Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পে পাম্প নষ্ট

ভেড়ামারা জিকে পাম্প হাউজ বন্ধ, হুমকিতে বোর চাষ

নজরুল ইসলাম মুকুর, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুর, কুষ্টিয়া

মার্চ ২, ২০২৪, ০১:১০ পিএম


ভেড়ামারা জিকে পাম্প হাউজ বন্ধ, হুমকিতে বোর চাষ
ছবি: আমার সংবাদ

বোর মৌসুম শুরুর এক মাস পর দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প  জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে জোড়া তালি দিয়ে সেচ পাম্প চালু করলেও ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে আবার ওই পাম্প অকেজো হয়ে যায়।

উক্ত সেচ পাম্প চালু করতে না পারায় চাষীরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। জিকে খালে পানি না থাকায় খাঁ খাঁ করছে খালটি। ফলে ৪ জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি কৃষি আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। 

গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পে তিনটিন পাম্পের মধ্যে দুটি পাম্প দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি পাম্প দিয়ে ধীকধীক করে বোর মৌসুমে চাষীদের সেচ সুবিধা দিয়ে আসলেও এবার ওই পাম্পটিও অকেজো হয়ে পড়েছে। যার ফলে বোর মৌসুমে চাষিদেরকে সেচ সুবিধা দিতে পারছেনা জিকে কর্তৃপক্ষ।

সেচ খালের পানির অভাবে চাষীরা হতাশায় ভুগছে। শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ সুবিধা নিতে চাষীদের অনেক টাকা বাড়তি গুণতে হয়।  ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বোর আবাদে চাষীরা লোকসানে পড়বে বলেও কৃষকেরা জানায়। তাই জিকে খালে দ্রুত পানি সরবরাহের দাবি কৃষকসহ সচেতন মহলের।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়ার চাষি আবজাল হোসেন বলেন, আমরা বোর মৌসুমে জিকের পানি দিয়ে ধান আবাদ করে আসছিলাম। এবার পানির অভাবে ধান আবাদে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শ্যালো দিয়ে পানি তুলতে গেলে খরচ বেশি লাগছে। কারণ ডিজেলের যে দাম তাতে করে পানির অভাবে ধান আবাদ করা সম্ভাব হচ্ছেনা।

আলমডাঙ্গার চাষি বরকত আলী বলেন, আমরা সব সময় জিকের পানি দিয়ে চাষাবাদা করে থাকি। দীর্ঘদিনের পুরাতন পাম্প দিয়ে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করায় ওই পাম্প এবার একেবারই নষ্ট হয়ে গেছে। 

তাই আমরা জিকের সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জিকে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাই এবার বোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা বোর আবাদ নিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।

বটতৈল এলাকার চাষি আকসেদ আলী বলেন, জিকে খালে পানি নেই। খাল শুখিয়ে গেছে। পানির অভাবে আমাদের বোর আবাদ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই মৌসুমে জিকে খালে পানিতে ভরে থাকতো। কৃষিকাজ করতাম আনন্দে। কিন্তু এবার আর পারলাম না।

ভেড়ামারা পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, পাম্প অকেজো হয়ে পড়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে কবে মেরামত করতে পারবো তা সঠিকভাবে বলা সম্ভাব নয়। চেষ্টা করা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাম্পটি মেরামত করার।

জিকে প্রকল্প একসময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটালেও সেই গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের কার্যক্রম সংকুচিত হতে হতে এখন ৮ ভাগেরি এক ভাগে নেমে এসেছে। পাম্প নষ্ট ও খালগুলো দখল-দূষণ হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ছে এ সেচ প্রকল্প।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, চার জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু এই প্রকল্পের। এর স্বর্ণযুগে ১৯৮৩ সালে এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে এর আওতায় ৯৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু খালগুলোর বড় অংশ দখলে থাকা ও প্রকল্পের তিনটি পাম্পের দুটি নষ্ট হয়ে আছে। একটি দিয়ে কোন রকমে চলতি বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল। কিন্তু সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। রাশিদুর রহমান আরো জানান, চার জেলার ১৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম বিস্তৃত।

এআরএস

Link copied!