Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, বারান্দায় পাঠদান

বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি

বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৪:৫৫ পিএম


ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, বারান্দায় পাঠদান

ক্লাসে বসতে ভয় হয়, কখন ছাদের পলেস্তরা খসে মাথায় পরে এই আতংক নিয়ে ক্লাস করছি। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে বইখাতা ভিজে যায়। ভবনটি সংস্কার না হলে  শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দিবে। এ আতঙ্ক নিয়ে পাঠদানে মনোযোগী হওয়া সম্ভব নয়। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজুল করিম এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। শুধু শিক্ষার্থী ফাইজুল করিম নয়।

বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা দাখিল মাদ্রাসার ২৬৬ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। যেকোন সময় ভবনটি ধসে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ায় বর্তমানে পাঠদান করানো হচ্ছে বারান্দায়। ফলে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। মাদ্রাসার  ভবনটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার জানালেও কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেনা বলে জানান মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ১৯৫০ সালে লক্ষ্মীপুরা ফোরকানীয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। পরে ১৯৭৩ সানে এটি দাখিল পর্যন্ত পাঠদানের অনুমোদন পায়। শুরুতে টিনসেট কাঠের ঘরে পাঠদান করানো হলেও ১৯৯৪ সালে এখানে একটি চার কক্ষের একতলা ভবন নির্মাণ করে মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের ফ্যাসেলেটিস বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন সময়ে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি নির্মাণ করায় অল্প দিনেই সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ২৬৬ জন শিক্ষার্থী দ্বীন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। এখানে মোট ১৪জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্যাওলায় আচ্ছন্ন স্যাতস্যাতে একটি ভবনের বারান্দায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন  শিক্ষকরা। ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, সমস্ত ভবনের ওয়ালের ইট থেকে পলেস্তার খসে গিয়ে শ্যাওলার সবুজ রঙে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বরান্দায় পিলারগুলোর ইট সুড়কি থেকে কলামের রড বেড় হয়ে গেছে। ভবনটির ভিতরে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি কক্ষের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে মেঝভর্তী হয়ে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চে বালি আর ইটের খোয়া পড়ে রয়েছে। লাইব্রেরি কক্ষটির ছাদে কোন পলেস্তার নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পাঠদান করছেন কোমলমতি ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা।

মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা আক্তার জানান, প্রতিদিন তারা ক্লাসে এসে বেঞ্চ থেকে বালি ও খোয়া পরিস্কার করেন। কিছুদিন পূর্বে এক সহপাঠির মাথায় ছাদের পলেস্তার খসে পরে মাথা ফেটে গিয়েছিলো। তাই ভয়ে ভয়ে ক্লাস করেন তারা। 

লক্ষ্মীপুরা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভবনটির ছাদ থেকে প্রতিনিয়ত পলেস্তার খসে পড়ার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বর্তমানে বারান্দায় পাঠদান করাচ্ছি। এখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ না করা হলে রানা প্লাজার মতো বড় কোন দুর্ঘটনার খবর আপনারা শুনতে পারবেন।

বামনা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক বলেন, ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এআরএস

Link copied!