Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

আমতলির এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের হুমকি ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

বরগুনা  প্রতিনিধি

বরগুনা প্রতিনিধি

জুলাই ৬, ২০২৩, ০৯:০৫ পিএম


আমতলির এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের হুমকি ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। এছাড়াও একই উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও তিনি। পেশায় রাজনীতিবিদ এবং জনপ্রতিনিধি হলেও তার নেশা হয়ে উঠেছে সাংবাদিকদের মারধর, লাঞ্ছিত করা এবং হুমকি দেয়া।

গত কয়েক বছরে এই আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি হুমকি দিয়েছেন এবং লাঞ্ছিত করেছেন জেলার অন্তত ২৫ সাংবাদিককে। এছাড়া মারধরও করেছেন কয়েকজনকে। তার লাঞ্ছনা থেকে বাদ যাননি নারী সংবাদকর্মীরাও। এতে এই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যানের কারনে পেশাগত দায়িত্ব পালন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন জেলার সাংবাদিকরা। তবে সবকিছু জেনেও এই চেয়ারম্যানের বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকায় স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাদল চেয়ারম্যানের অনিয় দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলেই তিনি সাংবাদিকদের হুমকি, মারধর এবং লাঞ্ছিত করেন। এছাড়াও পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে বাদল চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোন সংবাদকর্মীর দেখা হলে তিনি রূঢ় আচরণ করতে একটুও সময় ক্ষেপণ করেন না। এখন পর্যন্ত জেলার অন্তত ২৫ জন সংবাদকর্মীকে হুমকি দেয়াসহ লাঞ্ছিত করেছেন বাদল। এছাড়াও মারধর করেছেন আরো কয়েকজন সাংবাদিককে। এতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তার হুমকি-ধমকি এবং লাঞ্ছনা থেকে বাদ যাননি নারী সংবাদকর্মীরাও।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বিষয়ে বক্তব্য আনতে গেলে গত সোমবার রাতে বাদল চেয়ারম্যান এক সাংবাদিককে বলেন, "সতর্ক করে দিলাম আইজগো। আর কোন আকামে হাত দিলে তোমার ভোগ আছে।" যার রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক এইচ এম রাসেল বলেন, বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে আমি বাদল চেয়ারম্যানের কাছে সাক্ষাৎকার আনতে যাই। এ সময় তিনি আমাকে মারধর করতে উদ্যত হন। এরপর হুমকি দেয়াসহ অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। তার কোন অনিয়ম দুর্নীতির নিউজ করলে তিনি আমাকে দেখে নেবেন বলেও হুমকি দেন।"

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বরগুনার স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল মিরাজ বলেন, ভবন না থাকায় আমতলী উপজেলা পরিষদে দাপ্তরিক কাজকর্মে বিঘ্ন এবং সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে গত সোমবার সংবাদ সংগ্রহে যাই। এ সময় এলজিডি অফিসের একটি কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই অহেতুক বাদল চেয়ারম্যান আমাকে গালমন্দ করাসহ হুমকি-ধমকি দেন। আমি তার সঙ্গে যতটা বিনয়ীভাবে কথা বলেছি, তিনি ঠিক ততটাই আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে আমি ঐ কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি।

স্থানীয় সংবাদকর্মী রুবেল হোসেন বলেন বাদল খানের অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছি আমি। আমার সঙ্গে মারধর করা হয়েছে আমার এক সহকর্মীকেও। এসময় ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তখনই তার বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তাহলে তিনি সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এতোটা বেপরোয়া আচরণ করতে পারতেন না।

আমতলীর স্থানীয় সাংবাদকর্মী নাসরিন শিপু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বিষয়ে তথ্য জানতে আমি বাদল চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে এতোটা নোংরা ভাষায় কথা বলেছেন, তা কল্পনাও করতে পারি না। একজন নারী হয়েও আমি তার লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা পাইনি। বাদল চেয়ারম্যানের খুঁটির জোর কোথায়, তা এখনই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি শাহ আলী বলেন, গত বছরের ৩০ আগস্ট আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহে গেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান বাদল। এতেও দল কিংবা স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই আমরা এখন বাদল চেয়ারম্যানের কারনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।

আমতলী প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সৈয়দ নুহুউল আলম নবীন বলেন, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হওয়ার কারণে তিনি সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিনিয়ত তিনি সাংবাদিকদের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করেই যাচ্ছেন। আমরা এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়েছি।

এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি সঞ্জীব দাস বলেন, কোনভাবেই বাদল চেয়ারম্যানকে থামানো যাচ্ছে না। অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্টরাও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। তাই আমরা প্রেসক্লাবে জরুরি সভা সম্পন্ন করেছি। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বাদল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ আমি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান বাদলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু বলেন, আখতারুজ্জামান খান বাদল দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভায় আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরএস

Link copied!