মালঞ্চি রেলস্টেশনের দুই পাশের পাঁচটি লেভেল ক্রসিং, যার সবকটিতেই অনুমোদিত গেটম্যান রয়েছে।

অন্যদিকে আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী অভিমুখে লোকমানপুর রেলস্টেশনের দুই পাশে পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ের সবই অরক্ষিত। এগুলো হলো মাড়িয়া নিংটিপাড়া, হাড়ভাঙ্গী, মালিগাছা, গাঁওপাড়া ও ঝিনা ক্রসিং। 

রেলগেটসংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে ইয়াছিনপুর রেলগেট পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় নববধূসহ চারজন ভটভটি যাত্রী নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আব্দুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে উপজেলার স্বরূপপুর, ঠেঙ্গামারা, ইয়াসিনপুর ও বড়পুকুরিয়া লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী অভিমূখে উপজেলার পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ের সবই উন্মুক্ত থাকায় সেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুই বছর আগে মাড়িয়া নেংটিপাড়া রেলগেটে চিথলিয়া গ্রামের ফজিলা নামে এক গৃহিণী কাটা পড়েন। একই বছর ১৩ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি একই ক্রসিংয়ে কাটা পড়ার ঘটনা ঘটে।

এর দুদিনের মাথায় আইয়ুব আলী নামে আরও একজন ট্রেনে কাটা পড়েন। হাড়ভাঙ্গী (দোডাঙ্গী) রেলগেটসংলগ্ন চা দোকানদার জামশেদ জানান, তিন বছর আগে তার চোখের সামনে ক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি ট্রলি চলন্ত ট্রেনের ধাক্কা খায়। এতে চালকসহ অন্যরা ছিটকে পড়েন। এ সময় আবদুল খালেক সরকার নামে একজন মারা যান।

স্থানীয় হুজুর আলী জানান, অরক্ষিত হওয়ায় দোডাঙ্গী লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় প্রতি বছরই ৪ থেকে ৫ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর আগে ট্রলির সাথে ট্রেনের ধাক্কায় একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। 

সবশেষ রোববার দুপুরে মোটরসাইকেলযোগে পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মফিজুর ও সাবিনা নামের স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে প্রাণ হারান। তারা উপজেলার জামনগর পশ্বিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাছাড়াও গেটে প্রায় প্রতি বছরই যানবাহন পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। তবুও এই গেটে কোন গেটম্যান দেওয়া হয়নি। তিনি দ্রুত সেখানে গেট ও গেটম্যান দেওয়ার দাবি জানান।

এছাড়াও এসব রেলগেটে পারাপারের সময় নসিমন, খাবারের গাড়ি, সংবাদিকদের মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যান ট্রেনের ধাক্কা খেয়েও বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়ার তথ্য মিলেছে। রোববার হাড়ডাঙ্গী (দোডাঙ্গী) রেলগেটে দূর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে মৃত্যুর পর স্থানীয়রা রেলগেট এলাকায় বিক্ষোভ করেন। তারা সেখানে দ্রুত গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানান।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ওই ক্রসিংগুলো সরকার অনুমোদিত নয়। সেগুলো নিয়ম মেনে করা হয়নি। সড়ক বিভাগ ইচ্ছেমতো এসব ক্রসিং বানিয়েছে। এমনিতেই রেলের জনবল কম, তারপরও রেল বিভাগের তালিকায় না থাকায় জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না।

Link copied!